বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান ) :- খোদ তৃণমূল পার্টি অফিসেই স্বাধীনতা দিবসের দিন উল্টো করে জাতীয় পতাকা টাঙানোর অভিযোগ উঠেছিল বর্ধমানের ভাতার থানার খুড়ুল গ্রামে। তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে উল্টো করে এই জাতীয় পতাকা তোলার ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেন কেউ। আর সেই ছবিই ফের ফেসবুকে পোষ্ট করেন খুড়ুল গ্রামের বাসিন্দা প্যারা মেডিকেলের ছাত্র অমিত ঘোষ। আর তা নিয়েই শুরু হয় তোলপাড়। শুধু পোষ্ট করেই ক্ষান্ত থাকেননি অমিত। ছবির সঙ্গে তিনি বেশ কিছু মন্তব্যও লিখে দেন। যা রীতিমত তৃণমূল শিবিরের সম্মানে গিয়ে হাত পরে। এই ঘটনায় সিপিএম সমর্থিত এই পরিবারের বিরুদ্ধে তথা খোদ অমিতের বিরুদ্ধে নেমে আসে খাঁড়া। প্রথমে তাকে ওই পোষ্ট তুলে নেবার আবেদন করা হয়। যথারীতি তিনি তা করার চেষ্টাও করেন। এমনকি ফেসবুকে তিনি এই মন্তব্য লেখার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু তাতেও দোষ হাল্কা হয়নি তার। এরপর এক তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ জমা পড়ে ভাতার থানায়। এরপরই পুলিশ অমিত ঘোষের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে এলাকায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি, আপত্তিকর মন্তব্য করা এবং মাধরের ধারায় (৫০৫ বি, ৫০৪, ৩২৩ ও ৩৪ আইপিসি) মামলা রুজু করে । অমিত ঘোষের বাবা রাধারমণ ঘোষ জানিয়েছেন, ১৬ তারিখ রাত্রি প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ ভাতার থানার পুলিশ গিয়ে তার বাড়ির দরজা ভেঙে তার ঘুমন্ত ছেলেকে তুলে নিয়ে চলে যায়। ১৭ তারিখও তাকে থানায় আটকে রাখা হয় – এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দেশের জাতীয় পতাকা উল্টো করে যাঁরা লাগিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ তাঁর ছেলেকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই গ্রেপ্তার করেছে। এব্যাপারে তিনি সমাজের উচিত প্রতিবাদ করা – এমনটাই বলেছেন রাধারমণবাবু। এদিকে, রবিবার ধৃত অমিত ঘোষকে বর্ধমানের সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। অমিত জানিয়েছেন, জাতীয় পতাকা উল্টো করে লাগানোর পোষ্ট করাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটাই তার দোষ। এদিন অমিতকে আদালতে হাজির করা হলে তার জামিনের পক্ষে জোড়ালো সওয়াল করেন তার আইনজীবী স্বপন বন্দোপাধ্যায়। স্বপনবাবু এদিন অম্বিকেশ মহাপাত্রের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন সওয়াল করেন, এই পোষ্টের মাধ্যমে দেশের প্রতি জাতীয়তাবোধেরই পরিচয় দিয়েছেন অমিত। কিন্তু তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারী পক্ষের আইনজীবী এদিন ধৃতের জামিনের বিরোধিতা করেন। অভিযোগকারীর পক্ষে তিনি সওয়াল করায় বিচারকের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সোমনাথ দাস এদিন সরকারী আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, কারা এই পতাকা উল্টো করে লাগিয়েছেন তার কোনো উল্লেখ নেই পুলিশী রিপোর্টে। এমনকি অভিযোগে বলা হয়েছে, ধৃত ব্যক্তিই উল্টো করে পতাকা লাগিয়ে তার ছবি তুলে পোষ্ট করেছেন। কিন্তু পুলিশী রিপোর্টে এমন কোনো কথা বলা নেই। তাই কিসের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগের ধারা যুক্ত করা হল প্রশ্ন তোলেন বিচারক। বিচারক জানান, জাতীয় পতাকা তোলার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সে বিষয়ে সচেতন করার জন্যই অভিযুক্ত পোষ্ট করে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন। এতে আপত্তি থাকার কথা নয়। দুপক্ষের সওয়াল শুনে বিচারক ধৃতের জামিন মঞ্জুর করেন।