বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আর জি কর কাণ্ড নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড়ের সঙ্গে ক্রমশই উত্তেজনার পারদ চড়ছে বর্ধমানের শক্তিগড় থানার নান্দুড় গ্রামে আদিবাসী ছাত্রীর খুনের ঘটনাকে ঘিরে। ১৪ আগস্ট রাতে নান্দুড় গ্রামের বাসিন্দা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রিয়াংকা হাঁসদাকে গলার নলি কেটে খুন করা হয় বাড়ির কাছেই মাঠে। ইতিমধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। খুনিকে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আদিবাসী সমাজ আন্দোলনেও নেমেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হলেও এখনও অধরা খুনি। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, খুনিকে চিহ্নিত করা গেছে। খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার হবে। একইসঙ্গে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আবেদনও করেছেন। অন্যদিকে, এই পরিস্থিতির মাঝেই পৃথকভাবে শনিবার দুপুরে নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গেলেন বিজেপির বিধায়ক তথা বিজেপির এসটি মোর্চার সভাপতি জুয়েল মূর্মূ এবং আই এস এফের রাজ্য নেতা তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নৌসাদ সিদ্দিকি। নৌসাদ সিদ্দিকি এদিন বলেন, গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। শান্ত গ্রাম। কাজে ব্যস্ত থাকেন সবাই। কেন আতঙ্কিত থাকবে? ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস পালন করলাম। আতঙ্ক দূর করার কাজ তো পুলিশ প্রশাসনের। কেন তারা পারছে না? ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেল। আমরা আর একটা দিন দেখবো। মায়ের সঙ্গে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। যিনি প্রথম দেখেছেন তিনি কথা বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। কে করেছে খুঁজে বের করতে হবে। গ্রামের মানুষের নিরাপত্তাকে বাড়াতে হবে। যেখানে খুন হয়েছে সেখানে কোনো পাহারা নেই। প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে। এই গাফিলতি মানা যায় না। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। আমরা চাই গোটা রাজ্যে এই ধরনের যে ঘটনা ঘটছে তার বিরুদ্ধেও উনি ফাঁসির দাবি করুন। নৌসাদ বলেন, সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তাই এই ঘটনা ঘটছে। ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বিরোধীদের ওপর দোষ দিচ্ছেন। উনি না পারলে পদত্যাগ করুন। এতাবৎকাল শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন কমিটির সুপারিশ কার্যকর করুন। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ৪৩ জনকে বদলি করা হয়েছে। আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। এই ধরনের বদলি কীসের? প্রতিহিংসা পরায়ণতা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তো দোষীদের ফাঁসি চেয়েছেন। তাহলে কেন বদলি? এরকম ফ্যাসিস্ট চিন্তাভাবনা নিয়ে চললে মানুষই বাংলাদেশ বানিয়ে দেবেন। পরিবার যদি চায় সোমবারই হাইকোর্টে কেস ফাইল করবো। এরই পাশাপাশি আর জি কর কাণ্ড নিয়ে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে নৌসাদ বলেন, ডায়মণ্ডহারবার থানার একজন প্রাক্তন অফিসারের দাদা ডাক্তারবাবু আত্মহত্যা করেছিল বলে প্রচার করা হয়েছিল। ভোটের সময়। সেই তদন্ত কতদূর এগোলো? ওটা তো ওনার লোকসভা এলাকার মধ্যে। একজন মহিলার নাম এসেছিল। এফআইআর-এ নামই নেই ওই মহিলার। চাপে পড়লে রাস্তায় নামতে হবে। রিমোর্ট এলাকার ঘটনা চেপে দেওয়া হয়। সেজন্যই ছুটে এসেছি। সরকারের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা। সরকার চাইলে সব হতে পারে। সরকার চিৎকার করছে। ববি দেওলের সিনেমা চোর মাচায়ে শোর হয়ে যাচ্ছে না তো। অন্যদিকে, এদিন বিজেপির রাজ্য এস’টি মোর্চার সভাপতি তথা বিধায়ক জুয়েল মূর্মূ বলেন, এখানে যেটা হয়েছে সেটা শুধু খুন নয়, আরও কিছু আছে। এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আর জি কর কাণ্ডে প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করছে। এখানেও প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করুক। আদিবাসী সমাজ জেগে উঠুন। কোথায় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে? তাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। আমরা পরিবারের পাশে আছি। পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করবে না, সেজন্য, আমরা রাজ্যপালের কাছে পরিবারকে নিয়ে যাবো, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিচ্ছি। যারা দোষী তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এখানকার আইসি কি ঘুমাচ্ছেন? এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চাইছি। বাবাও চাইছেন। পুলিশকে এর খেসারত দিতে হবে। অপরদিকে, এদিন নিহত ছাত্রীর বাবা সুকান্ত হাঁসদা জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর আস্থা নেই এমনটা নয়, কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রমাণ লোপাট হয়ে যেতে পারে। সেজন্যই আস্তে আস্তে আস্থা কমছে। আজকে ঢিলেমি দিয়েছে। যেখানে খুন হয়েছে সেখানে কেনো পাহারা নেই। কাউকে দেখা যায়নি। তবে আমরাও চাই প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হোক। আমাদের মেয়ের জীবনের বদলা যে খুন করেছে তারও ফাঁসি চাই।