গ্রামে গ্রামে চলতে থাকা কাটমানির আঁচ এবার বর্ধমান শহরেও
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কাটমানি কাণ্ডের আঁচ এবার বর্ধমান শহরেও আছড়ে পড়ল। বর্ধমান শহরের দাপুটে এক তৃণমূল নেতাকে দফায় দফায় মারধর করার ঘটনায় রীতিমত গোটা শহর জুড়েই তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হল। অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে হলেও এর সঙ্গে বিজেপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিজেপি দাবী করেছে। তাঁদের দাবী, এটা জনরোষের ফল। বর্ধমান শহরের ১২ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার পম্পা পালের স্বামী অনন্ত পালকে দফায় দফায় মারধর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, বাম আমলের শেষ দিকে বর্ধমান শহরের সিপিএমের দাপুটে নেতাদের মারধর করে তৃণমূলে নিজের জায়গা অধিকার করেন অনন্ত পাল। অনন্ত পাল জানিয়েছেন, রবিবার রাতে তাঁর এলাকায় কয়েকজন তৃণমূল নেতা কর্মীকে মারধর করে বিজেপি সমর্থকরা। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকেও ব্যাপক মারধর করা হয়। এই বিষয়ে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর সোমবার সকালে তিনি যখন তাঁর ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে আসেন। সেই সময় ফের বিজেপির সমর্থকরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে তাঁকে বাঁচাতে তৃণমূলের কর্মীরা এগিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। এর মধ্যে সারথী দত্ত নামে এক তৃণমূল মহিলা কর্মীকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, এই ঘটনায় এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বর্ধমান থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষী বিজেপি সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা না হলে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের হাতেই আইন তুলে নেবে বলে এদিন হুঁশিয়ারীও দেন তৃণমূলের নেতারা। বক্তব্য রাখেন খোকন দাস, ইফতিকার আহমেদ, আব্দুর রব প্রমুখরা।বর্ধমান থানার সামনে এদিন রীতিমত পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেন তৃণমূলের নেতারা। বর্ধমান থানার পুলিশকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে থানার সামনেই হুঁশিয়ারী দেন ইফতিকার আহমেদ। সরাসরি তিনি বলেন, সিপিএম আমলে একটা ছোট নেতার কাছেও পুলিশকে যেতে হত কুকুরের মত। কিন্তু তৃণমূল আমলে পুলিশ নেতাদের সম্মানই দিচ্ছে না। এদিকে, ইফতিকার আহমেদের পুলিশ সম্পর্কে এই বক্তব্যের পরই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁ খণ্ডঘোষের ওসি সম্পর্কে কটুক্তি করায় সৌমিত্রবাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে খণ্ডঘোষ থানায়। ফলে খোদ বর্ধমান থানার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশকে কুকুর বলে সম্বোধন করায় এখন পুলিশ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয় এখন সেটাই দেখার। অন্যদিকে, অনন্ত পালকে মারধরের ঘটনাকে সম্পূর্ণ এলাকার জনরোষেরবর্হিপ্রকাশ বলে জানিয়েছেন বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রবাল রায়। তিনি জা্নিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই অনন্ত পালের তোলাবাজি এবং দাদাগিরিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এই ঘটনায় এলাকার মানুষই তার প্রতিবাদ করেছে। এর সঙ্গে বিজেপির কোনো সম্পর্ক নেই। উল্লেখ্য, তৃণমূল মহিলা কর্মী সারথী দত্তের বিরুদ্ধে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই মনোনয়ন কেন্দ্রে ঢুকে বিজেপি প্রার্থীকে মারধর করে তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেবার অভিযোগ করেছিল বিজেপি। যদিও সেই অভিযোগ সারথী দত্ত অস্বীকার করেছিলেন। অপরদিকে, গ্রামে গ্রামে কাটমানির টাকা ফেরতের দাবীতে বিক্ষোভের জের চলছেই। সোমবারও পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে, গলসী থানার খানোতে কাটমানির টাকা ফেরত গিয়ে রীতিমত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সোমবার গলসীর খানো গ্রাম পঞ্চায়েতে কাটমানি খাওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালো বিজেপি। প্রধান ও উপপ্রধান এর সাথে স্থানীয় বিজেপির কিছু নেতারা বৈঠক করেন ও ডেপুটেশন দেন। বিজেপির অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ, বাংলার আবাস যোজনার টাকা, ঠিকাদারী কাজে প্রচুর কাটমানি টাকা খেয়েছে পঞ্চায়েতের সদস্যরা। বিজেপি নেতৃত্বের দাবী, এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি ১০ দিন সময় নিয়েছেন বিষয়টি দেখার জন্য। বিজেপির তরফ থেকে হুঁশিয়ারী দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যদি এই বিষয় গুলির সমাধান না হয় তাহলে পঞ্চায়েতে তাঁরা তালা ঝুলিয়ে দেবেন।