E Purba Bardhaman

পূর্ব বর্ধমান জেলায় লোকসভা ভোটের প্রথম বলি হলেন খণ্ডঘোষের তৃণমূল নেতা

One killed and four were wounded due to group conflict in Trinamool Congress. At Alipur village, Khandaghosh (Bishnupur Lok Sabha, Purba Bardhaman district)

খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- আগামী ১২ মে ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কলহে খুন হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা কামরুল সেখ (৫৪ওরফে পচা। বাড়ি খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের আলিপুর গ্রামে। রবিবার রাতে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে তাঁর ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার সকালে মারা যান তিনি। এই ঘটনায় আরও ৪জন তৃণমূল কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। আর কামরুল সেখের মৃত্যুর পরই শুরু হয়েছে একদিকে যেমন রাজনৈতিক তরজা অন্যদিকে ব্যাপক ক্ষোভের আগুন। কামরুল সেখকে সিপিএমের কর্মী বলে চিহ্নিত করেছেন খণ্ডঘোষের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম। একইসঙ্গে খোদ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকও জানিয়েছেনমৃত কামরুল সেখ তাঁদের দলীয় কর্মী। কামরুল সেখের দাদা সেখ নাসের আলি খণ্ডঘোষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে লেখা আছে “আমি সেখ নাসের আলি এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত সিপিআইএম পার্টি নেতৃত্ব। আগামী ৭ মে তারিখে এলাকায় নির্বাচনি প্রচারের জন্য একটি মিছিল সংঘটিত হবে। এটি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কানে যাওয়ার পর থেকেই আমাদের পার্টি সমর্থক পরিবারের উপর ক্রমাগত হুমকি, শাসানো চলছিল।” এর পরই তাঁর ভাইয়ের উপর হামলার কথা অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন। যদিও ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় আলাদা করে অভিযোগপত্রে লেখেননি নাসের আলি। এই ঘটনায় ২৭জন তৃণমূল নেতার নামে খণ্ডঘোষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের দাদা। মূলতসিপিএম এবং তৃণমূলের নেতাদের পক্ষ থেকে মৃত কামরুল সেখকে সিপিএম সমর্থক বলে দাবী করা হলেও তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ মৃতের পরিবারের লোকজন। মৃতের ভাইপো সেখ সরাফত এবং মৃতের বউদি লুতফরন্নেসা সেখ সাফ জানিয়েছেনকামরুল সেখ ১৯৯৮ সাল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস করছেন মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে মণির নেতৃত্বে। তাঁরা সাফ জানিয়েছেনতৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে কামরুল সেখকে। তাঁকে মাথায় আঘাত করার পর তাঁর পা রড দিয়ে মেরে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার রাত থেকেই ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে গোটা এলাকায়। উল্লেখ্য, আগামী রবিবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর আসনে ভোট। পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ বিধানসভা বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এখানেও ভোট রয়েছে। ইতিমধ্যেই ভোট প্রচার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে অভিযোগ পালটা অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। আগামী ৯ মে খণ্ডঘোষের উখরিদে নির্বাচনী প্রচার সভায় আসছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তার আগে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে তৃণমূল নেতা কামরুল সেখকে খুন করার ঘটনায় ভোট কেন্দ্রিক উত্তেজনা চরম মাত্রা নিয়েছে। জানা গেছে,রবিবার তৃণমুলের একটি গোষ্ঠী আমিরুল সেখের নেতৃত্বে বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচারে বার হয়। আর তা নিয়েই অন্য গোষ্ঠীর সংগে বিবাদ বাধে। অভিযোগসেই বিবাদের জেরেই রবিবার রাতে যখন আমিরুল সেখ সহ আরও কয়েকজন স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলে্ন সেই সময় অতর্কিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা টুটুলের নেতৃত্বে একদল তৃণমূল কর্মী আক্রমণ চালায় কামরুল সেখদের ওপর। কামরুল সেখের সঙ্গে থাকা অন্যান্য কর্মীদের মারধর করা হলে তা আটকাতে যান কামরুল সেখ। সেই সময় তাঁর মাথায় জোড়ালো আঘাত করা হলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যান্য আরও ৪জনকে প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকেএই ঘটনার পরই গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আর তারপরেই তৃণমূলের খণ্ডঘোষ ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম এবং বিধায়ক নবীন বাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন তৃণমূলের কর্মীরা। এদিন বিকালে মৃতদেহ নিয়ে বর্ধমান বাঁকুড়া রোডে নিশ্চিন্তপুরের কাছে প্রায় ৪০ মিনিট রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। ব্লক সভাপতি এবং বিধায়ককে গ্রেপ্তারের দাবী জানান। এব্যাপারে ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম জানিয়েছেনকামরুল সেখ সিপিএম করতেন। রবিবার রাতে তাঁর নেতৃত্বে সিপিএম সমর্থকরা তৃণমূল সমর্থকদের ৩টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। হুমকি দেওয়া হয় যাতে কেউ ভোট দিতে না যায়। আর এরপরই গ্রামবাসীরা তাঁদের ধাওয়া করে। এরপর দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলার মধ্যে পড়ে গিয়ে জখম হন কামরুল সেখ। পরে তিনি মারা যান। খণ্ডঘোষ ব্লকের নির্বাচিত সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেনকামরুল সেখের পরিচয় সম্পর্কে ব্লক নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।উল্লেখ্যদিন যতই এগিয়ে আসছে ততই রীতিমত রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক অভিযোগপাল্টা অভিযোগে তেতে উঠেছে খণ্ডঘোষ এলাকা। এর আগেও বিজেপির বিষ্ণুপুরের প্রার্থী সৌমিত্র খাঁকে দফায় দফায় প্রচারে বাধা দেওয়াকালো পতাকা দেখানো থেকে তাঁর কনভয়ের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এমনকি কংগ্রেস প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র খাঁএর প্রচারেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে সিপিএম প্রার্থী সুনীল খাঁএর প্রচার মিছিলেও বাধা দেওয়ার। ফলে সব মিলিয়েই রীতিমত উত্তেজনায় ফুটছে খণ্ডঘোষ এলাকা। এরই পাশাপাশি খণ্ডঘোষ থানার ওসিকে দ্রুত সরিয়ে দেবার দাবীও জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

Exit mobile version