বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কার্যত গত প্রায় একবছরেরও বেশি সময় ধরে বর্ধমান শহরে যানজট মোকাবিলায় ইকো রিক্সায় লাগাম পড়ানোর চেষ্টার পর বুধবার এব্যাপারে কড়া সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই অবৈধ ইকোরিক্সা উচ্ছেদে অভিযানে নামারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বুধবার জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের উপস্থিতিতে পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, জেলা পরিবহণ আধিকারিক আবরার আলম, বর্ধমান পুরসভার পুরপতি ডা. স্বরূপ দত্ত, কাউন্সিলার খোকন দাস সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন খোকন দাস জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের যানজট মোকাবিলায় অবৈধ ইকোরিক্সাগুলিকে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যাঁরা এই ইকোরিক্সা চালাবেন তাঁদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইকো রিক্সাগুলিকে ধরতে পারলেও তা বাজেয়াপ্ত করার পর বিনষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন, জেলাশাসক জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শহরের অবৈধ ইকোরিক্সার বিরুদ্ধে অভিযানে নামা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ১৫ আগষ্ট থেকে বর্ধমান শহরের পুরসভা ও পরিবহণ নির্দিষ্ট মোট ২৭০০ ইকো রিক্সা ছাড়া অন্য কোনো ইকো রিক্সা চলতে দেওয়া হবে না। এই ঘটনায় ইকো রিক্সা চালক ও মালিকদের মধ্যে রীতিমত আতংক দেখা দিয়েছে বর্ধমান শহর জুড়ে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের যানজট মোকাবিলায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছেন। দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ইকো রিক্সার ইউনিয়ন সহ পুরসভা, পুলিশ প্রমুখদের সঙ্গে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, পুরসভা এবং জেলা পরিবহণ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে শহর জুড়ে একটি সার্ভে করা হয়। এরপরই শহরে ২৭০০ ইকো রিক্সাকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে তাদের টিন নাম্বার বা অস্থায়ী পরিচয় নাম্বার দেওয়ার কাজ শুরু হয়। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই ২৭০০ রিক্সাকেই দিন ও রাতে ভাগ করে নির্দিষ্ট রুটে চালানোর অনুমোদন দেওয়া হবে। ২৭০০ এই ইকো রিক্সার বাইরে যে সমস্ত ইকো রিক্সা রয়েছে সেগুলিকে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার কাজ শুরু হবে। আগামী ১৫ আগষ্টের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। অর্থাত আগামী ১৫ আগষ্টের পর থেকে ২৭০০ ইকো রিক্সার বাইরে অন্য কোনো ইকো রিক্সাকে চলতে দেওয়া হবে না। উল্লেখ্য, ইকো রিক্সায় লাগাম পড়াতে এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইকো রিক্সা চালাতে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় দিন ও রাতের জন্য নীল ও সাদা রংয়ের ইকো রিক্সা চালানোরও প্রস্তাব দেন। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন রাস্তাগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন রুটও তৈরী করেছে পরিবহণ দপ্তর। প্রতিটি রুটে দিন ও রাতে কতগুলি করে ইকো রিক্সা চলবে তা নিয়েও একটি পরিকল্পনা তৈরী করা হয়। কিন্তু এতকিছুর পরেও শহর জুড়ে পায়ে পায়ে ইকো রিক্সার দাপট কমানো যায়নি। একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাদের মদতে কমার জায়গায় বেড়েই চলেছে ইকো রিক্সা। কমবেশি বর্ধমান শহর জুড়ে কয়েক হাজার রিক্সা চলছে বলে জানা গেছে। এমতবস্থায় মাত্র ২৭০০ ইকো রিক্সাকে চলতে দেওয়া হলে বাকিদের বিষয়ে কি চিন্তাভাবনা প্রশাসনের তা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক দেখা দিয়েছে। একদিকে শহরকে যানজট মুক্ত করা অন্যদিকে, বেকারদের মুখের দিকে তাকিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা – এই দুইয়ের জটিলতায় রীতিমত হাঁসফাঁস অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে শহরের চেহারা। আর তার থেকে মুক্তি পেতেই অবশেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল বুধবার। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এরপর ইকো রিক্সা বিক্রি করলে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও তাঁরা কড়া ব্যবস্থা নেবেন। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই টিন নাম্বার পাওয়া এই ২৭০০ ইকো রিক্সার ১২০০ ইকো রিক্সার রেজিষ্টেশন হয়ে গেছে। বাকি টিন নাম্বার পাওয়াদের আগামী ১৫ আগষ্টের মধ্যে রেজিষ্টেশন করিয়ে নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে রীতিমত মুষড়ে পড়েছেন ইকো রিক্সা চালকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেক ধারদেনা করে গাড়ি কেনা ছাড়াও তাঁরা এই ইকো রিক্সা চালিয়েই সংসার প্রতিপালন করছেন। কিন্তু প্রশাসন এই ইকো রিক্সা বন্ধ করে দিলে তাঁরা পথে বসবেন। প্রশাসনের উচিত তাঁদের বিষয়টিও ভাবনাচিন্তা করা।