E Purba Bardhaman

কাটমানি কাণ্ডে তৃণমূল নেতাকে খুন করার অভিযোগে উত্তাল বর্ধমান, অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে

One TMC supporter died in the cut money return incident. TMC blocked the road with the bodies. Two BJP supporters detained

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা রাজ্য জুড়ে কাটমানি কাণ্ডের আগুন ধিকিধিকি করে বাড়লেও সম্ভবত রাজ্যের মধ্যে প্রথম কাটমানি কাণ্ডের বলি হতে হল বর্ধমান শহরের এক তৃণমূল নেতাকে। কাটমানি কাণ্ডে টাকা ফেরত দিতে না পারার গ্লানি এবং লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা নাকি টাকা না পেয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কও শুরু হয়েছে শহর জুড়ে। মৃত তৃণমূল নেতার নাম পূর্ণেন্দু চ‌্যাটার্জী (৫২)। বাড়ি বর্ধমান শহরের ১৩নং ওয়ার্ডের বড়নীলপুর বটতলা এলাকায়। বুধবার সকালে বর্ধমান শহর লাগায়ো চৈত্রপুর গ্রামের একটি আমগাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ১৩নং ওয়ার্ডের ২৯৪নং বুথের তৃণমূলের বুথ এজেণ্ট ছিলেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। বুধবার সকালে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধারের পর তাঁকে বিজেপি সমর্থকরা খুন করে টাঙিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি তৃণমূল নেতা সহ তাঁর পরিবারের দাবীযাঁর নিজের ঘরই ঠিক নেই সে কিভাবে অন্যের ঘর করে দেবার নাম করে কাটমানি নিতে পারেযদিও বড়নীলপুর বটতলার তাঁর প্রতিবেশীরা সরাসরি জানিয়েছেনবেশ কিছুদিন ধরেই টাকা ফেরতের দাবীতে পাওনাদাররা তাঁর বাড়িতে আসা যাওয়া করছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার পর জানিয়েছেনদীর্ঘদিন ধরেই পুর্ণেন্দুবাবু বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন সরকারী পরিষেবা পাইয়ে দেবার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন। কাউকে বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি করে দেবার নাম করেআবার কাউকে ভোটার কার্ড করে দেবার নাম করে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই টাকা দিয়েও কাজ পাননি। তাঁরাই বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর কাছে টাকা ফেরতের দাবী জানাচ্ছিলেন। উল্লেখ্যপুর্ণেন্দুবাবুর একসময় বর্ধমান শহরে ঘড়ি মেরামতের দোকান ছিল। বেশ কয়েকবছর তা বন্ধ রয়েছে। এরপর তিনি স্থানীয়ভাবে পুজো পার্বণ করতেন। পাশাপাশি তিনি এলাকার তৃণমূল নেতা হিসাবে কাজ করতেন। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেনগত ২০ জুন পুর্ণেন্দুবাবুর ওই টাকা ফেরত দেবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে যান। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বাড়িই আসেননি।  এরপর মঙ্গলবার সকালে পাওনাদাররা তাঁর বাড়িতে আসেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে না থাকায় পাওনাদাররাই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে বাড়ির দেওয়ালে কাটমানি লিখে চলে যান। বাড়িতে তালা বন্ধ করে দেওয়ায় পূর্ণেন্দু চ‌্যাটার্জীর স্ত্রী সন্ধ্যা দেবী এবং পূর্ণেন্দুবাবুর ছেলে বর্ধমান পুরসভার অস্থায়ী কর্মী তন্ময় চ্যাটার্জী আত্মীয়বাড়ি চলে যান। এদিকেএই ঘটনার পরই তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে পুর্ণেন্দুবাবুকে খুন করে ঝুলিয়ে দেবার অভিযোগ করে শহর জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তৃণমূল কংগ্রেসের শহর সভাপতি খোকন দাসের নেতৃত্বে বর্ধমান থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর কার্জন গেটের সামনে জিটিরোডে মৃতদেহ নামিয়ে রেখে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান তৃণমূল নেতারা। এদিকেতৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেনএই ঘটনার সঙ্গে বিজেপি মোটেও জড়িত নয়। গোটা ঘটনাই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফল। তিনি জানিয়েছেনযে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সেই এলাকায় বিজেপি এখনও শক্তিশালী হতে পারেনি। তিনি জানিয়েছেনপুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত সত্য সামনে আনুক। বিজেপি এই ঘৃণ্য রাজনীতি করে না। অপরদিকেমৃতের স্ত্রী সন্ধ্যা চ্যাটার্জ্জী জানিয়েছেনবেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির কয়েকজন ৩০ হাজার টাকা কাটমানি বাবদ ফেরত দেবার দাবী জানিয়ে তাঁদের বাড়িতে হুজ্জুতি করছিল। তিনি জানিয়েছে্নসম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলে এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। এর জেরে তিনি কয়েকদিন বাড়িতে ছিলেন না। মঙ্গলবার পুর্ণেন্দুবাবু তাঁর মেয়েকে দেখতে কলকাতার সরশুনায় যান। সেখান থেকে বিকালে ফেরার সময় ফোন করে জানানতিনি ট্রেনে উঠছেন। এরপর রাত্রি প্রায় ৮টা ২০ নাগাদ তাঁর ফোন বেজে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরপর বুধবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিমি দূরে চৈত্রপুর গ্রামের একটি আমগাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সন্ধ্যাদেবীর দাবীতাঁর স্বামীকে বিজেপি সমর্থকরাই খুন করে টাঙিয়ে দিয়েছে। এদিকেবুধবার বিকালে মৃতদেহ নিয়ে তৃণমূল নেতারা বাড়িতে পৌঁছে বাড়ির তালা ভেঙে তাঁদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে আসেন। এদিকেএই ঘটনায় পুলিশ এক দম্পতিকে আটক করেছে। যদিও প্রতিবেশীদের দাবীখুন নয়পাওনাদারদের টাকা মেটাতে না পেরে পুর্ণেন্দুবাবু নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছেএই ঘটনায় মৃতের স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন বর্ধমান থানায়। পাঁচজনকে পুলিশ আটক করেছে। উল্লেখ্যকাটমানি কাণ্ডে সম্প্রতি এই বড়নীলপুরেই তৃণমূল কাউন্সিলার পম্পা পালের স্বামী অনন্ত পালকে মারধর করা হয়েছে। মঙ্গলবারও ৩৫নং ওয়ার্ডে প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার সনত বক্সীর নামে কাটমানির টাকা ফেরত দেবার বিষয়ে পোষ্টার পরে। ফলে কাটমানি কাণ্ডে ক্রমশই উত্তপ্ত হচ্ছএ বর্ধমান শহর।

Exit mobile version