E Purba Bardhaman

গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে ভোট পরবর্তী সংঘর্ষ, তীব্র উত্তেজনা

Clashes after the election. - TMC vs Others. Injured Police. At Baburbag, Burdwan Town (2)

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ভোট পরবর্তী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে অনুব্রতের গড় আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ক্রমশই বাড়তে শুরু করল। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ছোড়া কলোনীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিজেপি তৃমুল সংঘর্ষে গোটা এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠল। উত্তেজনা থামাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হলে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি সমর্থকদেরও সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়। এই ঘটনায় ৬ জন বিজেপি কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিজেপি সূত্রে দাবী করা হয়েছেমঙ্গলবার সকালে ছোড়া কলোনীর দুই বিজেপি সমর্থক হাটে যাবার সময় তাদের স্থানীয় তৃণমুল পার্টি অফিসে আটকে বেধড়ক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে বিজেপি সমর্থকরা তৃণমুলের ওই পার্টি অফিস ভাচুর করে। পালটা তৃণমূল সমর্থকদেরও মারধর করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকেআউগ্রামের পান্ডুকেপ্রদীপ বক্সী নামে বিজেপি কর্মীকে টাঙি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে তৃমূলের বিরুদ্ধে। মারধর করা হয়েছে তাঁর বাবামাকেও। প্রদীপ বক্সী অভিযোগ করেছেনযেহেতু তিনি বিজেপির এজেণ্ট হিসাবে বুথে ছিলেন। তাই সোমবার ভোট শেষ হয়ে যাবার পর তিনি যখন পাণ্ডুক হাটতলায় তাঁর সেলুনের দোকান খুলতে যান সেই সময় দোকান খুলতে বাধা দেয় তৃণমূলের সমর্থকরা। তৃণমূলের নেতারা সাফ জানায়বিজেপি করলে দোকান খোলা যাবে না। তিনি তার প্রতিবাদ করলে তাকে ব্যাপক মারধর করতে শুরু করে। তাঁকে বাঁচাতে তাঁর বাবামা ছুটে এলে তাঁদেরও মারধর করে। আউশগ্রামের এড়াল অঞ্চলেও তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এরই পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার শিকারপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল গোটা এলাকা। সোমবার ভোট শেষ হয়ে যাবার পর তৃণমূলের কয়েকজন স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে থাকার সময় সেখানে ফজলে করিম নামে তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর নেতার নেতৃত্বে একদল তৃণমূল সমর্থক তাদের ওপর চড়াও হয়। ৪ জন জখম হয়। তাদের মধ্যে সেখ হায়দার আলি নামে তৃণমূলের এক এজেণ্টকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখ নাজিমূল হক এবং সেখ হাফিজুল হক নামে আরও দুজন তৃণমূল কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিকারপুর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। অপরদিকে অভিযোগ, পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ২৭৩ নং বুথে কাল বেপরোয়া ছাপ্পা ভোট দিয়েছে শাসকদল। তা নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুফল পাননি। এই ঘটনায় গোটা মঙ্গলকোট জুড়েই তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। তারই মাঝে মঙ্গলকাটোর জালপাড়া এলাকায় বিজেপির এক কর্মীকে তৃণমূল সমর্থকরা মারধর করায় তার প্রতিবাদে বর্ধমান সিউড়ি রোড অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকরা। অন্যদিকেসোমবার রাতে বর্ধমান শহরের খাঁপুকুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। যদিও বিজেপি অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেএটা তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা। একইসঙ্গে সোমবার সন্ধ্যে থেকেই বর্ধমান শহরের গোদা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ,পার্টি অফিসবাড়ি ভাংচুরের পাশাপাশি মহিলাদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। এই ঘটনায় এক মহিলা সহ ৪জন আহত হয়েছেন। আহত মমতাজ বেগম ওরফে মম বেগমকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই বর্ধমান শহরের ২৭ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল এবং শাসক বিরোধী দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে গোটা এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে একটি বাইকও। সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছেন তিন পুলিশ কর্মী। এই ঘটনায় বর্ধমান পুরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলার বসির আহমেদ ওরফে বাদশার সঙ্গে পুলিশের বচসার জেরে তাঁকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। রাতে বসির আহমেদ-সহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান এলাকায় তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন আহত হয়েছে। এদিকেভোট পরবর্তী ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকায় রীতিমত দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে সব রাজনৈতিক শিবিরেই। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেনরাজ্যের শাসকদল ভোটের পরই বুঝতে পেরে গেছেতারা হারছে। আর তাই নির্বিচারে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে। অপরদিকেতৃণমূলের বর্ধমান শহর সভাপতি অরূপ দাস জানিয়েছেনযে ঘটনাগুলি ঘটেছে তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস জড়িত নয়। দুষ্কৃতিরাই এই কাজ করেছে। অপরদিকে,সোমবার রাতে জামালপুরের তেলিনুড়িতে বিজেপি পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ৪জনকে ২দিনের পুলিশী হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। বাকিদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Exit mobile version