উদ্বোধনী স্পেশাল ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ বর্ধমানে, বিজেপির দুই সাংসদের মন্তব্যকে ঘিরে শুরু চর্চা
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- উদ্বোধনী স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে সূচনা হ’ল পশ্চিমবাংলায় প্রথম ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ দ্রুতগামী ট্রেন পরিষেবা। যদিও এই ট্রেনের নিয়মিত পরিষেবা শুরু হবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারী থেকে। আর এই বন্দে ভারত উদ্বোধনেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। এদিন হাওড়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হাজির হতেই জয় শ্রীরাম ধ্বনি ওঠে। প্রতিবাদে মঞ্চে ওঠেননি মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বর্ধমান ষ্টেশনে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নদীয়ার রাণাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, রাম নাম শুনলে ভূত পেত্নি পালিয়ে যায়। রাম নাম তো পবিত্র নাম। বরং ছোটবেলায় মা, বাবা, ঠাকুমা, দিদা, দাদুরা ছোট ছেলেদের ভূতের ভয় কাটাতে রাম নাম উচ্চারণ করতে বলতেন। রাম নামে দিদির এতো আপত্তি কিসের। এরপরই তিনি বলেন, আমফানের সময় দিল্লীর টাকা আনতে দিদি তাঁর শাড়ির পাড়ের রং গেরুয়া করেছিলেন। মমতা দিদি ক্ষমতা আর কিছু পাবার জন্য সব করতে পারে। গেরুয়া রং তো পবিত্র রং। বিজেপির কোনো রং নয়। অপরদিকে, বিজেপি সমর্থকদের এই জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়া সম্পর্কে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্রজিত সিং অহলুবালিয়া বলেন, বন্দে ভারতের উদ্বোধন একটা রাষ্ট্রীয় পর্ব। সেখানে ভারত মাতা কি জয় জয় করা উচিৎ ছিল। এদিন হাওড়া থেকে বন্দে ভারতে এসে শক্তিগড় ষ্টেশনে নামেন তিনি। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন অহলুবালিয়া। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাতৃবিয়োগের পরেও তিনি কোনও অনুষ্ঠান বাতিল করেন নি। পশ্চিমবাংলায় প্রথম আমরা বন্দে ভারত ট্রেন পেলাম এটা আমাদের কাছে গৌরব বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, বন্দে ভারত হাওড়া ছেড়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রবেশ করতেই মশাগ্রাম ষ্টেশনে বিজেপি সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে ওঠে। রীতিমত রেল লাইনে নেমে পড়ে তাঁরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। রেল পুলিশকে বিজেপি সমর্থকদের এই উন্মাদনা সরাতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়। যার জন্য ট্রেন ছাড়তে একটু দেরীও হয়। অপরদিকে, এদিন বন্দে ভারত বর্ধমান ষ্টেশনে ঢোকে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক দেরীতে। দুপুর প্রায় ১টা ২৮ মিনিট নাগাদ। ২ মিনিট দাঁড়ানোর কথা থাকলেও প্রায় ৬ মিনিট পর বর্ধমান ষ্টেশন থেকে রওনা হয়। বর্ধমান ষ্টেশনে এদিন বন্দে ভারত ঢুকতেই ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার বর্ধমান সাংগঠনিকে জেলার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ-এর নেতৃত্বে বিজেপি সমর্থকরা ট্রেনের চালককে ফুলের মালা এবং ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে বরণ করে লাড্ডু দেন। বিজেপির মহিলা এসসি, এসটি ও ওবিসি সেলের নেত্রী শুক্লা মন্ডলের নেতৃত্বে মহিলা সমর্থকরা বন্দে ভারত ট্রেনের সামনে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। হাওড়া থেকে বন্দে ভারত ট্রেনে বর্ধমানে এসে নামেন বিজেপির নদীয়ার রাণাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে এদিন তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি এদিন বলেন, বন্দে ভারত ট্রেন একটা গর্বের বিষয়। বাঙ্গালী হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। সবচেয়ে গর্ব অনুভব করি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সেই কর্মকাণ্ডের জন্য। সেই নরেন, আমাদের বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দ তিনি সাধনায় দেখতে পেয়েছিলেন যে ভারত জননী জগত জননী রূপে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। আর আরেক নরেন (নরেন্দ্র মোদি) সেই কাজটা বাস্তবে রূপায়িত