বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমানের রিয়েল বুল ফুটবল কোচিং সেন্টারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বর্ধমানের স্পন্দন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘ভদ্রেশ্বর গোল্ড কাপ’। মোহনবাগান এসি, মহামেডান এসসি ও কালীঘাট মিলন সংঘ, জামশেদপুর এফসিকে নিয়ে আয়োজিত হবে ৩ দিনের এই ম্যাচ। রিয়েল বুল ফুটবল কোচিং সেন্টারের সভাপতি সোমনাথ চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, প্রথম বছরের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে ব্যারেটো এসেছেন। তৃতীয় বছরের আকর্ষণ থাকছে বর্ধমানে ১০ একর জায়গার স্পোর্টস হাব তৈরি। তৃতীয় বছর নিজেদের মাঠেই খেলা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গলের এই খেলায় অংশ নেওয়ার কথা হয়েছিল, পরে পরিবর্তন হয়েছে। খেলার দিনেরও পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি দিন নির্ধারিত হয়েছিল। আর এফ ডি এল, কলকাতা ফুটবল লিগ এবং অনূর্ধ্ব ১৫ ন্যাশানাল -এই সবের জন্য ৩ বার দিন পরিবর্তন হয়ে। এখন চূড়ান্ত দিন নির্ধারণ হয়েছে ৩, ৪ ও ৬ জানুয়ারি। ৫ তারিখ বিশ্রাম। তিনি জানিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গল খেলতে আসছে না এটা চোট জনিত কারণ এবং ওদের ৭ জন খেলোয়াড় বাংলা দলে খেলছেন। বাংলা সেমিফাইনালে উঠেছে, ফাইনালে উঠবে বাংলা তাই খেলোয়াড়রা বাইরে থাকবে। এইসব কারণে ইস্টবেঙ্গল বর্ধমানের জন্য অনূর্ধ্ব ১৭ দল দিচ্ছিল। কিন্তু তাঁরা অনূর্ধ্ব ১৭ দল বর্ধমানে খেলাবেন না।
রিয়েল বুল ফুটবল কোচিং সেন্টারের সভাপতি সোমনাথ চ্যাটার্জি এবং সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অনেকেই রটিয়েছেন সবকটি দলই বর্ধমানে জুনিয়র দল খেলাবে। কিন্তু এটা ভুল তথ্য। আই এস এল-এর রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়রা বর্ধমানে খেলবেন। মোহনবাগান, মহামেডানের আই এস এল-এর রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়রা আসবেন। জামশেদপুরেরও আই এস এল-এর ৬ জন খেলোয়াড় আসবেন। কালীঘাট আই এস এল খেলেনা, এদের লীগের টিম আসবে। খেলা হবে ৯০ মিনিটের। এই ম্যাচে বিজয়ী ও বিজিত দলকে দেওয়া হবে ২ লক্ষ টাকা এবং ১.৫ লক্ষ টাকা। এবং ট্রফি। ট্রফির দাম ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। মাঠে খেলা পরিচালনা করবেন ‘কলকাতা রেফারি অ্যাসোসিয়েশন’-এর রেফারিরা। তিনি জানিয়েছেন, এটা আই এফ এ অনুমোদিত কাপ। এবার নতুন তাই আই এফ এ ক্যালেন্ডারে ঢোকেনি। আই এফ এ প্রেসিডেন্ট অজিত ব্যানার্জি, সম্পাদক অনির্বাণ দত্ত আসবেন। তাঁরা আশা করছেন জানুয়ারি মাসের মাঝের দিকেই এই টুর্নামেন্টটি আই এফ এ ক্যালেন্ডারে ঢুকে যাবে। ৩ জানুয়ারি খেলা হবে মহামেডান বনাম জামশেদপুর এফ সি। ৪ জানুয়ারি খেলা হবে মোহনবাগান বনাম কালীঘাট মিলন সংঘ। ৫ তারিখে বিশ্রাম। ৬ তারিখ ফাইনাল খেলা হবে। প্রতিদিন খেলার সময় দুপুর ২ টো। উদ্বোধন করবেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সদস্য সাংসদ কীর্তি আজাদ। উপস্থিত থাকবেন জেলাশাসক আয়েশা রানি এ., জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস, বর্ধমান রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী অজ্ঞেয়ানন্দ মহারাজ, বিধায়ক খোকন দাস, বি ডি এ-র চেয়ারম্যান কাকলি তা গুপ্ত, বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার প্রমুখরা। অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মহামেডানের ফুটবল