গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মেমারি থানার একটি মামলায় জামিন পেলেন আমানতকারীদের কোটি-কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত রোজভ্যালির কর্তা গৌতম কুণ্ডু। সোমবার তাকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। তার হয়ে আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তদন্ত সম্পূর্ণ করে পুলিস ইতিমধ্যেই চার্জশিট পেশ করেছে আদালতে। রোজভ্যালি কর্তাকে আর হেপাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নাই। পুলিস সরকারি অর্থ আত্মসাতের ধারায় (৪০৯আইপিসি) চার্জশিট পেশ করলেও এক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কারণ, সরকারি অর্থ আত্মসাত হয়নি। অভিযুক্ত সরকারি কর্মীও নন। সরকারি আইনজীবী নারদ কুমার ভূইঞা অবশ্য জামিনের বিরোধিতা করেন। ১ হাজার টাকার বন্ডে রোজভ্যালি কর্তার জামিন মঞ্জুর করেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারি থানার বাগিলার বাসিন্দা অমর ক্ষেত্রপাল ২০১০ সাল থেকে রোজভ্যালির মেমারি শাখায় প্রতি মাসে ৪২০ টাকা করে জমা করেন। দিন মজুরের কাজ করে জমানো টাকা তিনি রোজভ্যালিতে জমা করেন। সংস্থার তরফে তাঁকে রোজভ্যালি রিয়েল এস্টেট ও কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের শংসাপত্র দেওয়া হয়। রাজ্যে চিটফান্ড কান্ডের পর অমর মেমারি অফিসে গিয়ে টাকা তুলতে যান। তাঁকে শংসাপত্রটি জমা দিতে বলা হয়। তিনি তা সংস্থার অফিসে জমা দেন। তারপর নানা অছিলায় তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি টাকা ফেরত পাননি। বিষয়টি থানায় জানান তিনি। যদিও থানা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এসপিকে জানানোর পরও সক্রিয় হয়নি পুলিস। বাধ্য হয়ে ২০১৬ সালের ২৭ জুন বর্ধমান সিজেএম আদালতে মামলা করেন অমর। সিজেএম কেস রুজু করে তদন্তের জন্য মেমারি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তদন্তে নেমে পুলিস সংস্থার এজেন্ট উত্তম কুমার বাগকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের অনুমতি নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে রোজভ্যালি কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসার রামেশ্বর মাহাত। তদন্ত সম্পূর্ণ করে চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার। কিন্তু, ইডি, সেবি ও সিবিআইয়ের বিভিন্ন মামলায় অন্য আদালতে পেশ করার কারণে তাকে বর্ধমানে আনা যায়নি। উত্তম অবশ্য জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। জামিন পাওয়ার পর গৌতম বলেন, রোজভ্যালির যা সম্পত্তি আছে তাতে আমানতকারীদের টাকা ফেরত পেতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। হাইকোর্ট কমিটি গড়েছে। কমিটির কাছে সংস্থার সম্পত্তির হিসাব দেওয়া হয়েছে। সংস্থার সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরানো যাবে। তবে, রোজভ্যালির এই অবস্থার জন্য সারদার বিপর্যয়কে দায়ী করেছেন রোজভ্যালি কর্তা। এনিয়ে তিনি বলেন, সারদার বিপর্যয়ের পরই আমানতকারীরা টাকা তোলা শুরু করেন। রাজ্যজুড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ব্যাবসায় বিনিয়োগ করা টাকা চাহিদামতো আমানতকারীদের ফেরানো সম্ভব হয়নি। তার জন্যই রোজভ্যালির ব্যাবসায় বিপর্যয় নেমে আসে। তবে, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর এবং সংস্থার যোগাযোগের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি রোজভ্যালি কর্তা।