বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- চাকরি করেন। অথচ হোষ্টেলের ঘর দখলে করে আছেন। পাশ করে গেছেন অথচ হোষ্টেলের ঘর দখল করে আছেন। ছাত্র থেকে ছাত্রী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রেওয়াজে এবার নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের – যাঁরা হোষ্টেলের ঘর পাবার জন্য আবেদন করেও বিফল হয়েছেন। ফলে দিনের পর দিন খোদ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে ও মেয়েদের বিভিন্ন হোষ্টেলের ঘর দখল করে রেখে দেওয়ায় চরম ভোগান্তি ও সমস্যার মধ্যে পড়ছেন অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। খোদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রাক্তন নেতা ও তাঁর কিছু সহকর্মী গোটা বিষয়টিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন বলে অভিযোগ। সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টারের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন। আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রবিউল হালদার জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই ট্রেণ্ড চলছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে ও মেয়েদের বিভিন্ন হোষ্টেলে। নিয়মানুযায়ী যাঁরা হোষ্টেলে থাকার সুযোগ পান তাঁরা পাশ করে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ঘর তাঁদের ছেড়ে দিতে হয়। যাতে পরবর্তী কোনো ছাত্রছাত্রী সেই ঘর পেতে পারেন। কিন্তু দেখা গেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে ও ছেলেদের একাধিক হোষ্টেলের একাধিক পাশ আউট ছাত্রছাত্রী হোষ্টেলের ঘর দখল করে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা হোষ্টেলের ঘর পাচ্ছেন না। তাঁদের হাজিরায় সমস্যা হচ্ছে। হোষ্টেলের ঘর না পাওয়ায় তাঁদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে অন্যত্র থাকতে হচ্ছে। রবিউল হালদার জানিয়েছেন, এর আগেও তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই সমস্যার বিষয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। দেখা গেছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা রামিজ আমিরুল নিজেই অরবিন্দ হোষ্টেল এবং আইনষ্টাইন হোষ্টেলের দুটি ঘর দখল করে রেখেছেন তাঁর নামেই। অথচ তিনি ডিসট্যান্স বিভাগে চাকরী করেন। শুধু রামিজবাবুই নন, এরই পাশাপাশি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী প্রাক্তন ছাত্রী সায়নী মুখার্জ্জী গার্গী হোষ্টেলে, অমিতা চক্রবর্তী গার্গী হোষ্টেলে, জ্যোত্স্না খাতুন গার্গী হোষ্টেলের ঘর দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ। অথচ এঁরা প্রত্যেকেই পাশ করে যাওয়া ছাত্রী। অন্যদিকে, সুকান্ত হেমব্রম রবীন্দ্র হোষ্টেল, গোলাম মুস্তাফা রবীন্দ্র হোষ্টেলের ঘর দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ। রবিউলবাবু জানিয়েছেন, এরকম আরও বহু জন রয়েছেন তাঁরা এইভাবে অবৈধ ও অন্যায়ভাবে ঘর দখল করে রেখেছেন। এদিকে, এব্যাপারে তৃণমূল নেতা রামিজবাবু জানিয়েছেন, তিনি একজন রিসার্চ স্কলার। আইনষ্টাইন হোষ্টেলে তাঁর ঘর রয়েছে এটা ঠিক। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছে্ন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছাত্র ও ছাত্রীদের যে হোষ্টেলগুলি রয়েছে তাতে সাকুল্যে প্রায় ১৯৬টি আসন থাকলেও গড়ে প্রতিবছর ১৪৫ -র কাছাকাছি ছাত্রছাত্রী তাতে থাকেন। ফলে বহু আসনই ফাঁকা পড়ে থাকে। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন সিনিয়র যাঁরা পাশ আউট হয়ে গেছেন তাঁদের আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য কারও কারও সঙ্গে ঘর শেয়ার করে থাকেন। এটাকে মানবিক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। এদিকে, দিনের পর দিন হোষ্টেলের এই ঘর দখল করে রাখার ঘটনায় এবং কতিপয় ব্যক্তির রীতিমত দাদাগিরিকে ঘিরে ক্রমশই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে।