E Purba Bardhaman

বাংলা আবাস যোজনায় নাম দোতলা বাড়ির মালিক বিধায়কের শাশুড়ি এবং পঞ্চায়েত প্রধানের

MLA's mother-in-law and panchayat pradhan's names are on the list of people getting houses under the Bangla Awas Yojana

খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির একাধিক বাড়িতে হুকিং করে বিদ্যুৎ নেবার খবর ফাঁস হতেই রাতারাতি সব তার খুলে নেওয়া হল। রবিবার সকালেই বিদ্যুৎ দপ্তরের লোকজন গিয়ে হুকিং-এর কোনো প্রমাণ না পেয়েই ফিরে এলেন খালি হাতে। এদিকে, বিদ্যুৎ নিয়ে এই অভিযোগ বাতাসে মিলিয়ে যেতে না যেতেই এবার পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস তালিকায় খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতের প্রধান ও বিধায়কের শাশুড়ির নাম থাকা নিয়ে নতুন করে হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। জানা গেছে, একতলা পাকাবাড়ি, পূর্বেও মিলেছে বাড়ি তৈরির টাকা তাও আবাস তালিকায় খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত প্রধানের নাম থাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। একইভাবে মাঝখান দিয়ে ঢালাই রাস্তা। রাস্তার এক পাড়ে কাঁচাবাড়ি অন্য পাড়ে দোতলা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও খণ্ডঘোষের বিধায়কের শাশুড়ির নাম আবাস তালিকায় থাকা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। উল্লেখ্য, সরকারি অনুদানে একবার বাড়ি হয়ে গেলে, সেই পরিবার বাড়ি তৈরির জন্যে আর দ্বিতীয়বার সরকারি অনুদান পাবেন না – কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এটাই নিয়ম। অথচ পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মালতী সাঁতরার পরিবার রাজ্য সরকারের গীতাঞ্জলি প্রকল্পের অনুদান থেকে বাড়ি তৈরি করলেও এবারও বাংলার বাড়ি প্রকল্পে তাঁর নাম রয়েছে। বারবার সমীক্ষা করার পরেও সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত এবং একতলা পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে উপভোক্তা তালিকায় প্রধানের পরিবারের নাম উঠল, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়। অন্যদিকে, আবার খন্ডঘোষের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের বাড়ি পাঠানপাড়ায়। সেখান থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে তাঁতিপাড়াতে বিধায়কের শ্বশুরবাড়ি। তাঁতিপাড়াতেই ঢালাই রাস্তার একদিকে দোতলা বাড়ি, ঠিক তার উল্টোদিকেই রয়েছে খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি। অভিযোগ, সেই মাটির বাড়ি দেখিয়ে বাংলা আবাস যোজনায় নাম উঠেছে বিধায়কের শাশুড়ির নাম। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ. জানিয়েছেন, কে কী রয়েছে, সেটা উল্লেখ্য নয়। কারা পাওয়ার যোগ্য সেটাই দেখা হচ্ছে। যেখানে পাকা বাড়ি পাওয়া গিয়েছে, সে সব নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এখনও সমীক্ষা চলছে, যাদের পাকা বাড়ি আছে তাঁদের নামগুলো বাদ যাবে।
কয়েক বছর আগে গীতাঞ্জলি প্রকল্প থেকে ঘর পেয়েছিলেন খন্ডঘোষের প্রধান মালতী সাঁতরার স্বামী হারু সাঁতরা। তিনিও খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতের ২০১৮-২৩ পর্যন্ত প্রধান ছিলেন। বর্তমানে খণ্ডঘোষ অঞ্চলের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পদে রয়েছে। বাংলার বাড়ির তালিকায় উপভোক্তা হিসেবে খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েতের প্রধান মালতী সাঁতরার নাম রয়েছে। ওই দম্পতির দাবি, তাঁদের এক সময় মাটির বাড়ি ছিল। গীতাঞ্জলি প্রকল্প থেকে একতলা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তারপর আবাস-প্রকল্প থেকে নাম বাদ চলে গিয়েছিল, সে জন্যে ২০২২ সালের তালিকায় তাঁদের নাম উপভোক্তা তালিকায় ছিল না। অথচ এ বার বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তার তালিকায় কী ভাবে নাম চলে এল, তাঁরা বুঝতে পারছেন না। মালতী সাঁতরা ও হারু সাঁতরার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন কাঠা জায়গার উপর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে বাড়ির চত্বর। মূল ফটকের বাঁ দিকে এক তলা গ্রিল দিয়ে ঘেরা বাড়িতেই তাঁরা থাকেন। প্রধান দম্পতি জানিয়েছেন, তালিকায় নাম দেখে তো আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছি। সমীক্ষা করতে এসেছিল। আমার আর কিছু বলার নেই। প্রধানের স্বামীর দাবি, আমার তো পাকা বাড়ি। কী ভাবে এই নাম এলো, বুঝতে পারছি না। এ বারে দেখার পরেই বিডিও-র কাছে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি, গীতাঞ্জলি প্রকল্প থেকে বাড়ি পেয়েছিলাম। আমরা আবেদন করিনি, ২০২২ সালেও আমাদের নাম ছিল না। অথচ ২০২৪ সালের তালিকায় নাম রয়েছে। নাম বাদ দেওয়ার জন্যে বিডিও-কে জানিয়েছি। অন্যদিকে শাশুড়ির নাম থাকা নিয়ে বিধায়ক নবীন চন্দ্র বাগ জানিয়েছেন, যখন ওনারা আবেদন করেছিলেন তখন মাটির বাড়ি ছিল। ২০০৫ ও ২০১১ সালে তালিকার সময় ওদের মাটির বাড়ি ছিল। ২০১৮ সালে নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়। নাম এসেছে, সমীক্ষা হচ্ছে নাম বাদ চলে গেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি পাবে কেন? পঞ্চায়েতের প্রধানেরও বাড়ি হয়ে গেছে তাঁরও নাম বাদ গেছে।

Exit mobile version