বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- হাওড়ার লিলুয়ার গাড়ি চালক তথা গাড়ি মালিক কুন্দন মহারাজকে খুন করার ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। খুনের ঘটনার তদন্তে রবিবার হাওড়ায় গেল বর্ধমান থানার পুলিশ। সেখানে গিয়ে যে হোটেলের সামনে থেকে ৪ যুবক কুন্দনের গাড়ি ভাড়া নেয় সেখানকার সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। হোটেলের কাছেই রয়েছে একটি পেট্রল পাম্প। সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও নিয়েছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়া যুবকদের পরিচয় জানা যেতে পারে বলে পুলিশের আশা। এছাড়াও মৃতের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারী অফিসার। হাওড়ার অশোকা হোটেলের সামনে থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় কুন্দনের সঙ্গে দুষ্কৃতিদের কথোপকথন কেউ লক্ষ্য করেছেন কিনা তা জানার চেষ্টা করেন তদন্তকারী অফিসার। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপে কুন্দনের পাঠানো দুষ্কৃতিদের সচিত্র পরিচয় পত্রের ছবি স্থানীয় থানা ও হোটেলের আসপাশের লোকজনকে দেখানো হয়। তবে, পরিচয় পত্র দুষ্কৃতিদের কিনা সেব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। সেটি কুন্দন পাঠিয়েছিল নাকি তদন্তকে বিভ্রান্ত করতে দুষ্কৃতিরা পাঠিয়ে ছিল তা ভাবাচ্ছে পুলিসশকে। পরিচয়পত্র চাওয়ার পরই কুন্দনকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। খুনের পর ইচ্ছাকৃতভাবে কুন্দনের মোবাইলটি মৃতদেহের পাশে রাখা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খুনিদের শনাক্ত করতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে পুলিশ। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে চালকের হাতের ছাপ সংগ্রহ করবে। কুন্দনকে খুনের পর দুষ্কৃতিদের কেউ গাড়ি চালিয়ে ছিল। তার হাতের ছাপ স্টিয়ারিংয়ে মিলতে পারে। এছাড়াও গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ভোজালি থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা তথ্য পেতে পারেন বলে আশা করছে পুলিশ।
খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জেনেছে, গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে কুন্দনকে খুন করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, গাড়িতে ওঠার পর কিছুদুর এসেই চালকের আসনের পাশে যিনি বসেছিলেন তিনিই কুন্দনকে খুন করেন। অন্যরা তাকে সহযোগিতা করে। এরপর তাঁর দেহটি পিছনের সিটের দিকে নিয়ে রেখে দেওয়া হয়। পরে দুষ্কৃতিরাই গাড়িটি চালিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করেন। পথে বর্ধমানের বেচারহাটের কাছে তার দেহটি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে তারা গাড়ি নিয়ে চম্পট দেবার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতিরা মদ্যপও ছিল। কিন্তু গলসীর নলার কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি বাঁদিকে পরপর ধাক্কা মারতে থাকে। তাতেই সামনের বাঁ দিকের চাকা ফেটে যায়। এরপরই গাড়িটিকে ফেলে দিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতিরা। ঘটনার সঙ্গে গাড়ি চুরি চক্র জড়িত। তবে, গাড়ি নিয়ে অন্য কোনও অপরাধ করার পরিকল্পনা দুষ্কৃতিদের ছিল কি না তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। খুনিদের বিষয়ে তথ্য পেতে বিভিন্ন থানায় গাড়ি চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছে বর্ধমান থানার পুলিশ। এছাড়াও তদন্তে সিআইডির সাহায্যও নিচ্ছে পুলিশ। গাড়ি চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে সিআইডির কাছে থাকা তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ভোটার সচিত্র পরিচয় পত্রে থাকা দুষ্কৃতিদের ছবি খুনের কিনারায় পুলিশের ভরসা। তবে, ঘটনার বিষয়ে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ দেওয়া পর্যন্ত পুলিশের অপেক্ষা করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে বর্ধমান থানার বেচারহাট এলাকায় জাতীয় সড়কের পাশে একটি হিমঘরের কাছ থেকে কুন্দনের দেহ উদ্ধার হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। মৃতদেহের পাশ থেকে তার মোবাইলটি মেলে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গলসির নলা গ্রামের কাছ থেকে কুন্দনের গাড়িটি উদ্ধার হয়। গাড়িটির একদিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ভেঙে যায়। তা থেকে পুলিশের অনুমান, পালানোর সময় দুর্ঘটনায় পড়ার পর ইনোভা গাড়িটি ফেলে রেখে চম্পট দেয় কুন্দনের খুনিরা।