বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ওপর তৃণমূলের হামলার অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা বর্ধমানের বাবুরবাগে
admin
বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ফের বিজেপি তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ এলাকা। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দফায় দফায় দুপক্ষের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বাবুরবাগ এলাকায়। সম্প্রতি ২৬নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বসিরউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এরপর নির্বাচনপর্ব শেষ হতেই ফের বিজেপি তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ালো গোটা এলাকায়। মঙ্গলবার বিজেপির পতাকা এবং লাড্ডু বিলিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বর্ধমান শহরের ২৬ ও ২ নং ওয়ার্ডের বাবুরবাগ নার্স কোয়ার্টার এলাকা। বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সভাপতি শ্যামল রায়ের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা বিজেপি দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে লাড্ডু বিলি করছিলেন। একইসঙ্গে নার্স কোয়ার্টার এলাকায় বিজেপির দলীয় পতাকাও টাঙান। শ্যামল রায়ের অভিযোগ, এদিন সকালে বাথান পাড়ার তৃণমূল সমথর্কেরা বিজেপির ২৬নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার বসিরউদ্দিন আহমেদ ওরফে বাদশা এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা কানাই মির্জার নেতৃত্বে বিজেপি সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। বিজেপি সমর্থকদের মারধর ছাড়াও বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। হামলার হাত থেকে রেহাই মেলেনি মহিলারাও। এমনকি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের কোয়ার্টারেও হামলা চালান হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, এই ঘটনার পরই বিজেপির সমর্থকরা বর্ধমান থানা ঘেরাও করেন। তাঁরা দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বর্ধমান থানার সামনে রাস্তাও অবরোধ করেন। পরে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয়।বিজেপির সমর্থকরা দাবী জানান, অবিলম্বে বসিরউদ্দিন আহমেদ এবং কানাই কাজিকে গ্রেপ্তার করতে হবে। মূলত এই দাবীকে সামনে রেখেই এদিন থানা এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শ্যামল রায় এদিন জানিয়েছেন, রাত পোহালেই পবিত্র ঈদের অনুষ্ঠান। তাই তাঁরা নিজেদের সংযত রেখেছেন। কিন্তু যেভাবে তৃণমূলের নেতারা সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে শুরু করেছে তাতে পুলিশ প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বর্ধমান জুড়েই পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাবে। তিনি জানান, পুলিশ প্রশাসনের ওপর তাঁদের আস্থা আছে। কিন্তু সেটাকে দুর্বলতা ভাবলে চলবে না। তিনি জানান, ঈদের পরই পুলিশ এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিজেপিই রাস্তায় নামবে। অন্যদিকে,এব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, তৃণমূল সমর্থকরা কোথাও বিজেপি সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে তিনি কোনো খবর পাননি। তিনি দাবী করেছেন,বিজেপিই জেলা জুড়ে তৃণমূলের ওপর হামলা চালিয়েছে। তৃণমূলের বহু পার্টি অফিস দখল করে নিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে তাঁরা তালিকা জমা দিয়েছেন। একইসঙ্গে ঈদের পরই তাঁদের পার্টি অফিস পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে তাঁরা পথে নামছেন। যদিও এদিন দুপক্ষের বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যের মাঝেই বিজেপি কর্মীরা জানিয়েছেন, লাগাতার তাঁরা মার খেয়ে চলেছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন। বাড়ির মহিলাদের সম্ভ্রম নিয়ে তৃণমূল ছিনিমিনি খেলছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ না হলে তাঁরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। এদিন সন্ধ্যায় বিজেপি সমর্থকদের উপর হামলার পাল্টা বাবুরবাগ এলাকায় এক তৃণমূল সমর্থকের গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষত্রে অভিযোগ ওঠে বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বর্ধমান থানার পুলিশ। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কয়েকজন বিজেপি সমর্থককে পুলিশ আটক করেছে।এদিকে, পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় গোটা এলাকায় পুলিশী টহলদারী শুরু হয়েছে।