বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মুখ্যমন্ত্রীর ১ মাস সময়ের মাঝেই ফের দ্বিতীয় দফায় বর্ধমানে হকার উচ্ছেদকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ালো বর্ধমান শহরে। শুক্রবার বর্ধমান পুরসভা থেকে টাউনহল পর্যন্ত হকারদের রাস্তা ও ফুটপাত থেকে সরে যাবার জন্য মাইকিং করা হয়। একইসঙ্গে বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুরসভার পুরপ্রধান পরেশ সরকার, একাধিক কাউন্সিলার এবং পুলিশ আধিকারিকরাও এদিন রাস্তার দুপাশে রাস্তা দখল করে অস্থায়ী ছাউনি সরিয়ে নেবার আবেদন জানাতে থাকেন। শুধু হকাররাই নয় অনেক ‘বৈধ’ দোকানদারও বেআইনি ভাবে রাস্তা, ফুটপাত বা সরকারি জমির অংশ দখল করে রেখেছেন। তাঁদেরকেও এদিন সতর্ক করা হয়। এদিন এই অভিযানে সামিল করা হয় একটি পে-লোডার মেসিন সহ পুরসভার ডাম্পার এবং একটি ট্রলি সহ ট্র্যাক্টরও। বর্ধমান পুরসভা থেকে জিটি রোড বরাবর এই অভিযান চলার মাঝেই কিছু অস্থায়ী ছাউনিকে ভাঙা শুরু হয়। এরপর কার্জন গেট পার হয়ে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের সামনে ফুটপাতের দোকান ভাঙতে গেলে বর্ধমানের টাউনহল পাড়ার বাসিন্দা মিনু ঘোষ রীতিমতো ফুঁসে ওঠেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, চাইনা মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। তাঁর স্বামী প্রবীর ঘোষ দাবি করেন, ১৯৭৩ সাল থেকে তাঁরা ফুটপাতে এই চায়ের দোকান করছেন। এর ওপরই তাঁর পরিবার চলে। তাঁর দুই ছেলে পড়াশোনা করছে। এই দোকান তুলে দেওয়ায় তাঁরা অথৈ জলে পড়লেন। মিনুদেবী জানিয়েছেন, কীভাবে সংসার চালাবেন, কোথা থেকে ছেলেদের পড়াশোনার খরচ জোগাবেন। শেষে বিষ খেয়ে মরতে হবে তাঁদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা কী করলেন। কেন তাদের তুলে দেওয়া হল বিকল্প ব্যবস্থা না করে। কোথায় যাবেন তাঁরা। দরকার নেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এক হাজার টাকা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে সারা মাসের রোজগার ছিনিয়ে নেওয়াকে ধিক্কার জানাই। হকারদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। এর ফল ভাল হবেনা। আগামী বিধানসভাতেই এর উত্তর পেয়ে যাবে। শুধু মিনু দেবীই নয়, এদিন দোকান ভাঙায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৌ বৈরাগ্য নামে এক মহিলাও। তাঁর ফুলের দোকান ছিল। এদিন পে-লোডার দিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান পরেশ সরকার জানিয়েছেন, বর্ধমান পৌরসভা থেকে বীরহাটা পর্যন্ত আজ রাস্তার দুপাশে যারা রাস্তার উপরে বা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছেন পৌরসভার সব কাউন্সিলার বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমা শাসক, পুলিশ, পৌর কর্মীরা মিলে তাদের সচেতন করা হয়েছে। মালপত্র সব সরিয়ে নিয়ে ফাঁকা করে দিতে বলা হয়েছে। রাস্তা দখল করে থাকায় মানুষের চলতে ফিরতে অসুবিধা হচ্ছে, যানজট হচ্ছে। সেইসব দখলকারী মানুষদের কাছে অনুরোধ করতে করতে এগিয়েছি আপনারা দখল ছেড়ে দিন আপনারা উঠে যান তা নাহলে বর্ধমানবাসি ৫-৬ লক্ষ মানুষ এবং প্রতিদিন শহরে আরও ১ থেকে দেড় লক্ষ মানুষ বিভিন্ন কাজে শহরে আসেন সকলের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ দোকানদার দখলদারি ছেড়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে সরে গেছেন। এটাই আমাদের সাফল্য। বাধা সেরকম কিছু আসেনি। নিজেরাই বুঝেছেন এটা ঠিক হচ্ছে না। কিছু কিছু মানুষ আছেন যাঁদের আয়ের উৎস এটাই, তাঁরা কী করবেন এই বিষয়টা পুরসভায় কাউন্সিলারদের নিয়ে তৈরি হওয়া কমিটি দেখছে। কীভাবে কী করা যায় সরকারিভাবে তা দেখা হবে। উল্লেখ্য, এই হকার উচ্ছেদ নিয়ে বর্ধমান পুরসভার ৪ জন কাউন্সিলার এবং পুরসভার এক কর্মীকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কাউন্সিলার সাহাবুদ্দিন খানকে। আহ্বায়ক করা হয়েছে পুরকর্মী তাপস মাকড়কে। এছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন কাউন্সিলার শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, মিঠু সিং এবং নুরুল আলম ওরফে সাহেব। আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁরা শহরের কোথায় কত হকার আছেন, কী ধরনের হকার বিস্তারিত তথ্য সহ রিপোর্ট জমা দেবেন। পরেশবাবু জানিয়েছেন, ওই রিপোর্ট আসার পর তাঁরা ১৩ জুলাই বৈঠকে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা কোনও বড়ো অভিযান করবেন না। তাঁরা শহর জুড়ে এদিনের মত অভিযান চালাবেন।