E Purba Bardhaman

১৮ বছরের তরুণীর পেট থেকে বের হল হাজারেরও বেশি বেলুনের ন্যায় তরলপূর্ণ সিস্ট

More than a thousand intraperitoneal hydatid cysts removed from 18-year-old girl's stomach

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এক তরুণীর পেট থেকে বের হল হাজারেরও বেশী বেলুনের ন্যায় তরলপূর্ণ সিস্ট। চার ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে তরুণীকে নতুন জীবন দিল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অস্ত্রোপচার রাজ্যের মধ্যেই বিরল বলে দাবি বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকদের। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক ডা. এন সি কর্মকারের নেতৃত্বে জটিল এই অপারেশন সম্ভবপর করে তোলেন হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল। বর্ধমান হাসপাতালের সুপার ডা. তাপস কুমার ঘোষ জানান, সাধারণ ক্ষেত্রে হাইডাটিড সিস্ট কমন একটি রোগ হলেও এক্ষেত্রে ইনট্রাপেরিটোনিয়াল বা পেটগহ্বরের মধ্যে এই ধরনের হাজারেরও উপরে তরলপূর্ণ সিস্ট থাকা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। যার ফলে এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। শুধু তাই নয় যেহেতু তরুণী অবিবাহিত তাই তার মাতৃত্ব রক্ষার স্বার্থে জরায়ুর প্রতিও বিশেষ নজর রাখতে হয়েছিল। এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল যেহেতু হাজারেরও উপরে তরলপূর্ণ সিস্ট শরীরে ভিতরে ছিল তাই যেকোনো একটি সিস্ট ফেটে গেলে সেই সিস্ট থেকে নির্গত তরলের ফলে যেকোনো মুহূর্তে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারতো, এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারতো। তাই এ বিষয়গুলোর উপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং একই সাথে অ্যানেস্থেসিস্ট যারা ছিলেন তাদেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হয়েছিল। সাধারণ ক্ষেত্রে এই ধরনের অস্ত্রোপচার বিরল না হলেও যেহেতু পেটগহ্বরে হাজারের অধিক এই ধরনের সিস্ট ছিল তাই এটি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তেমনি রাজ্যের বুকে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের সংখ্যাও খুব সীমিত বা বিরল। বর্ধমান মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রেও এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পূর্বের কোনো নজির নেই। বর্তমানে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। সুপার ডা. তাপস কুমার ঘোষ জানান, সার্জারি বিভাগ গত বুধবার এই বিরল অপারেশন হয়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ইতিহাসে ‘ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল হাইডাটিড সিস্ট’ অপারেশন প্রথম হলো, এমনকি রাজ্যেও এই ধরনের অপারেশন খুবই কম হয়েছে। হয়ত ১-২ টি হতে পারে। এই রোগী লক্ষ্য করেন রোগা হয়ে যাচ্ছেন, পেট আসতে আসতে ফুলে যাচ্ছে, খিদে কমে যাচ্ছে। এই সমস্যাগুলি বুঝতে পেরে চিকিৎসকের কাছে আসেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় দেখা যায় পেটের ভিতরে জল ভরা বেলুনের মত অনেক জিনিস রয়েছে। পরবর্তীতেত সিটি স্ক্যান-সহ আরও পরীক্ষা করে দেখা যায় ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল হাইডাটিড সিস্ট (Intraperitoneal Hydatid Cyst)। এটা স্যালাড, মাংস-সহ বিভিন্ন খাবার থেকে আসে। মূলত খাবারের স্বাস্থ্যবিধি বজায় (Maintain Hygiene) না রাখলে এই রোগ হতে পারে। সাধারণত ফুসফুস, লিভারে এই রোগ হয়। কিন্তু পেটের ভিতরে এইভাবে সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে পরে গোটা পেটটাকে ভর্তি করে দেওয়া এইটা কিন্তু খুব বিরল। এই সিস্ট পেট থেকে আসতে আসতে বের করে আনা খুবই কঠিন। জল ভরা বেলুনের মত গোটা পেটে ভর্তি হয়ে থাকে। নাড়িভুঁড়ি-সহ পেটের ভিতর সমস্ত কিছুর সাথে জড়িয়ে থাকে। সেগুলোকে সাবধানে বের করে আনতে হয়। বেলুনের মত সিস্টগুলো ফেটে ভিতরে পরলে সেখান থেকে আবার ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। সতর্কতার সাথে দীর্ঘ সময়ের অপারেশন। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বছর ১৮-র এই যুবতী বিগত ছয় মাস ধরে পেট ফুলে যাওয়া-সহ নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত তিন মাসে সেটি আরও মারাত্মক আকার নেয় এবং একপ্রকার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গত ২ মে এই উপসর্গ নিয়ে তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য এবং সেখানে কিছু জরুরি পরীক্ষার পর দেখা যায় তরুণীর সমগ্র পেটগহ্বর জুড়ে ছোট ছোট বেলুনের মতো তরলপূর্ণ হাজারেরও অধিক সিস্ট রয়েছে। এরপরেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজের তরফে শল্য চিকিৎসক এন সি কর্মকারের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয় এবং কীভাবে সফল অস্ত্রোপচার সম্ভব তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে ১৪ মে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এরপরই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যুবতীর পেটগহ্বরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারেরও অধিক তরলপূর্ণ সিস্ট বের করা হয়। বর্ধমান হাসপাতালের আর এক শল্য চিকিৎসক ডা. এন এস জমাদার জানান, মূলত সংক্রমিত তৃণভোজী প্রাণী থেকে টেপওয়ার্ম জাতীয় পরজীবীর লার্ভা মানুষের শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে এই ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। যার ফলে শরীরের লিভার, ফুসফুস-সহ অন্যান্য অঙ্গে এই ধরনের সিস্ট তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে লিভার, ফুসফুস বা অন্যান্য অঙ্গ ছাড়াও রোগীর সমস্ত পেটগহ্বর জুড়ে এই ধরনের সিস্ট তৈরি হয়েছিল, যা সংখ্যায় প্রায় হাজারেরও অধিক। তাই এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

Exit mobile version