বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কলেজে ভর্তি নিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ নিয়ে যখন গোটা রাজ্যের তরজা চরমে সেই সময় পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ অভিনব উদ্যোগ নিল বুধবার থেকে। এদিন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে বর্ধমান শহরেরে উইমেন্স কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজে যান পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। তোলাবাজি এবং ভয়ভীতি দূর করে সুস্থভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পুলিশ আধিকারিকরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেন। খোদ জেলা পুলিশ সুপার নিজে বর্ধমান রাজ কলেজে যান। এদিকে, গোটা রাজ্য জুড়ে যখন কলেজে ভর্তি নিয়ে তোলাবাজির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা থেকে কলেজ কর্মীরা, সেই অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রাক্তন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি নুরুল হাসানের সোস্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোষ্ট করাকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য এবং বিতর্ক দেখা দিয়েছে। নুরুল হাসান বর্তমানে বর্ধমান জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যও। নুরুল হাসান ফেস বুকে লিখেছে্ন – ” ১৯৯৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি বর্ধমান জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন। ছিলেন ১৩ বছর (১৯৯৮ – ২০১১) অবিভক্ত বর্ধমান জেলার (পূর্ব ও পশ্চিম) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি। প্রথম প্রথম কলেজে কলেজে পৌঁছানোই ছিল দুষ্কর, এসএফআই আর সিপিআইএম এর লাগামহীন সন্ত্রাসে কলেজে ঢোকাই যেত না। তবুও জেদ ছিল যেমন করেই হোক বর্ধমান জেলার সমস্ত কলেজে ঢুকবেন এবং ইউনিট করবেন। প্রথমেই সফল হননি। নুরুল হাসান লিখেছেন, ”অনেক আঘাত, অত্যাচার, ভয়ানক অত্যাচার সহ্য করতে করতে এক সময়তো আমি মরে গেছি ভেবে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলো এসএফআই এর হার্মাদরা।” লিখেছেন – ” বর্ধমান জেলার সমস্ত কলেজে ইউনিট করেছিলাম, আস্তে আস্তে সমস্ত কলেজে ছাত্র সংসদ দখল করে ছিলাম। কত সুন্দর তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তৈরী করে ছিলাম। নিজেরা টাকা জোগাড় করে ছাত্র ভর্তি করে দিতাম। কখনও জেলার সিনিয়র নেতাদের বলেছি দাদা ঐ ছাত্র বা ছাত্রীটি টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না কিছু টাকা জোগাড় করে দাও না ভর্তি করে দিই। তাঁরা করেছে এবং ভর্তি করেছি এ বিষয়ে নাম না করলেই নয় উত্তম সেনগুপ্ত, প্রনব চ্যাটার্জি,গোলাম জার্জীস। কখনও ভাবতেই পারিনি ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভর্তি করাবো। আর এখন কিছু অযোগ্য ছাত্র নেতৃত্বের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। আমি তাপস রায়, বৈশ্বানর চট্যোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, সোনালী গুহ, সৌরভ চক্রবর্তী, শঙ্কু পান্ডা এদের নেতৃত্বে জেলায় ছাত্র রাজনীতি করেছি। শেষের জন আর শেষের জনের পর যাকে রাজ্যে দায়িত্ব দেওয়া হলো এরাই শুরু করে দিল জেলায় জেলায় কিছু তাবেদার তৈরী করে নেত্রীর আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে টাকা তোলার কাজ। এদের তাবেদারগুলোকে সরিয়ে যোগ্য ছেলেদের দায়িত্ব দিলে এগুলো হবে না। বৈশ্বানর চ্যাটার্জি, অরূপ বিশ্বাস, সোনালী গুহ, সৌরভ চক্রবর্তীরা যখন জেলায় আসত, লোকাল ট্রেনে চেপে আসত, স্টেশন থেকে কখনও রিক্সা কখনও মোটর সাইকেলে নিয়ে ঘুরেছি। শেষের জন চার পাঁচটা সিকিওরিটি নিয়ে বিলাস বহুল চার চাকা গাড়িতে কলেজে কলেজে ঘুরতে লাগল। আর এই খান থেকেই শুরু হয়ে গেল খেলা। শিক্ষকেরাও ছাত্র নেতা। যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে জেলায় নিজের হাতে করে তৈরী করেছি সেটাকে ঠিক করার মতো আমার আর বলার কোন জায়গা নেই তাই এখানেই বললাম ভুল হলে ক্ষমা করবেন।” এদিকে নুরুল হাসানের এই বিস্ফোরক পোষ্টকে গোটা জেলা জুড়েই তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর এই পোষ্টের পর একাধিক তৃণমূল নেতা থেকে কর্মীরাও কয়েকশো পোষ্ট করেছেন তাঁকে সমর্থন করে।