বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এ রাজ্যে মাদক কারবারের অন্যতম মূল মাথা মনিপুর থেকে ধৃত কঙ্গরাম যদু সিং ওরফে যদুমনি অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে আদালতে জানাল এসটিএফ। ধৃত মনিপুরের বিধানসভা নির্বাচনে জনতা দল ইউনাইটেডের হয়ে লড়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছে এসটিএফ। ধৃত এর রাজ্যে মাদক পাচারের অন্যতম কিংপিন। কোটি কোটি টাকার মাদকের কারবারে সে জড়িত। এমনকি তার বিরুদ্ধে ‘টেরর ফান্ডিংয়ের’ অভিযোগও রয়েছে বলে আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন এসটিএফের তদন্তকারী অফিসার তিলক বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দফার ৪ দিনের এসটিএফ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ধৃতকে সোমবার ফের আদালতে পেশ করা হয়। এসটিএফের আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ধৃত অত্যন্ত প্রভাবশালী। মনিপুরের আদালত তাকে সেখানকার সংশোধনাগারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এসটিএফকে নিের্দশ দিয়েছে। আদালতের অনুমতি ছাড়া যেন তাকে সেখানে পাঠানো না হয়। ধৃতের আইনজীবী অবশ্য জামিনের সওয়ালে বলেন, মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। দু‘পক্ষের সওয়াল শুনে ধৃতকে ১৪ দিন বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নিের্দশ দেন বর্ধমানের মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতের বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ। এখানকার আদালতের অনুমতি ছাড়া তাকে যেন কোথাও না পাঠানো হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বর্ধমান সংশোধনাগারের সুপারকে নিের্দশ দিয়েছেন বিচারক।
এসটিএফ জানিয়েছে, এ বছরের ১৬ জুলাই কাটোয়া থানার রাজুয়ায় গোলাম মুের্শদের বাড়িতে হানা দেয় এসটিএফ। বাড়ি থেকে ৯ কেজি ৭০০ গ্রাম আফিম উদ্ধার হয়। উদ্ধার হওয়া আফিমের বাজার মূল্য ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪০০ টাকা। হেরোইন তৈরিতে আফিম ব্যবহার করা হয়। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফ জানতে পারে, মনিপুরের বাসিন্দা সাজিদ হাসিম ও ইরেনবাং সামরজিৎ সিং এরা হেরোইন তৈরির কাঁচামাল আফিম মুের্শদকে পাচার করে। ঘটনায় মুের্শদ, আঙুর আলি, মিনারুল শেখ ও মিঠুন শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাজিদ ও ইরেনবাংকেও গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তাদের কাছে ২ কেজি ২৪০ গ্রাম আফিম উদ্ধার হয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, চক্রের মূল মাথা যদু মনি। মনিপুরে তার রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা রয়েছে। কাটোয়ার একটি গেস্ট হাউসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও রেজিস্টার সংগ্রহ করে এসটিএফ। তা থেকে জানা যায়, ৮ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কাটোয়ায় এসেছিল যদু মনি। তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকেও ঘটনার সময় কাটোয়ায় যদুমনির উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। সে-ই মূলত মনিপুর থেকে হেরোইন তৈরির কাঁচামাল আফিম কাটোয়ার কারবারিদের সরবরাহ করত বলে জানতে পারে এসটিএফ। ১৫ অক্টোবর মনিপুরে গিয়ে এসটিএফের সাব-ইনসপেক্টর সৌম্যদীপ মল্লিক যদুমনিকে মনিপুর সেন্ট্রাল জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসটিএফের আইনজীবী বলেন, ধৃতের কিছু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য তার ভিডিও ইমেজ নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে।