E Purba Bardhaman

আবাস যোজনায় তৃণমূল নেতাদের নাম উঠে আসতেই আবেদন খারিজ করার হিড়িক বর্ধমানে

Pradhan Mantri Awas Yojana list includes names of ineligible Trinamool Congress leaders, the leaders are petitioning to cancel all those names.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তথা বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে একের পর এক রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের নাম উঠে আসার ঘটনায় গোটা জেলা জুড়েই শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। আর জনরোষের আঁচ পেয়েই এবার গোটা জেলা জুড়েই শুরু হয়ে গেল তৃণমূল নেতাদের আবেদন ফিরিয়ে নেবার হিড়িক। খোদ তৃণমূলের গ্রামাঞ্চলের নেতারাই আশংকা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন – বাম আমলে রেশন কেলেংকারীর ঢঙেই বিরোধীরা ‘দাঙ্গা’ বাধাতে চাইছে এই আবাস যোজনায়। আর সেই আতংকেই এবার সরাসরি তৃণমূল নেতারা নিজেরাই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি তথা ব্লক অফিসে হত্যে দিয়ে পড়ছেন নিজেদের নাম কাটাতে। গোটা জেলা জুড়েই এই চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করেছে। আর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার এই দুর্নীতি নিয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রীতিমত জোরদার প্রচারে নামার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। এদিকে, আবাস যোজনার বাড়ি পেতে তৃণমূল নেতাদের এই দুর্নীতির মাঝেই নতুন সংযোজন হল পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রত্না মোহন্তের নাম। অভিযোগ পাকা বাড়ি থাকতেও আবাস যোজনায় নাম রয়েছে তাঁর। আর রাজ্যজুড়ে আবাস যোজনা নিয়ে ক্ষোভের আগুন উপলব্ধি করতে পেরে আগে ভাগেই নিজেই নাম বাতিলের আবেদন করলেন তিনি বিডিওকে। রত্না মোহন্ত জানিয়েছেন, ২০১৬-২০১৭ সালে যখন আবাস যোজনার এই সার্ভে হয় তখন তাঁর একটি মাটির বাড়ি ছিল। বর্তমানে তিনি পাকা বাড়ি করেছেন। তাই তাঁর জায়গায় যাতে অন্য কোনো দুঃস্থ মানুষ এই সুযোগ পায় তার জন্যই তিনি নাম বাতিলের আবেদন করেছেন। রত্না মোহন্ত বিডিওকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রায়না ১ ব্লকের তালিকায় ৬৮১ নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর। উল্লেখ্য, রত্না মোহন্ত রায়না ১ ব্লকের নতু অঞ্চলের হরিপুরের বাসিন্দা। সেখানেই তাঁর পাকা বাড়ি আছে। রায়না ১-এর বিডিও রিমিল সোরেন জানিয়েচেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আবেদন তাঁরা পেয়েছেন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, শুধু রায়নার রত্মা মোহন্তই নয়, বর্ধমান ১ ব্লকের রায়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়রাম এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য-সহ তাঁর আত্মীয় ৭জনের নাম রয়েছে এই আবাস যোজনার তালিকায়। খোদ পঞ্চায়েত সদস্য ফতেমা বিবি সেখের পাশাপাশি এই আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর মা মনোহারা সেখ, ফতেমা বিবির বোন রেহিমা খাতুন, বোন আলিমা বিবি, তাঁর দিদি আজিফা বিবি সেখ, ফতেমা বিবির ভাইয়ের স্ত্রী চাঁদনি সেখ এবং ফতেমা বিবির কাকিমা সেখ সাইরিনার নামও। যা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার খোদ ফতেমা বিবি জানিয়েছেন, যখন এই সার্ভে হয়েছিল তখন তাঁদের সকলেরই অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু এখন সকলেরই পাকা বাড়ি হয়ে গেছে, তাই তাঁর এবং তাঁর আত্মীয়দের নাম এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এদিকে, লাগাতার রাজ্যের শাসকদলের নামে আবাস যোজনার বাড়ির তালিকা প্রকাশ্যে আসা সম্পর্কে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক সুধীর রঞ্জন সাউ জানিয়েছেন, তাঁরা তো অনেকদিন ধরেই এই দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছিলেন। তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরাই তো কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার কথা বলছিলেন। এখন দিনের আলোর মতই সব পরিষ্কার সামনে চলে আসছে। গোটা রাজ্যটাকে দুর্নীতির স্তুপে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের নেতারা এতদিন কেন চুপ করেছিল। এখন ভয়ে নিজেদের নাম বাদ দিতে চাইছে। সুধীরবাবু জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এটাই তাঁদের কাছে মূল প্রচারের জায়গা। সাধারণ মানুষ তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি, কাটমানির বহর দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা সেটাই তুলে ধরবেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, আবাস যোজনার এই তালিকা সম্পর্কে ৫টি স্তরে যাচাইয়ের কাজ হচ্ছে। কোনোভাবেই কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন মেনেই কাজ করা হচ্ছে। প্রকৃত প্রাপকরাই এই সুযোগ যাতে পান সেটাই তাঁরা নিশ্চিত করতে চাইছেন।

Exit mobile version