E Purba Bardhaman

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তালিকায় পূর্ব বর্ধমান জেলার ৩৮ হাজার নাম বাদ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বেকায়দায় শাসকদল

Shankari 1 Gram Panchayat Upa-Prodhan owns several luxurious houses but his name and several relatives name are in the Pradhan Mantri Awas Yojana list. A complaint box has been set up in the office of the District Magistrate of Purba Bardhaman for submitting complaints regarding irregularities in the Pradhan Mantri Awas Yojana.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই দিনকয়েক আগেই সুখবরটি এসেছিল যে, দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে বন্ধ থাকার পর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্য নতুন করে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বাড়ির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। স্বভাবতই খুশির হাওয়া তৈরী হয় গোটা জেলা জুড়েই। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই এই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে একের পর এক অনিয়মের নজীর সামনে উঠে আসতেই এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রীতিমত বেকায়দায় পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। কারণ গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অধীনে। আর বাংলা আবাস যোজনার সিংহভাগ রূপায়ণ হচ্ছে গ্রামেই। ইতিমধ্যেই জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের শাঁখারি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গীর সেখের বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি থাকার ঘটনা সামনে আসতেই হৈ চৈ শুরু হয়েছে। একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি থাকা সত্ত্বেও উপপ্রধান, তাঁর মৃত বাবা এবং স্ত্রীর নাম-সহ তাঁর আত্মীয়দের নাম আবাস যোজনার তালিকায় থাকা নিয়ে জেলা জুড়েই তীব্র চাপান উতোর শুরু হয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই উপপ্রধান এবং তাঁর আত্মীয়দের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। যদিও তাতে থামতে রাজী নয় বিরোধীরা। ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ জানিয়েছেন, এই তালিকা তৈরীর প্রথম ধাপ পঞ্চায়েতের। তারপর তা খতিয়ে দেখেন বিডিও। তারপর তা পাঠানো হয় কেন্দ্রে। তাহলে কিভাবে ওই উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতাদের নাম তালিকায় থাকল? সুধীরবাবু জানিয়েছেন, এখন কেন্দ্র সরকার চাপ দিতেই শুরু হয়েছে তদন্ত। কিন্তু বিজেপি জানতে চায় কিভাবে এই তালিকায় নাম তোলা হয়েছে? কারা এই নাম তুলেছেন? সুধীরবাবু দাবী করেছেন, যাঁরা এই তালিকায় নাম তুলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে কেলেংকারী সামনে আসলেও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন গোটা বিষয়টি দেখছে। কেউ অন্যায় করলে কোনোভাবেই তিনি পার পাবেন না। কোনো অনৈতিকভাবে বা অবৈধতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে কেলেংকারী সামনে আসতেই গোটা জেলা জুড়ে বিডিও অফিস, মহকুমা শাসকের অফিস এবং জেলাশাসকের অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম এবং কমপ্লেন বক্স। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট ৭৩৭ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগের সিংহভাগই বাড়ি পাওয়ার জন্য আবেদন পত্র। জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্লাস খাতে মোট ২ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়ির অনুমোদন ছিল। এখনও পর্যন্ত স্ক্রুটিনির পর এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৯৪ হাজারে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে বাদ যেতে চলেছে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার নাম। আর এনিয়েই শুরু হয়েছে বিস্তর চাপান উতোর। অপরদিকে, শাঁখারী ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গীর সেখ জানিয়েছেন, তিনি জানতে পারার পরই তাঁর নাম বাদ দিয়েছেন। জানা গেছে, জাহাঙ্গীর সেখ উপপ্রধান হলেও গত প্রায় ২ বছর ধরে পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে তাঁর বিরোধের জেরে তিনি পঞ্চায়েতে যাওয়াই ছেড়ে দেন। পরিবর্তে লালিপিলে ধান (দাগী বা খুঁতে ধান) কারবারে হাত পাকিয়ে ফেলেন। সরাসরি এই ধান রাইসমিলগুলি চাষীদের কাছ থেকে না কিনলেও জাহাঙ্গীর সেখ এই ধানই কমদামে চাষীদের কাছ থেকে কিনে ঘুরপথে রাইসমিলে বিক্রি করে প্রচুর অর্থের মালিক হন। কেবলমাত্র শাঁখারী ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশবপুর গ্রামই নয়, বর্ধমান শহরের খাগড়াগড় এলাকাতেও তিনি বাড়ি তৈরী করেছেন।

Exit mobile version