সেক্রেটারি দীপেন্দু বিশ্বাস। আরও কয়েকজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকেও অতিথি হিসেবে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৬ জানুয়ারি ফাইনাল খেলার দিন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া। তাঁকে নিয়ে খেলার মাঠে ঢোকার আগে একটা র্যালি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমতি মিললে এই র্যালি হবে। এই খেলা দেখার জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। স্পন্দন স্টেডিয়ামের মাঠে প্রকৃত বসার ব্যবস্থা ২৫০০ জনের। কিন্তু কিছু অব্যবস্থার জন্য সেটা ১৩০০-১৪০০ জনে ঠেকেছে। এই খেলার জন্য একটা টিনের চালা খুলে দিয়ে এবং অস্থায়ীভাবে আলাদা গ্যালারি তৈরি করে মোট ২২০০ জনের বসার পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। স্টেডিয়ামের বাথরুমের দুরাবস্থার জন্য বায়ো টয়লেট ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। টিকিট মূল্য – প্রতিদিন – সাধারণ ২৯৯ টাকা, ৪৯৯ টাকা। ভিআইপি ১৯৯৯ টাকা, ৩৯৯৯ টাকা। এদিকে, ইষ্টবেঙ্গল না আসায় ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাব ‘ইস্টবেঙ্গল ইন বর্ধমান’-এর সদস্য সুমন দাস জানিয়েছেন, আমরা দলকে নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলাম। সমর্থকদের মধ্যে একটা আলাদা উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল দলের বর্ধমানে খেলতে আসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্নরকম কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে এই খবরে আমরা দারুণ হতাশ। ইস্টবেঙ্গল ছাড়া আমরা এই টুর্নামেন্ট দেখতে গেলে আমাদের মধ্যে সেই স্বতঃস্ফূর্ততা থাকবে না।
অন্যদিকে, মোহনবাগান ফ্যান ক্লাব ‘পূর্ব বর্ধমান মেরিনার্স’-এর এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য দীপ্তেশ রায় এবং অয়ন দত্ত জানিয়েছেন, আমাদের প্রিয় দল বর্ধমানে খেলতে আসছে এর থেকে আনন্দের খবর আর কিছু হতে পারে না। এটা একটা গর্বের ব্যাপার। অনেক বছর পর মোহনবাগানের একটা অফিসিয়াল দল বর্ধমানে পূর্ণাঙ্গ টুর্নামেন্ট খেলতে আসছে। আমরা মাঠে থাকবো। দলকে সমর্থন জানানোর জন্য তো থাকবোই। পাশাপাশি সম্বর্ধনা দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু চির প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসাবে নয় এই কাপের মান বাড়াতে ইস্টবেঙ্গল দলকে দরকার ছিল। বর্ধমানে অনেক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক আছেন, তাঁদের কাছেও বিষয়টা ভালো লাগতো। মাঠের পরিবেশে একটা আলাদা মাত্রা পেত। বর্ধমানে একটা ছোটখাটো মিনি ডার্বি হতো।
বর্ধমানের এই টুর্নামেন্ট কমিটির সম্পাদক অরুণাভ সরকার এবং সভাপতি গৌতম সরকার জানিয়েছেন, এবছর প্রথমে তাঁদের ইচ্ছা ছিল ময়দানের ৮ টা দল নিয়ে বর্ধমানে এই টুর্নামেন্ট করার। কিন্তু কিছু সমস্যা থাকায় এবছর তা করা গেলো না। ইস্টবেঙ্গলও কিছু সমস্যার কারণে এবছর আসতে পারছে না। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা কিছুটা হয়ত হতাশ হয়েছেন। কিন্তু সামনের বছর তাঁদের এই হতাশ যাতে না থাকে সেইভাবেই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। আর ‘ডার্বি’ বলতে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচকে সবাই বোঝেন, সেটা এবছর করা গেলো না। কিন্তু আগামী বছর ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান দুটি দলই যাতে খেলতে আসে সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।