E Purba Bardhaman

বর্ধমান রেল ষ্টেশনের ৪নং প্ল্যাটফর্মে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসল রেল দপ্তর

Strict surveillance of the RPF & GRP is underway today following an accident on the bridge of the Burdwan Railway Station yesterday

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার বিকালে বর্ধমান ষ্টেশনে ৪ ও ৫ নং প্ল্যাটফর্মের সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল –তার থেকে শিক্ষা নিল রেলদপ্তর। একাধিক পরিকল্পনাও নেওয়া হল। শুক্রবার তাড়াহুড়ো করে বর্ধমান ষ্টেশনের ৪ ও ৫ নং প্ল্যাটফর্মের সিঁড়িদিয়ে উঠানামা করতে গিয়ে পরে গিয়ে এবং পদপিষ্ট হয়ে গুরুতর জখমহন প্রায় ১১ জন রেলযাত্রী। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও আতংকও ছড়ায় বর্ধমান ষ্টেশন এলাকায়। একইসঙ্গে রেল দপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নও দেখাদেয়। রেলদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, শুক্রবার বিকাল ৩টে ১০ নাগাদ ৪নং প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হয় পুরুলিয়া লোকাল ট্রেন। অন্যদিকে, ৩টে১৪ নাগাদ ৫ নং ষ্টেশনে ঢোকে ডাউন পূর্বা এক্সপ্রেস। ৩টে বেজে ২০ মিনিটে পুরুলিয়া প্যাসেঞ্জার ছাড়ার ঘোষণা করা হয়। আর এরপরই শুরু হয় ব্যাপক হুড়োহুড়ি। ৪নং প্ল্যাটফর্মে ২টি সিঁড়ি থাকলেও একটি সিঁড়িতে চলমান সিঁড়ি বসানোর কাজ চলতে থাকায় সেই সিঁড়িটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে একটিমাত্র সিঁড়িই খোলা ছিল এদিন। আর সেদিক দিয়েই পূর্বার প্যাসেঞ্জাররা উঠতে যান, অন্যদিকে ওপর থেকে প্যাসেঞ্জাররা নামতে থাকেন পুরুলিয়া লোকাল ধরার জন্য। এই সময় ব্যাপক ঠেলাঠেলির জেরে প্ল্যাটফর্মে আছড়ে পড়তে থাকেন প্যাসেঞ্জাররা। হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকেই পদপিষ্ট হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, বর্ধমান ষ্টেশনে ট্রেন আসা যাওয়ার ঘোষণা করা হয় একেবারে অন্তিম সময়ে। ফলে প্রতিদিনই এই হুড়োহুড়ি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। যাত্রীদের পক্ষ থেকে বারবার রেল দপ্তরের কাছে জানানো সত্ত্বেও কোনো সুরাহা হয়নি। এদিকে, শুক্রবার এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে রেলদপ্তর। বর্ধমান ষ্টেশনের একউচ্চ পদস্থ আধিকারিক এদিন জানিয়েছেন, তাঁরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। তার মধ্যে যেমন রয়েছে ট্রেনের ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়, তেমনি রয়েছে ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনের বিষয়টিও। শুক্রবারের ঘটনারপর জিআরপির পরামর্শ অনুযায়ী ৩টে বেজে ২০ মিনিটের পুরুলিয়া প্যাসেঞ্জারকে ৪নং প্ল্যাটফর্মের পরিবর্তে ভিড়ের চাপ সামলাতে  ৬ অথবা ৭ নং প্ল্যাটফর্মে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা করা হয় ১৫-২০ মিনিট আগে। এখন নতুন ভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ভাবা হচ্ছে – বর্ধমান ষ্টেশনমুখী লোকাল ট্রেন গাংপুর ষ্টেশনছাড়ার পরই বর্ধমান ষ্টেশনে ঘোষণা করা হবে, ওইট্রেনটি এরপর কোন পথে (কর্ডনা মেইন) এবং কখন যাবে? কোনও কারণে কোনও ট্রেনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে বিকল্প আরও একটি বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে। সেটি হল – কোনো লোকাল ট্রে্ন আসার পর সব যাত্রীরা নেমে যাবার পর (সিঁড়িদিয়ে উঠে যাবার পর) অর্থাৎ ট্রেন বর্ধমান স্টেশনে থামার ১০মিনিট পর ওই ট্রেনটি কোথায় যাবে তা ঘোষণা করা হবে। যাতে সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে ওঠানামা ঠেকানো যায়। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে বর্ধমান ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও ফুটব্রীজের ওপরে যে ডিসপ্লেবোর্ড রয়েছে সেগুলি কাজ না করায় নতুন করে ডিসপ্লে বোর্ড লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ২ থেকে আড়াই বছর ধরে পুরনো ডিসপ্লে পরিবর্তনের কাজ চলছে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আশা রয়েছে। এছাড়াও বড় ফুটব্রীজের ওপরে কাটোয়ার দিকে বড় জায়েণ্ট ডিসপ্লেবোর্ড লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বর্ধমান ষ্টেশনের ২ ও ৩ নং এবং ৮ নং প্ল্যাটফর্মে চলমান সিঁড়ি চালু হয়েছে। বর্তমানে ৪ও ৫ নং-এর কাজ শুরু হয়েছে। ৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগামীএক মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ হবে। এছাড়াও ১নং প্ল্যাটফর্মে চলমান সিঁড়ি বসানোর কাজ সবে মাত্র শুরু হয়েছে। মোট ৪টি চলমান সিঁড়ির জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, চালু হওয়া চলমান সিঁড়ির সবটাই ওঠার জন্য। এক একটা প্রায় ৪ ফুট চওড়া এই চলমান সিঁড়ি দিয়ে একই সময়ে ৩৫০জন যাত্রী উঠতে পারেন। এখন ২-৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যে সাধারণ সিঁড়ি রয়েছে তা ১২ ফুট চওড়া। নামা ও ওঠা যায়। ৪ ও ৫-এরসিঁড়িটি ৮ ফুট চওড়া। শুক্রবার এই সিঁড়িতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১নং প্ল্যাটফর্মের সাধারণ সিঁড়িটি প্রায় ১২ ফুট চওড়া। ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, আরও ৬টি নতুন চলমান সিঁড়ি যা ওঠানামা যাবে তার জন্য পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। ফলে মোট ১০ টি চলমান সিঁড়ি চালু হয়ে গেলে যাত্রীদের যে চাপ তা অনেকটাই কমার আশা করছেন তাঁরা। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান ষ্টেশনে প্রতিদিন ১ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে। প্রতিদিন ১৪৪ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে। এদিকে, শুক্রবারের দুর্ঘটনার পর শনিবার থেকে অতিরিক্ত জিআরপি ও আরপিএফের ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। তারা গোটা ষ্টেশন জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে ২ ও ৩, ৪ও ৫ নং প্ল্যাটফর্মের-এর সিঁড়ির মুখে, সিঁড়িতে এবং ওপরে রয়েছেন। আরপিএফ নিজে আলাদা করে প্রচার করছে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ও নামার সময় বাঁদিক ব্যবহার করার জন্য।

Exit mobile version