বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ভারত বনধে রাস্তায় নেমে সাধারণ মানুষ তাদের অভিমত ব্যক্ত করতে না পারলেও মানষিকভাবে ভারত বনধকে সমর্থন করেছেন সাধারণ মানুষ। এর ফল সুদূর প্রসারী। তৃণমূল কংগ্রেসের রক্তচক্ষু এবং পুলিশের জন্য রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে না পারলেও সাধারণ মানুষ ঐকান্তিকভাবে এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছেন। সোমবার ভারত বনধের পরিপ্রেক্ষিতে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বর্ধমান জেলা সিপিএমের সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। কার্যত, সোমবার বাম ও কংগ্রেসের ডাকা ভারত বনধে তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি পূর্ব বর্ধমানে। দুটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া অন্যান্য দিনের মতই স্বাভাবিক থাকল জনজীবন। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এদিন সরকারী দপ্তর সহ বিভিন্ন কারখানা গুলিতে হাজিরার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। সোমবার সকালে পালসিট ষ্টেশনে রেল অবরোধ করে সিপিএম সমর্থকেরা। যদিও খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। প্রায় ২০ মিনিট অবরোধ করার পরই তাদের তুলে দেওয়া হয়। বর্ধমানের ষ্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী জানিয়েছেন, পালসিটে ২০ মিনিট রেল অবরোধ করলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এদিন সমস্ত ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াত করেছে। অন্যদিকে, এদিন সকালে ভাতার বাজার এলাকায় ধর্মঘটী সিপিএম সমর্থকেরা বর্ধমান-কাটোয়া রোড অবরোধ করলে উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে ভাতার থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলতে গিয়ে সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি বাধে। সিপিএমের অভিযোগ, এই সময় পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। গ্রেপ্তার করা হয় ভাতার এরিয়া কমিটির সদস্য সত্যনারায়ণ কর্মকার সহ মোট ৬জন সদস্যকে। ভাতার ১নং এরিয়া কমিটির সদস্য নজরুল হক এদিন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে, এই ঘটনায় ভাতার থানায় গিয়ে বিক্ষোভও দেখায় সিপিএম সমর্থকেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক জানিয়েছেন, এদিন কাটোয়ায় বনধ সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছে। অপরদিকে, এদিন সকালে বর্ধমান শহরে আলাদা আলাদা ভাবে বনধের সমর্থনে মিছিল করে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার, জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের নেতৃত্বে এদিন মিছিল করা হয়। অন্যদিকে, বর্ধমান ষ্টেশন থেকে বীরহাটা পর্যন্ত জেলা কংগ্রেসের কার্য্যকরী সভাপতি অভিজিত ভট্টাচার্য্য, বর্ধমান সদর মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি নাজির হোসেনের নেতৃত্বে বনধের সমর্থনে মিছিল সংগঠিত করা হয়। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বনধ সম্পর্কে এদিন জেলা কংগ্রেসের কার্য্যকরী সভাপতি অভিজিত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশে এদিন তাঁরা পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। একই বার্তা দিতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রের মোদি সরকারকেও। সাধারণ মানুষ যে এই মূল্য বৃদ্ধি মেনে নিচ্ছে না এদিন সেই কাজ তাঁরা সফল হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এদিন সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক বাধ্য বাধকতায় রাস্তায় নেমে বনধ সমর্থন না করলেও মনের দিক থেকে এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রতিবাদ হওয়া দরকার তা মেনে নিয়েছেন। আর সেখানেই তাঁদের এই কর্মসূচী সাফল্য পেয়েছে। বনধ সম্পর্কে বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এই বনধ ডাকলেও মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বনধ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা পরিষদ সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, এদিনের বনধ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কোথাও কোনো প্রভাব পড়েনি। মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে এই কর্মনাশা বনধকে।