গলসি (পূর্ব বর্ধমান) :- গলসি থানার শাঁকড়াইয়ে স্কুল ছাত্রীকে খুনের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতের নাম টোটন ঘোড়ুই ওরফে গদাই। গলসি থানার চান্না গ্রামের দিঘিরপাড় এলাকায় তার বাড়ি। বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি থেকে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। সেদিনই ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। খুনের সময় পড়ে থাকা পোশাক ও ঘটনার পুনির্নর্মাণের জন্য ধৃতকে ৭ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সোমনাথ দাস।ঘটনার দুই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী শ্রীকান্ত ঘোড়ুই ও মোবাইল মেকানিক বিজয় ঘোড়ুইয়ের গোপন জবানবন্দি শুক্রবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নথিভুক্ত করায় পুলিস। পুলিস জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১০টা নাগাদ টিউশন পড়ার জন্য এবং প্রোজেক্টের খাতা কিনতে বাড়ি থেকে বের হয় শেখ সাবানা ওয়াসমিন ওরফে পায়েল। সে গলসির কিশোরকোণা হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। নির্দিষ্ট সময়ের পরও সে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করেন। হদিশ না মেলায় পরিবারের তরফে রাতে গলসি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর হিট্ট্যা ও শাঁকড়াইয়ের মাঝে বাজনোর পুলের কাছে ঝোপের মধ্যে থেকে তার নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতার শরীরে অনেকগুলি আঘাতের চিহ্ন ছিল। মৃতার বাবা শেখ ওয়াজেদ আলি পরেরদিন গলসি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মৃতার হাতে একটি জামার ছেঁড়া পকেট ধরা ছিল। তার মোবাইলটিও পাওয়া যায়নি। মৃতার বাবা তার প্রেমিক রাজ ওরফে পিটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। তাঁর মোবাইলের কল ডিটেলস্ও সংগ্রহ করে পুলিস। খুনে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে বিশেষ কোনও তথ্য পায়নি পুলিস। কুলগড়িয়া-খানা জংশন রোডের বিভিন্ন জায়গা থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিস। তাতেও তেমন কিছু মেলেনি। মৃতার মোবাইলের কল ডিটেলস্ এবং তার আইএমইআই নম্বরের সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে যায় পুলিস। গত শুক্র ও শনিবার মৃতার ফোন ব্যবহার শুরু হয়। বিষয়টি নজরে আসে পুলিসের। ফোনের আইএমইআই-এর সূত্র ধরে পুলিস জানতে পারে, মৃতার ফোনটি চান্না গ্রামের বিজয় মাঝি ব্যবহার করছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। ফোনটি মাস দু’য়েক আগে শ্রীকান্ত ঘোড়ুই ওরফে বল্টু তাকে সারাতে দিয়েছিল বলে জানায় বিজয়। এরপর শ্রীকান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। সে জানায়, ফোনটি তাকে টোটন দিয়েছে। ফোনের ওয়ালপেপারে একটি মেয়ের ছবি ছিল বলে বিজয় এবং শ্রীকান্ত পুলিসকে জানায়। মৃতার ছবি তাদের দেখায় পুলিস। ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা ছবি এবং মৃতার ছবিতে মিল রয়েছে বলে জানায় তারা। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃতার ফোনটি টোটনের কাছে ছিল বলে নিশ্চিত হয় পুলিস। খুনে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। ফোনটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জেনেছে, ঘটনার দিন রাস্তা ধরে সাইকেল নিয়ে সাবানাকে আসতে দেখে টোটন। সে সাবানাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় সাবানাকে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বলে টোটন। সাবানা তার প্রতিবাদ করে। এমনকি জুতো পেটা করে টোটনকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাছে থাকা গামছা দিয়ে সাবানার গলায় ফাঁস দেয় টোটন। তাতেই সাবানা মারা যায়। ধস্তাধস্তিতে সাবানার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগে। টোটন তাকে মারধরও করে। ধস্তাধস্তির সময় সাবানা ডান হাত দিয়ে টোটনের জামার পকেট টেনে ধরে। সেটি ছিঁড়ে সাবানার হাতে থেকে যায়। খুনের পর কিছুদূর দেহটি টেনে নিয়ে যায় টোটন। এরপর ক্যানেলের পাড়ে দেহটি ফেলে পালায় সে। ঘটনার দিনই মৃতার ফোন থেকে তার এক আত্মীয়কে ফোন করা হয়। সাবানাকে খুন করা হয়েছে বলে তার আত্মীয়কে ফোনে জানানো হয়। তারপরই ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফোনের সূত্র ধরেই খুনের কিনারা করতে পেরেছে পুলিস।