করছেন। তিনি যদি সশরীরে আসতে পারতেন তাহলে খুবই ভালো লাগতো। মাতৃ বিয়োগ হওয়ার জন্য তিনি আসতে পারেনি। রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য দেখিয়ে তিনি যেভাবে ভার্চুয়ালি সমস্ত প্রোজেক্টের উন্মোচন করলেন তা এক অভাবনীয়। এর জন্যই আমাদের গর্ব অনুভব হয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। স্বামী বিবেকানন্দের অসমাপ্ত কাজ কি নরেন্দ্র মোদি করছেন? এই প্রশ্নে জগন্নাথ সরকার বলেন, বিবেকানন্দ থিওরি দিয়েছিলেন, ভবিষ্যৎ কথা বলেছিলেন। তিনিও রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী হয়ে নিজের আত্মিক উন্নতির জন্য কিছু করেননি। পদব্রজে ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেছেন, ভারতের রোগ নির্ণয় করেছেন, সমস্যা কোথায় তাঁর বাণী রচনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষাপদ্ধতি কী হওয়া উচিত সেইটাও বলেছেন । আর আমাদের এই নরেন অর্থাৎ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার এই চিন্তাধারার সঙ্গে ভারতীয়ত্ব বা স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তা-দর্শন, শিকাগো বক্তৃতায় যা বলেছিলেন এর মধ্যে কোন ফারাক কিছু নেই। তাই স্বামী বিবেকানন্দ থিওরি দিয়েছিলেন প্র্যাকটিকালে নরেন্দ্র মোদী সেটা সম্পূর্ণ করছেন। এটা একটা অনুভবের ব্যাপার। যুক্তিতর্কে, বিজ্ঞানে হবে না। আধ্যাত্মিক ভাবনা থাকতে হবে। উল্লেখ্য, রেল দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, নিয়মিত পরিষেবায় বুধবার বাদে সপ্তাহের ৬ দিন চলবে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’। হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাতে ট্রেনটির সময় লাগবে ৭ ঘন্টা ৩০ মিনিট। হাওড়া থেকে ছাঁড়ার সময় সকাল ৫ টা ৫৫ মিনিট, ট্রেনটি দুপুর ১ টা ২৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দুপুর ৩ টে ৫ মিনিটে ছেড়ে রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে হাওড়ায় পৌঁছাবে। যাতায়াতের পথের মাঝে ট্রেনটি দাঁড়াবে বোলপুর (শান্তিনিকেতন), মালদা টাউন এবং বারসোই স্টেশনে। ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’-এর হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি ভাড়া CC – ১৫৬৫ টাকা (৩৭৯ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ / ডায়নামিক চার্জ-এর বিষয়ে কিছু জানা যায়নি) এবং EC – ২৮২৫ টাকা (৪৩৪ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ / ডায়নামিক চার্জ-এর বিষয়ে কিছু জানা যায়নি)। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়ার ভাড়া CC – ১৪৪৫ টাকা (২৫৭ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ / ডায়নামিক চার্জ-এর বিষয়ে কিছু জানা যায়নি) এবং EC – ২৬৭০ টাকা (২৭৯ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ / ডায়নামিক চার্জ-এর বিষয়ে কিছু জানা যায়নি)। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’-এর কোনও স্টপেজ নেই। অন্যদিকে, রেল দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে বর্ধমান রেল স্টেশনে শতাব্দী এক্সপ্রেস স্টপেজ দেওয়া শুরু করেছে। এই ট্রেনটি রবিবার বাদে সপ্তাহের ৬ দিন চলে। শতাব্দী এক্সপ্রেসের হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাতে সময় লাগে ৮ ঘন্টা ১৫ মিনিট। হাওড়া থেকে ছাঁড়ার সময় দুপুর ২ টো ২৫ মিনিট, ট্রেনটি রাত ১০ টা ৫৫ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটে হাওড়ায় পৌঁছাবে। যাতায়াতের পথের মাঝে ট্রেনটি দাঁড়াবে বর্ধমান জংশন, বোলপুর (শান্তিনিকেতন), নিউ ফারাক্কা জংশন, মালদা টাউন, বারসোই এবং কিষাণগঞ্জ স্টেশনে। শতাব্দী এক্সপ্রেস-এর হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি ভাড়া CC – ১৩৩৫ টাকা (৪৬০ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ / এর সাথে ডায়নামিক চার্জ যুক্ত হতে পারে) এবং EC – ২৫০৫ টাকা (৬৩০ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ)। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়ার ভাড়া CC – ১১৮৫ টাকা (৩১০ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ / এর সাথে ডায়নামিক চার্জ যুক্ত হতে পারে) এবং EC – ২২৯৫ টাকা (৪২০ টাকা ক্যাটারিং চার্জ-সহ)।