গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বন্ধু ও সহকর্মীকে খুনের ঘটনায় ধৃত রাইসমিল কর্মী বিকাশ গড়াইকে হেফাজতে নিল পুলিস। বৃহস্পতিবার সকালে সে বর্ধমান থানায় আত্মসমর্পন করে। ঘটনার বিষয়ে. রাইসমিলের ধান পরীক্ষক সজল মণ্ডল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে বিকাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। খুনের কথা ধৃত কবুল করেছে বলে পুলিসের দাবি। পেশাগত ঈর্ষা থেকে সে সহকর্মী টুটুল মণ্ডলকে খুন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় ধৃত। পাইপ রেঞ্জ ও ছুরি দিয়ে টুটুলকে খুন করা হয় বলে জেনেছে পুলিস। শুক্রবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। খুনে ব্যবহৃত রেঞ্জ ও ছুরি উদ্ধারের জন্য এবং ঘটনার পুনির্নর্মাণ করতে ধৃতকে ৫ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। ধৃতকে ৩ দিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম কোয়েল প্রধান।
পুলিস জানিয়েছে, বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জ এলাকার একটি রাইসমিলে কাজ করত টুটুল। সেখানেই কাজ করে বিকাশ। মাস আটেক আগে টুটুলকে কাজ করার জন্য রাইসমিলে নিয়ে আসে বিকাশই। সে মিলে শ্রমিকের কাজ করত। শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি থাকায় টুটুলকে ধান পরীক্ষক হিসাবে নিয়োগ করে মিল কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাত ৯ টা নাগাদ মিলের মেস ঘরের মেঝেয় রক্তাক্ত অবস্থায় টুটুলকে পড়ে থাকতে দেখেন সহকর্মী সজল। খবর পেয়ে. পুলিস টুটুলকে বর্ধমান মে.ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্তে নেমে পুলিস জেনেছে, তার চেয়ে উঁচু পদে টুটুল কাজ করায় বিকাশের মনে ঈর্ষা দেখা দেয়। সে বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। সেজন্য কাজ ছাড়ার জন্য টুটুলকে বলে সে। এনিয়ে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। টুটুলকে কয়েকবার খুনের হুমকিও দেয় বিকাশ। এমনকি গ্রামের বাড়িতে গিয়েও টুটুলকে কাজ ছাড়ার জন্য শাসায় সে। তাতে কাজ না হওয়ায় টুটুলকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় সে। তবে, তার এই পরিকল্পনার বিষয়ে সহকর্মীরা ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেনি। মিলে কাজ করার সময় টুটুলের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক রেখে চলত বিকাশ। তবে, টুটুল নিচু পদে কাজ করার জন্য বিকাশকে মাঝে মধ্যে হেয় করত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে পুলিস। ঘটনার দিন মোবাইলে পেটিএম অ্যাপস লোড করার কথা বলে টুটুলকে মেসে ডেকে আনে বিকাশ। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মেসে আসে টুটুল। তারপর তারা দু’জনের ঘরে ঢুকে যায়। রাত ৯টা নাগাদ খাওয়ার জন্য দু’জনকে ডাকতে যান সজল। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে টুটুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। বিকাশ খুন করে সাইকেলে চেপে পালিয়ে যায়। মোবাইলে অ্যাপস ডাউনলোড করার সময় আচমকা টুটুলের মাথায় ভারি রেঞ্জ দিয়ে কয়েকবার আঘাত করা হয়। তিনি লুটিয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর গলায় বিকাশ এলোপাথারি ছুরির কোপ বসায় বলে পুলিসের অনুমান।