Site icon E Purba Bardhaman

হাসপাতালে টাকা ধার দেওয়ার নামে সোনার গয়না জমা রেখে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার ১

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- হাসপাতালে অভিনব কায়দায় টাকা ধার দেওয়ার নামে সোনার গয়না জমা রেখে প্রতারণার একটি চক্রের হদিশ পেয়েছে পুলিস। চক্রের এক চাঁইকে গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান থানার পুলিস। বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর এলাকায় তার বাড়ি। এক মহিলার সাহসিকতায় ধরা পড়ে সে। ওই মহিলা শুধু দৌড়ে ছিনতাইবাজকে ধরে ফেললেন তাইই নয়, রীতিমত কষিয়ে চড়ও মারলেন ছিনতাইবাজকে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে এসে এই সাহসিকতার উদাহরণ তুলে ধরলেন ঝর্ণা মণ্ডল। এই ঘটনায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বীরভূমের ময়ুরেশ্বর থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা ও স্বামীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন ঝর্ণা মণ্ডল। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি তাঁর মা বৃদ্ধা অনিমা মণ্ডলকে ডাক্তার দেখিয়ে একটি গাছের তলায় বসিয়ে দিয়ে তাঁর স্বামীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান। ফিরে এসে অনিমাদেবীকে গাছতলায় দেখতে না পেয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। তখনই তিনি দূরে এক ব্যক্তির সঙ্গে মাকে যেতে দেখেন। তিনি দ্রুততার সঙ্গে মায়ের কাছে যান। সেই সময় ওই ব্যক্তি অনিমাদেবীকে হাসপাতালের একটি নির্জন গলিতে নিয়ে গিয়ে তাঁর হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে অনিমাদেবীর কানের দুল খুলে নিচ্ছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরেই ঝর্ণাদেবী ওই ব্যক্তিকে সপাটে এক চড় মেরে চিত্কার করতে থাকেন। এই সময় তাঁর হাত ছাড়িয়ে ছুটে পালাতে থাকেন ওই ছিনতাইবাজ। তিনিও পিছনে ছুটতে থাকেন। হাসপাতালের বাইরে একটি হোটেলের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নেন ছিনতাইবাজ। তিনিও পিছনে ছুটে গিয়ে হোটেলের মধ্যে ঢোকেন। এরপর সিভিক ভলেণ্টিয়াররা ওই ছিনতাইবাজকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসেন হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে। ঝর্ণাদেবীর অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ওই ছিনতাইবাজকে। ঝর্ণাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের হাতে ছিনতাইবাজ যে ব্যাগটি দেয় তাতে একটি টাকার বাণ্ডিল ছিল – যা গোটাটাই নকল। বাণ্ডিলের ওপরে ও নীচে একটি করে ১০০ টাকার নোট থাকলেও ভেতরে সাধারণ কাগজ ভরা ছিল।
পুলিস ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝর্ণা মণ্ডল তাঁর বৃদ্ধা মা অনিমা মণ্ডলকে ডাক্তার দেখিয়ে একটি গাছের তলায় বসিয়ে রাখেন তিনি। এরপর স্বামীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান ঝর্ণা। স্বামীকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে এসে গাছতলায় মাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তিনি। কিছুটা দূরে হাসপাতালের কাছে একটি গলিতে এক ব্যক্তির সঙ্গে মাকে কথা বলতে দেখেন তিনি। তার মায়ের হাতে একটি ১০০ টাকার বান্ডিল দিয়ে তার কানের দুল নিয়ে নিচ্ছিল সেই ব্যক্তি। সন্দেহ হওয়ায় তিনি সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার বলে ১০০ টাকার বান্ডিল দিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে সোনার কানের দুল নিয়ে নিচ্ছিল অভিযুক্ত। বান্ডিল খুলে দেখা যায়, তাতে ওপরে ও নীচের দিকে ১০০ টাকার নোট রয়েছে। বাকি সব টাকার মাপে কাটা সাদা কাগজ। ঝর্ণাকে দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে প্রতারক। পিছু ধাওয়া করেন ঝর্ণা। হাসপাতালের বাইরে একটি হোটেলে ঢুকে পড়ে প্রতারক। সেখানে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন ঝর্ণা। খবর পেয়ে বর্ধমান হাসপাতালের ক্যাম্পের পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়াররা প্রতারককে ধরে রাখেন। পরে তাকে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে হাসপাতালে আসা বর্ধমান শহরের সদরঘাট এলাকার এক মহিলাকেও এইভাবে প্রতারণা করে তার কানের দুল নিয়ে চম্পট দেয় প্রতারকরা। এদিন হাতেনাতে এই প্রতারক ধরা পড়ায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন রোগীরা। খোদ ঝর্ণাদেবী জানিয়েছেন, অনেক আশা নিয়ে তাঁরা বীরভূম থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিত্সা করাতে। কিন্তু হাসপাতালের মধ্যে যেভাবে ছিনতাইবাজের রমরমা এদিন তাঁরা দেখলেন তাতে প্রাণ হাতে করে আর তাঁরা হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে আসার সাহস পাবেন না। দালাল আর ছিনতাইবাজদের দৌরাত্মে রোগীরা হাসপাতালে আসতেই ভয় পাবেন।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক দালাল তথা বর্ধমানের একটি বেসরকারী নার্সিংহোমের মালিক আনিসুর মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্ধমান হাসপাতালে আসা আসামের এক রোগীকে হাসপাতালে চিকিত্সা ভাল হয় না- এই ভয় দেখিয়ে তাঁকে জোর করে নার্সিংহোমে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছিল। তা হাতেনাতে ধরে ফেলেন হাসপাতালের কর্মীরা। যদিও এই ঘটনার পর উঠে এসেছে অন্য তথ্য। জানা গেছে, বর্ধমান শহরের বিশেষত জিটিরোডের ধারে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে প্রচুর নার্সিংহোম। এই সমস্ত নার্সিংহোম গুলি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও আসাম সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি রাজ্যেও তাদের দালাল নিয়োগ করেছে। সেখান থেকে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে মোটা টাকার বিলের লোভে বর্ধমানের এই সমস্ত নার্সিংহোমে নিয়ে এসে চিকিত্সা করানো হচ্ছে। মূলতই, সরকারী হাসপাতালগুলির নিরাপত্তার ফোকর গলেই রীতিমত এই সমস্ত নার্সিংহোমের দালালরাজ কায়েম হয়েছে।

Exit mobile version