Site icon E Purba Bardhaman

বিদেশে ভালো চাকরির আশায় সাইবার জালিয়াতির খপ্পরে পড়ে কয়েক লক্ষ টাকা খোয়ালেন এক চিকিৎসক

Photo - pixabay.com

Photo – pixabay.com

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সাইবার জালিয়াতির শিকার হলেন বর্ধমান শহরের এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভালো চাকরি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নানা অছিলায় তার কাছ থেকে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার জালিয়াতরা। ধার-দেনা করে তিনি টাকা জোগার করে তা জালিয়াতদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। পরে তিনি জানতে পারেন, পুরো বিষয়টি জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পেয়ে মামলা রুজু করেছে থানা। মিজোরামের আইজলের এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে। তা থেকে পুলিশের অনুমান, জালিয়াতির পিছনে ভিন রাজ্যের কোনও চক্র জড়িত। বর্ধমান থানার এক অফিসার বলেন, কেস রুজু হয়েছে। তবে, এ ধরণের সাইবার অপরাধের তদন্তের মতো পরিকাঠামো থানার নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ঢোকরা শহিদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বিশ্বজিৎ সিংহ ইন্টারনেটের জব সাইটে ভালো কাজ পাওয়ার জন্য নিজের বায়োডাটা পোস্ট করেন। হঠাৎ একটি সংস্থার তরফে ই-মেলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সংস্থার তরফে তাকে পুরো বায়োডাটা দিতে বলা হয়। সেইমতো তিনি বায়োডাটা পাঠান। সংস্থার তরফে তাকে বেতন ও অন্যান্য ভাতার বিষয় উল্লেখ করে চাকরির অফার লেটার পাঠানো হয়। এছাড়াও একটি চুক্তিপত্রও তাকে দেওয়া হয়। অফার লেটার ও চুক্তিপত্রে সই করে তাকে পাঠাতে বলা হয়। তিনি তা পাঠিয়ে দেন। এরপর তাঁকে এইচ-১বি ভিসা পাওয়ার জন্য মুম্বইয়ে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। যোগাযোগের জন্য এক ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়। তার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। তাকে নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে বলা হয়। এরপর তাকে ভিসার আবেদনের ফর্ম পাঠানো হয়। ভিসার প্রসেসিং চার্জ বাবদ তাকে ৩৪ হাজার ৪০১ টাকা জমা দিতে বলা হয়। সেইমতো তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মিজোরামের আইজলের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেন। পরে তাকে আরও ২৮ হাজার ৮৮০ টাকা অন্যান্য পরীক্ষার জন্য দিতে বলা হয়। তিনি তাও দিয়ে দেন। এরপর তাকে নিয়োগের নথিপত্র অনুমোদনের জন্য ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৩৯৬ টাকা দিতে বলা হয়। কয়েক দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি তাও পাঠিয়ে দেন। এরপর তাকে বেসিক ট্রাভেল অ্যালাউন্স বাবদ ৯৬ হাজার ৭২৬ টাকা দিতে বলা হয়। সেই টাকাও তিনি দেন। এরপরে ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদনের জন্য তাকে আরও ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪২৩ টাকা দিতে বলা হয়। কয়েক দফায় প্রতারকদের দেওয়া অ্যাকাউন্টে সেই টাকাও জমা করেন। এরপর তাঁকে অ্যান্টি ড্রাগ ট্রাফিকিং ক্লিয়ারেন্স ও রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট অনুমোদনের জন্য আরও ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৯৮ টাকা দিতে বলা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সেই টাকাও তিনি দিয়ে দেন। এসবের মধ্যেই তাকে একটি বিমানের টিকিট পাঠানো হয়। সেই টিকিটে তার নামের পদবী ভুল ছিল। পরে তাকে আরও ২ লক্ষ টাকা আয়কর বাবদ আগাম দিতে বলা হয়। এতে তার সন্দেহ হয়। কারণ, আমেরিকায় এক বছর কাজ করার পর কাউকে আয়করের টাকা দিতে হয়। আমেরিকায় যাওয়ার আগেই আয়করের টাকা জমা দিতে বলায় তিনি যে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন তা বুঝতে পারেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন, পুরো বিষয়টি জাল। মুম্বইয়ে মার্কিন দূতাবাসের যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল সেটিও ঠিক নয়। এরপরই তিনি ঠকেছেন বুঝতে পেরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। কষ্টকরে জোগার করা টাকা যাতে ফেরত পান পুলিশের কাছে সেই আরজি জানিয়েছেন প্রতারিত চিকিৎসক।

Exit mobile version