E Purba Bardhaman

বর্ধমানে নামী রেস্তোঁরার মালিককে ফোন করে টাকা চেয়ে হুমকি ফোন, দোকানে বোমাবাজি

The Miscreants bombed the Restaurant to demand money. In this incident, 6 staff of the restaurant were slightly injured. At Burdwan Town

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পরেই বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা করতে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আর মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল সংস্কৃতি লোকমঞ্চ থেকে প্রায় অর্ধেক কিলোমিটার দূরেই এক রেস্তোঁরা মালিককে ১০ লক্ষ টাকা তোলাবাজি চেয়ে তাঁর দোকানে বোমা ছোঁড়ার ঘটনা ঘটল। আর এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগে ফের বর্ধমান শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধেই বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন খাড়া করে দিল দুষ্কৃতিরা। শুক্রবার রাত্রি প্রায় ১১টা ৫ নাগাদ বর্ধমান শহরের ঐতিহাসিক টাউন হলের সামনে একটি নামী বিরিয়ানী প্রস্তুতকারী রেস্তোঁরার দোকানের মালিককে প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা চেয়ে ফোন করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই দোকানে একটি বোমা ছোঁড়া হয়। দোকানের মালিকের ছেলে রাজা সোনকার জানিয়েছেন, প্রথম রাত্রি ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ দোকানের ফোনে ফোন করে ১০ লক্ষ টাকা না দিলে বোমা মেরে দোকান উড়িয়ে দেবার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই তিনি বর্ধমান থানায় ছুটে যান অভিযোগ করতে। কিন্তু থানার অফিসাররা অন্য একটি ঘটনায় থানা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ায় তিনি অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে পারেননি। এরপরই রাত্রি ১১টা ৫ নাগাদ যখন দোকান বন্ধ করার তোড়জোড় চলছিল সেই সময় একটি বোমা মারা হয় দোকানের ভেতর। এই ঘটনায় দোকানের ৬জন কর্মী জখম হন। তাদের নিয়ে তিনি ছোটেন হাসপাতালে। একইসঙ্গে বর্ধমান থানায় যান অভিযোগ করতে। এই সময় ফের তাঁর কাছে ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে হিন্দিতে তাঁকে বলা হয় – বোমার আওয়াজ শুনেছেন। কাল সকাল ১০টায় দোকানেই ১০ লক্ষ টাকা মজুদ রাখবেন। এসে নিয়ে যাবো। এরপরই ফোন কেটে দেওয়া হয়। রাজা সোনকার জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি থানাতেই ডিউটি অফিসারের সামনে বসেছিলেন অভিযোগ জানানোর জন্য। রাজা সোনকার জানিয়েছেন, যাঁরা ফোন করেছিল তাঁরা হিন্দিতে কথা বলছিল। কেন সেই টাকা দেওয়া হবে তা জিজ্ঞাসা করার পরই ফোন কেটে দেয়। পরে সেই নাম্বারে ফোন করলে সুইচ বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে, ফের বর্ধমান শহরে তোলাবাজির টাকা চেয়ে হুমকি এবং বোমাবাজির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতংক ছড়িয়েছে ব্যবসায়ী মহলে। যদিও শনিবার কেউই ওই টাকার সন্ধানে ওই দোকানে আসেনি। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটালো তা নিয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, গোটা ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কয়েকজনকে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৯ আগষ্ট একইভাবে বর্ধমানের খাগড়াগড় এলাকায় একটি ইলেকট্রিকের দোকানের সামনে বোমা রেখে ৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। এমনকি দোকানের সামনে আস্ত একটি তাজা বোমা রেখে দুষ্কৃতিরা হুঁশিয়ারী দেয় এটা ট্রেলার। আসল ছবি বাকি আছে। টাকা না পেলে সেই ছবি দেখানো হবে। সেই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বারবার এই ঘটনায় পুলিশী নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় শনিবার ব্যবসায়ী সমিতি জোড়ালো পদক্ষেপ নেবার জন্য আলোচনা করেছেন। এদিন এই ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের চেম্বার অফ ট্রেডার্সের সম্পাদক চন্দ্র বিজয় যাদব জানিয়েছেন, তাঁরা এই ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবী-সহ পরপর এই ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন। চন্দ্র বিজয় জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুলিশ সুপার। চন্দ্রবিজয় জানিয়েছেন, সোমবার বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে এই ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ যদি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। প্রয়োজনে তাঁরা বর্ধমান অচল করে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী এই জেলা ছেড়ে যাওয়ার সময়সীমার মধ্যে অপরাধীকে পুলিশ ধরতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রী জেলা ছাড়ার পর ব্যবসা ধর্মঘট করা হবে বলে চন্দ্রবিজয় বাবু জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়িক সুরক্ষা সমিতির সদস্য শীর্ষেন্দু সাধু জানিয়েছেন, তাঁরা গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারলে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত আলোচনা করে ঠিক করবেন।

Exit mobile version