গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় বর্ধমান আদালত চত্বর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক যুবককে পাকড়াও করল পুলিশ। যুবককে কব্জায় আনতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। বহু কষ্টে বাগে এনে তাকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে যায় মানুষের। আদালতের বারান্দায় এসে কর্মীরাও যুবককে পাকড়াও করার দৃশ্য দেখেন। অনেকেই পুরো দৃশ্যটি মোবাইল বন্দি করেন। যদিও পুলিশ তাতে বাধা দেয়। আদালত চত্বর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ যুবকের পাকড়াও হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাশাপাশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে আইনজীবী মহলে। আদালতের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত আইনজীবীরা। পূর্ব বর্ধমান আদালতে বর্তমানে রাজু ঝাকে খুন-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার চলছে। দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে একটি ডাকাতির মামলা চলছে। সেই মামলায় ধৃতদের সঙ্গে দেখা করতে ওই যুবক এসেছিল বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। ঘটনা চলাকালীন তারা কেটে পড়ে। এই ঘটনার পর আইনজীবীরা বিষয়টি জেলা জজকে জানান। দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারকের নজরেও বিষয়টি আনেন কেসের সরকারি আইনজীবী উদয় শংকর কোনার। দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জিআরও-র সঙ্গে আলোচনা করেন। আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা উচিত বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
শুক্রবার বেলা চারটে। আদালত চত্বরে ঠাসা ভিড়। সেই সময় টাউন স্কুলের গেটের দিকে জিআরও অফিসের পিছনে রাস্তায় এক যুবকের সঙ্গে কয়েকজনের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। অনেকেই মারপিট বলে ছাড়াতে যান। সেই সময় একজন নিজেকে পুলিশ কর্মী বলে পরিচয় দেন। যুবককে তিনি কোমর জাপটে ধরেন। ওই যুবক নিজের প্যান্টের পকেটে হাত ভরে কিছু বার করতে যায়। যুবকের পকেটে আগ্নেয়াস্ত্র আছে বলে চিৎকার শুরু করেন ওই পুলিশ কর্মী। চারপাশ থেকে আরও কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ যুবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেউ যুবকের হাত ধরেন, কেউ ধরেন পা। এক দুঁদে অফিসার চোখে আঙুল ভরে যুবককে কব্জা করেন। বহু কষ্ট করেও যুবকের পকেট থেকে হাত বের করতে পারছিলেন না পুলিশ কর্মীরা। শেষমেশ অবশ্য বিস্তর টানাটানির পর যুবককে কব্জা করতে সক্ষম হন পুলিশ কর্মীরা। তাকে বাগে এনে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পুরো দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে যায় সেখানে। রাস্তার পাশেও বহু মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েন। এ যেন এক হিন্দি সিনেমায় পুলিশের দুষ্কৃতি ধরার দৃশ্যের শুটিং হচ্ছিল। কিন্তু, বিষয়টি চাউর হওয়ার পরই আতঙ্ক ছড়ায় আদালতের কর্মী, আইনজীবী ও ল’ক্লার্কদের মধ্যে। এনিয়ে জোর চর্চা শুরু হয় আদালত চত্বরে। নিরাপত্তা নিয়ে সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনই দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে একটি ডাকাতির মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলায় ৪ জন অভিযুক্ত। অন্য একটি মামলায় তাদের দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। সেই মামলার শুনানিতে সাজাপ্রাপ্তদের নাম অজয় দাস, রীতেশ কুমার রাম, সঞ্জিত কুমার বিন্দ ও রঞ্জিৎ কুমার বিন্দ। যে মামলায় শুনানি চলছে তাতে আরও একজন অভিযুক্ত রয়েছে। সেই চারজনের সঙ্গে আদালতের লকআপে দেখা করার জন্য ওই যুবক এসেছিল বলে অনুমান আইনজীবীদের একাংশের। কেসের সরকারি আইনজীবী বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। সরকারি আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আদালত চত্বরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত। সরকারি প্যানেলভুক্ত সিনিয়র আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, আদালত চত্বর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ যুবকের ধরা পড়া সত্যিই উদ্বেগের। আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে। বিচারক, সরকারি আইনজীবী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে এই ঘটনায়।