বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন সহবাস করার ঘটনায় মেমারী কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্রী রাহিলা খাতুনের আত্মহত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হল মেমারী কলেজের পার্শ্বশিক্ষক রবীন মজুমদারকে। ধৃত শিক্ষকের বাড়ি মেমারীর সোমেশ্বরতলায়। ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেবার অভিযোগে সপরিবারে পালিয়ে যাওয়া রবীন মজুমদারকে মঙ্গলবার ভোরে হুগলীর গুড়াপ থানার হাসানপুরের আত্মীয় বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতকে বর্ধমান সিজেএম আদালতে তোলা হলে তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবীই না দাঁড়ানোয় আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সোমনাথ দাস। উল্লেখ্য, রাহিলা খাতুনের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রাহিলা খাতুনকে নানাভাবে প্রলোভিত করে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন অভিযুক্ত শিক্ষক। বিবাহিত এবং দুই সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও তা লুকিয়েই তিনি রাহিলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। মৃতার পরিবারের দাবী, রবিবারও রাহিলাকে মেমারীর মালঞ্চ পার্কে নিয়ে যায় রবীনবাবু। কিন্তু সেখান থেকে রাতে ফেরার পরই বিমর্ষ হয়ে পড়ে রাহিলা। এরপর সোমবার সকালে নিজের ঘরেই ওড়নার ফাঁসে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। মেমারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে, এই ঘটনার পরই মেমারী অঞ্চল জুড়ে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। সোমবার রাতেই মেমারীতে রাস্তা অবরোধ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের ফাঁসির দাবী জানায় এলাকার বাসিন্দারা। রাতেই মৃতার বাবা সেখ আব্দুল হাসান মেমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে, এই ঘটনায় মঙ্গলবার মেমারী কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মিছিল করেন। এমনকি ছাত্রছাত্রী সহ কলেজের অধ্যাপক অধ্যাপিকারাও এদিন রবীন মজুমদারের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, এর আগেও তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরীর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু শাসকদল ঘনিষ্ট হওয়ায় তিনি পার পেয়ে যান। উল্লেখ্য, এর আগে কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসে রবীন মজুমদারের নাম জড়ায়। তার বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। এমনকি সম্প্রতি কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের হেনস্থা করা এবং কলেজের পরিবেশ নষ্ট করার ঘটনায় কলেজের এক কর্মীর সঙ্গে তাঁর নামও উঠে আসে। এরপর কলেজে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ার পর রবীন মজুমদারের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি তাঁকে কোনো ক্লাস নিতেও নিষেধ করা হয়। যদিও মঙ্গলবার আদালতের পথে পা বাড়িয়ে অভিযুক্ত পার্শ্বশিক্ষক রবীন মজুমদার জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গে রাহিলার কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। তিনি দাবী করেছেন, রাহিলার বিয়ের ঠিক করা হচ্ছিল তার পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু রাহিলা এখনই বিয়ে করতে চাইছিল না। তাই এব্যাপারে তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আর সেই কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি নির্দোষ।