বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শেষ মুহূর্তে একেবারে চমকে দিয়ে গেলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি দেবু টুডু। ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বামেদের হাত থেকে তত্কালীন বর্ধমান জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ৭৫টি আসনের মধ্যে ৬৮ টিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ৭টিতে বিজয়ী হয় সিপিএম। এরপর গত ৫বছরে বিরোধী সিপিএমের সদস্যদের অনেকেই তৃণমূল কংগ্রেসে চলে আসে। একবছর আগে বর্ধমান জেলাকে ভাগ করা হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ গঠিত হয় ৫৮টি আসন নিয়ে। সদ্য শেষ হওয়া ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ৫৮টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে আসন সংরক্ষণের ফলে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসন মহিলা হিসাবে চিহ্নিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই বামেদের হাত থেকে দখল নেওয়া তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের সভাধিপতি হিসাবে দেবু টুডুর মেয়াদও শেষ হল শনিবার। আর এদিনই তিনি আগামী নতুন বোর্ডের জন্য দুটি বড় কাজ করে গেলেন আনুষ্ঠানিকভাবে। গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদে এদিন থেকে চালু হল সৌরচালিত বিদ্যুত উত্পাদন। ফলে চলে যাবার আগে বিদায়ী বোর্ড গোটা জেলা পরিষদকেই ২৪ ঘণ্টার জন্য আলোকময় করে দিয়ে গেল। উপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, সহকারী সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় সহ জেলা পরিষদের বিদ্যুত বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোঁয়ার, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গার্গী নাহা, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম, মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ মন্দিরা দলুই প্রমুখরাও। বিদায়ী বোর্ডের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে জেলা পরিষদ দিয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সৌর বিদ্যুত প্রকল্প অনুসারে এই খরচের পর সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে পাওয়া যাবে। ওই টাকায় বাড়তি সৌর শক্তির কাজ করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের প্রতি ৩ মাস অন্তর ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বিদ্যুত বিলের জন্য খরচ হত। এই সৌর বিদ্যুত উত্পাদনের ফলে প্রথম দিকে বিদ্যুত খরচের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ টাকা সাশ্রয় হবে যা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের মধ্যে প্রথম পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ নিজেরা এই বিদ্যুত উত্পাদনের কাজ করল। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় জেলা পরিষদে। ছুটির দিনগুলিতে এই সৌরবিদ্যুত যা উত্পাদন হবে তা বিদ্যুত দপ্তরকে দেওয়া হবে। এদিকে, এরই পাশাপাশি তিনি এদিন ঘোষণা করেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই জেলা পরিষদকে এয়ারকণ্ডিশন করার দাবী জানিয়ে আসছিলেন কর্মচারী থেকে জনপ্রতিনিধিরাও। তীব্র গরমের জেরে কাহিল হয়ে পড়ছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিদ্যুত খরচের কথা মাথায় রেখেই এব্যাপারে জেলা পরিষদের অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, সৌর বিদ্যুত উত্পাদনের ফলে জেলা পরিষদকে এয়ারকণ্ডিশন করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না। তিনি জানিয়েছে্ন, আগামী নতুন বোর্ড এব্যাপারে অনায়াসেই উদ্যোগ নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, সভাধিপতি এদিন জানিয়েছেন, বাম বোর্ডের হাত থেকে যেদিন তাঁরা এই জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেদিন কেবলমাত্র পূর্ত দপ্তরের কাঁধেই ছিল ২৫ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ। ধাপে ধাপে জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে সেই টাকা তাঁরা শোধ করেছেন। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে জেলা পরিষদের সভাঘরকে এয়ারকণ্ডিশন করে ভাড়া বৃদ্ধিও করেছেন। ফলে আয় বড়েছে। সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লিফটও। তিনি জানিয়েছেন, নতুন যে বোর্ড ক্ষমতায় আসবেন অন্তত তাদের কোনো বকেয়া ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষমতায় বসতে হবে না – এটাই তাঁরা নিশ্চিত করে দিয়ে গেলেন।