E Purba Bardhaman

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আঝাপুরে আইনজীবী খুনের ঘটনায় গ্রেফতার ২

Police have arrested two youths in connection with the murder of a lawyer in Jamalpur

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- অবশেষে জামালপুরে আইনজীবী খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এদিন ধৃত দুজনকে নিয়ে পুলিশ সুপার অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশের এই সাফল্যের কথা জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ২৭ তারিখ আইনজীবী খুনের ঘটনার পর এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটা বিশেষ টিম তৈরী করা হয়েছিল। সেই টিম এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সেই তালিকায় যেমন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী-পরিজনেরা রয়েছেন তেমনি আইনজীবীরাও রয়েছেন। মৃত আইনজীবীর সঙ্গে ঘনিষ্ট এবং তাঁর পরিচিতদের ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সুপার এদিন দাবী করেছেন, তদন্ত চলাকালীনই তাঁরা জানতে পারেন – আঝাপুরেরই দুই বাসিন্দা হঠাৎই বেশি পরিমাণে টাকা খরচ করছেন। পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তাদের নজরে রেখে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। এরপরই পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়ে রবিবার দুপুরে বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার মাদ্রা থেকে সুজিত ঘোড়ুই এবং আঝাপুর থেকে প্রশান্ত ক্ষেত্রপালকে গ্রেফতার করে। দুজনেরই বাড়ি জামালপুরের আঝাপুরে। সুজিত ডাবের ব্যবসার সাথে যুক্ত, প্রশান্ত দিনমজুর। মাঝে মাঝে সে লরীতে আলুর বস্তা নামানো ও তোলার কাজ করত। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ডাবের ব্যবসার সূত্রে মৃত আইনজীবী মিতালী ঘোষের বাড়িতে একাধিকার গাছ থেকে ডাব পেড়ে দেওয়ার জন্য সুজিতের ডাক পড়েছে। ফলে সুজিত মিতালি ঘোষের বাড়ির ভিতরের নকশা সমস্তটাই জানত। বাড়ির আরও খুঁটিনাটি সে জেনে নিয়েছিল। এরপরই প্রশান্তের সঙ্গে পরামর্শ করে চুরির উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন দুজন মিতালী ঘোষের বাড়িতে হাজির হন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রথমে পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢোকে ডাব ব্যবসায়ী সুজিত। প্রায় ঘণ্টাখানেক সে ধানের মড়াইয়ের পিছনে লুকিয়ে ছিল। তারপর ঢোকে প্রশান্ত। এরপরই এই দুজন শ্বাসরোধ এবং ভারী কিছু দিয়ে মিতালী ঘোষের মাথায় আঘাত করে মিতালী ঘোষকে খুন করে। পুলিশের দাবী, ধৃতরা অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর সকালে মিতালী ঘোষের বাড়ির পরিচারিকা দরজার বেল বাজিয়ে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে এলাকাবাসীদের জানান। তারা পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে দেখেন বাড়ির উঠানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইনজীবীর রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশের পাশাপাশি জেলার পুলিশকর্তারাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তদন্তের জন্য তৈরী হয় বিশেষ টিম। ঘটনাস্থল থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করতে আসেন সি আই ডি-র ফিংগারপ্রিন্ট এক্সপার্ট। আসেন ফরেন্সিক টিমও। আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবীতে বর্ধমান আদালতের আইনজীবীরা দুদিন কর্মবিরতিও করেন। রাজ্য বার কাউন্সিলের ডাকা পেন ডাউন কর্মসূচীতে সামিল হয়ে গোটা পশ্চিমবঙ্গ এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আইনজীবীরাও একদিন কর্মবিরতি করেন। বার কাউন্সিল এবং বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবীও জানান। খুনের ঘটনার পর ৬দিন পেরিয়ে গেলেও দুষ্কৃতিদের ধরতে না পারায় চাপের মুখে পড়ে জেলা পুলিশ। এরপর এদিনের এই গ্রেফতারের ঘটনায় স্বস্তিতে জেলা পুলিস। পুলিশ সুপার এদিন জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁদের কাছে তেমন কোনো ক্লুই মিলছ না। তবুও তাঁরা সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অপরাধের কথা কবুল করলেও এখনও চুরির কোনও সামগ্রী উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। আগামীকাল সোমবার ধৃতদের আদালতে পেশ করা হবে। পুলিশ সুপার এদিন জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তে নেমে তাঁদের কাছে তেমন কোনো ক্লুই মিলছ না। তবুও তাঁরা সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অপরাধের কথা কবুল করলেও এখনও চুরির কোনও সামগ্রী উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। যদিও ধৃত প্রশান্ত ক্ষেত্রপালের মা ও বাবা জানিয়েছেন, পুলিশ রবিবার গভীর রাতে এসে প্রথমে প্রশান্ত ক্ষেত্রপালকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর প্রশান্ত ক্ষেত্রপালের স্ত্রী পুতুল ক্ষেত্রপালকেও ডেকে নিয়ে যায়। পুতুলদেবীর কাছ থেকে সোনার একটি লকেটযুক্ত হার এবং কিছু টাকা সহ একটি মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। প্রশান্ত ক্ষেত্রপালের বাবা লক্ষ্ণণ ক্ষেত্রপাল জানিয়েছেন, ছেলে বউমার সঙ্গে তাঁদের ভাল সম্পর্ক ছিল না। তাঁরা স্বামী স্ত্রী আলাদাই থাকতেন। ফলে ছেলে প্রশান্ত কি করে না করে তা তাঁরা জানতেন না। তিনি জানিয়েছেন, কালীপুজোর দিন অর্থাত যেদিন সকালে মিতালীদেবীর দেহ উদ্ধার হয়, সেদিন প্রশান্ত কালনায় তার শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছিলেন। ফিরে আসে পরের দিন। অপরদিকে, অপর ধৃত সুজিত ঘড়ুই-এর প্রতিবেশী এবং আত্মীয়রা জানিয়েছেন, গতবছর সুজিতকে গাড়ির ব্যাটারী চুরির ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। তার ১৬ দিন জেলও হয়। জেল থেকে ফিরে এসে সে ডাবের ব্যবসা করত। গাছ থেকে ডাব পেড়ে সে বাজারে বিক্রি করত। সেই সূত্র ধরেই মিতালী দেবীর বাড়িতে সে ডাব পারতেও যেত। সুজিতের আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন মিতালীদেবী সুজিতকে খুবই স্নেহ করতেন। কিন্তু সে যে এই কাজ করবেন ভাবতে পারেননি। সম্প্রতি সুজিত বিজেপি পার্টি করতেও শুরু করে। একইসঙ্গে তার মধ্যে প্রচুর টাকা রোজগার করার নেশা তৈরী হয়েছিল। সেই টাকা জোগাড় করতেই সে মিতালীদেবীর বাড়িতে চুরি করার পরিকল্পনা করে বলে তাঁদের মনে হচ্ছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে্ন, কালীপূজোর দিন সকাল ৮টা নাগাদ ট্রেনে চেপে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুজিত ইন্দাসের মাদ্রায় তার শ্বশুরবাড়িতে চলে যায়। যাবার আগে তাঁরা শুনেছিলেন সে ৮ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়েছেন। সুজিতের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, কালীপূজোর দিন সকালে বাড়ি ফেরার পর তার স্ত্রী তাকে প্রশ্নও করে রাতে কোথায় ছিল? তার উত্তরে সুজিত স্ত্রীকে জানায়, রাত্রে সে মদ খেয়ে পড়েছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তখনও তাঁরা বুঝতে পারেননি সুজিতই এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। রবিবার সকালে তাকে মাদ্রা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার পর আঝাপুরের সুজিতের প্রতিবেশীদের মধ্যে ব্যাপক আতংকও দেখা দিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাঁদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়াই মুশকিল হবে। একজন নৃশংস্য খুনীর পাড়ায় কেউই মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইবেন না। তাঁরাও আতংকিত হয়ে পড়েছেন। 

Exit mobile version