বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বর্ধমানে প্রশাসনিক সভার দিনই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষের ঘর থেকে চুরি গেল দুটি ফ্যান। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদে একের পর এক নিরাপত্তাহীনতার ঘটনায় কার্যতই আতংক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এই ঘটনা জানার পরই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক সভা ছিল। একইসঙ্গে ওইদিন তিনি বর্ধমানের কানাইনাটশাল সেচ বাংলোতে রাত্রিযাপনও করেন। স্বাভাবিকভাবেই জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরাও রীতিমত ব্যস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য। জানা গেছে, এদিন সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ অশোক বিশ্বাস তাঁর চেম্বারে বসেছিলেন। সেই সময় প্রথম তাঁর কাছে দুটি ছেলে আসে স্কুলের স্কলারশিপের জন্য আয়ের একটি সার্টিফিকেট নিতে। সেই সময় অপর একটি যুবক জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এবং খাদ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষের চেম্বারে ঢুকে দুটি দেওয়াল ফ্যান খুলে দুটি ঘরের টেবিলে রেখে দেয়। এরপর যেদুটি ছেলে অশোক বিশ্বাসের ঘরে সার্টিফিকেট নিতে ঢোকে তারা ঘর থেকে বেড়িয়ে দুটি ঘর থেকে বেমালুম দুটি ফ্যান বগলদাবা করে নিয়ে করে বেড়িয়ে যায়। এই সময় কর্তব্যরত এক চতুর্থশ্রেণীর কর্মী তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় ফ্যান দুটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তারা মেরামত করতে নিয়ে যাচ্ছে। এরপরই ৩জনই জেলা পরিষদের অন্য একটি গেট দিয়ে বেড়িয়ে চলে যায়। বিস্ময়ের ঘোর কাটে পরের দিন মুখ্যমন্ত্রী চলে যাবার পর। তখনই জানাজানি হয় দুটি কর্মাধ্যক্ষের ঘর থেকেই চুরি গেছে দুটি ফ্যান। এদিকে, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরপর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থাকায় সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জেলা পরিষদে হাজির হতে পারেননি। শুক্রবার তিনি জেলা পরিষদে আসেন। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল তাঁকে ফোনে ফ্যান চুরির বিষয়টি জানান। শুক্রবার দপ্তরে এসেই একে একে জেলা পরিষদের আধিকারিকদের কাছ থেকে এব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করেন সভাধিপতি। কেন তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়নি এবং এখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তিনি জানতে চান। এরপরই বিকালে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন সভাধিপতি। তারপরই একটি এফআইআর করা হয়। একইসঙ্গে ওইদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি জেলা পরিষদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করতে অতিরিক্ত আরও দুজন সিভিক ভলেণ্টিয়ারকে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, এরই পাশাপাশি জেলা পরিষদে একটি রেজিষ্টার তৈরী করা হয়েছে। জেলা পরিষদে যাঁরাই আসবেন তাঁদের রেজিষ্টারে স্বাক্ষর করেই জেলা পরিষদে ঢুকতে হবে। অন্যথায় তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বর্ধমান জেলা পরিষদে নিজের একটি দরকারে আসা জাতীয় কবাডি খেলোয়াড়কে ঠিকাদারদের হাতে নিদারুণভাবে নিগৃহীত হতে হয়। সম্প্রতি জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতিকে ফোনে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। লাগাতার এই ঘটনার পাশাপাশি প্রকাশ্য দিবালোকে অফিস টাইমে সকলের সামনে দিয়ে কর্মাধ্যক্ষদের ঘর থেকে ফ্যান চুরি করে নিয়ে যাবার ঘটনায় এবার জেলা পরিষদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।