বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পেশায় রংমিস্ত্রী। অভাবের সংসার। কিন্তু সেখ আসরাফের সততা তাতে বিন্দুমাত্র মরে যে যায়নি তারই সাক্ষী রইলেন রবিবার সকালে বর্ধমান ষ্টেশনের সাধারণ যাত্রীরাও। আসরাফের বাড়ি বর্ধমানের আউশগ্রামের কয়রাপুর এলাকায়। তিনি দিনমজুরীতে রং-এর কাজ করেন। গত সোমবার তিনি বর্ধমানে এসেছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে বর্ধমান ষ্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর পাশে বসেছিলেন অনেক যাত্রীর সঙ্গে এক বৃদ্ধাও। কিন্তু তা তিনি খুঁটিয়ে দেখেননি। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাত্ই তাঁর নজরে যায় বসে থাকার সিটে পড়ে রয়েছে একটি পলিথিনের ব্যাগ। কিন্তু সেই ব্যাগ নেবার মত কাউকে তিনি দেখতে পাননি। অগত্যা কি করবেন ভেবে না পেয়ে তিনি সেই পলিথিনের ব্যাগ নিয়েই বাড়ি হাঁটা দেন। পরে বাড়ি ফিরে দেখে্ন সেই পলিথিন ব্যাগের মধ্যেই রয়েছে একটি লেডিস মানি ব্যাগ। তার মধ্যে গোছা গোছা টাকা, সোনার গহনা। রয়েছে ব্যাগের মধ্যে বার্ধক্যভাতার কাগজপত্রও। কাগজের মধ্যে থাকা ফোন নম্বর দেখে তিনি ফোন করেন। জানতে পারেন ওই ব্যাগটি বর্ধমান ষ্টেশনের এক ভিখারিনীর। এরপরই তিনি ব্যাগটি ফিরিয়ে দেবার কথা জানান। কাজের প্রয়োজনেই তিনি রবিবার আসেন বর্ধমানে। আর এদিন সকালে বর্ধমান ষ্টেশনে এসে টাকা-গহনা সহ ব্যাগ তিনি ফিরিয়ে দিলেন ভিখারিনীকে। জানা গেল, বাড়িতে ছেলেমেয়েরা থাকলেও তাঁরা দেখেন না। অগত্যা বৃদ্ধা মা সন্ধ্যারাণীর ঠাঁই হয়েছে বর্ধমান স্টেশনের ১ নং প্ল্যাটফর্মে। সেখানে থেকে ভিক্ষা করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চানও তিনি। যদিও তিনি সরকারী বার্ধক্য ভাতা পান। তবুও তার ঠিকানা বর্ধমান স্টেশন। আর গত সোমবার আপন খেয়ালেই তিনি তার টাকা – গহনাকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তা যে আর ফিরে পাবেন, এমন আশাও করতে পারেননি। কিন্তু রবিবার সকালে সবই তিনি ফিরে পেলেন। আর সবকিছু ফিরে পেয়ে খুশী সন্ধ্যাদেবীও। খুশী আসরাফের সততায়। বৃদ্ধা সন্ধ্যারাণীদেবী জানিয়েছেন, বাড়িতে ছেলেমেয়েরা থাকলেও তারা তাঁকে দেখেন না। তাই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ঠাঁই নিয়েছেন বর্ধমান ষ্টেশনে। সারাদিন ভিক্ষা করেন। যা পান তা দিয়েই তিনি জীবন ধারণ করেন। বাকিটা জমান। এদিন টাকা গহনা ফিরে পেয়ে আপ্লুত বৃদ্ধা সন্ধ্যারাণীদেবী আসরাফকে মাংসভাত খাওয়ার আব্দারও করেছেন। যদিও তাতে সম্মতি দেননি আসরাফ। জানিয়েছেন, টাকা গহনা ফিরিয়ে দিতে পেরে তাঁর খুব ভাল লাগছে।