গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ঘটনার ৭ দিন পরও বর্ধমান স্টেশন এলাকায় ৭২ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিস। ঘটনার কিনারায় ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে একটি দল গড়া হয়েছে। সেই দল বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তবে, ধর্ষককে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে তা খুব একটা কাজে আসছে না পুলিসের। বৃদ্ধাকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করা পর্যন্ত কোথায় ঠিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিস। এক্ষেত্রে সমস্যা বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা। বৃদ্ধা এখনও ঠিকমতো কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বৃদ্ধার রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি এখনও দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই, বৃদ্ধা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ঘটনার বিষয়ে অনেক কিছু তথ্য এখনও অজানা পুলিসের। বর্ধমান থানার এক অফিসার বলেন, বৃদ্ধা স্টেশনের কাছে কচুবনে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু, স্টেশন চত্বরের আশপাশে সে ধরণের কচু বনের অস্তিত্ব পায়নি পুলিস। তাছাড়া, বৃদ্ধার উপর হওয়া অত্যাচারের পর তিনি চলাফেরা করার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাহলে কচুবন থেকে কিভাবে বৃদ্ধা স্টেশন এলাকার মিষ্টির দোকানের সামনে এলেন তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিস। বৃদ্ধার ছেলের সঙ্গে কথা বলে পুলিস জেনেছে, ঘটনার ১০-১২ দিন আগে হুগলির গোঘাট থানার শ্যাওড়া গ্রাম থেকে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গোঘাট থেকে তিনি কিভাবে বর্ধমান স্টেশনে এলেন সে ব্যাপারেও পুলিসকে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেন নি বৃদ্ধা। গভীর রাতে ট্রেনের মধ্যে বৃদ্ধাকে কেউ ধর্ষণ করে থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিস। আবার বিডিআর রেলপথে কোনও নির্জন স্টেশনে বৃদ্ধা লালসার শিকার হয়েছেন কিনা তা ভাবাচ্ছে পুলিসকে। তবে, ঘটনাস্থলে ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অপরাধীর খোঁজ পাওয়া মুশকিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, তদন্ত জোর কদমে চলছে। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তবে, ঘটনার বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলা জরুরি। শারীরিক অবস্থার কারণে বৃদ্ধার সঙ্গে এখনও সেভাবে কথা বলা হয়নি। তবে, ঘটনার কিনারার জন্য সব ধরণের চেষ্টা চলছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে তদন্তকারীরা। তা থেকে বৃদ্ধাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া রিকশ চালকের হদিশ পেয়েছে পুলিস। তার সঙ্গে কথাও বলেছেন তদন্তকারীরা। রিকশ চালক পুলিসকে জানিয়েছেন, মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে কয়েকজন তার রিকশয় বৃদ্ধাকে তুলে দেয়। বৃদ্ধাকে হাসপাতালে পৌছে দিতে বলা হয় তাকে। রিকশ থেকে বৃদ্ধাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া দুই হাসপাতাল কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিস। তবে, তাদের কাছ থেকে তেমন কোনও তথ্য মেলেনি। ঘটনার কিনারায় রেল পুলিসের সাহায্যও চাওয়া হয়েছে। রেল পুলিসও পৃথকভাবে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালে ডেপুটি সুপার ডাঃ অমিতাভ সাহা বলেন, বৃদ্ধা এখনও জেরা করার মত অবস্থায় আসেন নি। ঘটনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেই বৃদ্ধার রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে। সে জন্য বৃদ্ধার সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে কথা বলার জন্য এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি পুলিসকে।