মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় পূর্ব বর্ধমানের ৪ পড়ুয়া
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-২০১৯ সালের মাধ্যমিকের ফলাফলে একদিকে যেমন বর্ধমান শহরের তথাকথিত নামী দামী স্কুলের ফলাফল রীতিমত হতাশ করল ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবক এবং শিক্ষক মহলকে, তেমনি অন্যদিকে, রীতিমত চমকে দিয়ে বর্ধমানের বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের ফলাফল মুখ উজ্জ্বল করল ঐতিহ্যবাহী বর্ধমানের। বিগত কয়েকবছর ধরেই বর্ধমান শহরের টাউন স্কুল, বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল, সিএমএস হাইস্কুল, মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলের মত স্কুলগুলি মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে টেক্কা দিত একে অপরকে। কিন্তু এবারের ফলাফলে রীতিমত হতাশ শিক্ষানুরাগী মহল। এই সমস্ত স্কুলগুলির ফলাফল মেধা তালিকার কাছাকাছি এলেও কেন তারা মেধা তালিকায় স্থান পেল না তানিয়ে শুরু হয়েছে রীতিমত চর্চাও। এবারের প্রকাশিত মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের দুই ছাত্রী সাহিত্যিকা ঘোষ ৬৮৫ নাম্বার পেয়ে ষষ্ঠ স্থান এবং অয়ন্তিকা মাজি ৬৮৩ পেয়ে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। কাটোয়া কাশীরাম দাস ইনস্টিটিউটের ছাত্র পুষ্কর ঘোষও মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। এবছর মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে মেমারী বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল ইনষ্টিটিউশনের ছাত্র সৌম্যদীপ ঘোষও। মেধা তালিকায় তার স্থান দশম। তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬৮১। এবারের ফলাফলে বর্ধমান শহরের নামজাদা স্কুলগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়ে যেভাবে বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের ফলাফল রীতিমত চমকে দিয়েছে সমগ্র শিক্ষানুরাগী মহলকে তাতে বেজায় খুশী এই স্কুলের শিক্ষিকারা। বিদ্যার্থী ভবন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা রায় তা জানিয়েছেন, এবছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭২। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ নাম্বার পেয়েছে ৩৩জন। এবারের মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া সাহিত্যিকা ঘোষ, অয়ন্তিকা মাজি, পুষ্কর ঘোষ এবং সৌম্যদীপ ঘোষ প্রত্যেকেই জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা ডাক্তার হতে চায়। ডাক্তার হিসাবে মানুষের সেবা করতে চায় তারা। সাহিত্যিকার পড়াশোনার কোনো বাঁধাধরা সময় ছিল না। মা পার্বতী ঘোষ নার্স, বাবা শক্তিপদ ঘোষ চন্দননগরের একটি স্কুলের শিক্ষক, দাদা মেডিকেলের ছাত্র। ভবিষ্যতে একজন ভাল ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা সাহিত্যিকার। অন্যদিকে, অয়ন্তিকা গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে। প্রিয় বিষয় তার অংক। অয়ন্তিকার বাবা অসিত মাজি নিজে একজন হোমিওপ্যাথ চিকিত্সক। মা কুহেলী নন্দী বর্ধমানের একটি বিশেষ সক্ষম ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের শিক্ষিকা। কাটোয়ার সুবোধ স্মৃতি রোড এলাকার বাসিন্দা পুষ্কর প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে। বাবা সুকুমার ঘোষ ছাপাখানার মালিক। তার এই রেজাল্টের জন্য মা শম্পা ঘোষের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে পুষ্কর। মেমারীর কোলেপাড়ার বাসিন্দা সৌম্যদীপের বাবা স্বপন কুমার ঘোষ নিমো সমবায় সমিতির ম্যানেজার। মা চম্পা ঘোষ জানিয়েছেন, সৌম্যদীপ নিজের মত করেই পড়াশোনা করেছে। তাকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রতিটি বিষয়ের জন্য ২ ঘণ্টা বরাদ্দ ছিল তার প্রতিদিন। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে সৌম্যদীপের। অন্যদিকে, এবছর শহরের নামী স্কুল বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুল থেকে এবারে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০৩জন। সর্বোচ্চ ৬৭২ নাম্বার পেয়েছে কর্নাবতি ঘোষ। ৯০ শতাংশের বেশি নাম্বার পেয়েছে ১১জন। শহরের আর এক নামী স্কুল বর্ধমান টাউন স্কুলের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৪৩জন। তার মধ্যে পাস করেছে ২৪২জন। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সপ্ত শুভ্র মান্না । তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬৭৯। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ হাইস্কুল থেকে এবারে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০৪ জন। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে দুই ছাত্র রাহুল অধিকারী ও সায়ন্তন দে। তাদের প্রাপ্ত নাম্বার ৬৭৭। যদিও এই স্কুলের ফলাফলে সন্তুষ্ট নন প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, এই স্কুলের ৫জন ছাত্র ছিল যারা মেধা তালিকায় ১ থেকে ১০-এর মধ্যে স্থান পাবার যোগ্য। কিন্তু তাদের বাংলায় ৩ থেকে ৪ নম্বর কম এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, স্ক্রুটিনি নয়, তাঁরা আরটিআই করতে চলেছেন। প্রয়োজন হলে এব্যাপারে মামলাও করবেন তাঁরা। অপরদিকে, শহরের অপর নামী স্কুল বর্ধমান সিএমএস হাইস্কুল থেকে এবছর ২০৪ জন পরীক্ষা দেয়। তাদের মধ্যে একজন ফেল করেছে। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে দুজন ছাত্র অরিত্র পণ্ডিত এবং ইন্দ্রনীল মণ্ডল। তাদের প্রাপ্ত নাম্বার ৬৭৫। বস্তুত, এবারের মাধ্যমিকের এই ফলাফলে যেভাবে বর্ধমান জেলা জুড়েই ছাত্রছাত্রীরা নাম্বার পেয়েছে তাতে সামান্য কিছু রদবদল হলেই গোটা জেলার ফলাফল নজর কাড়ত বলে মনে করছেন শিক্ষক মহল। কারণ জেলার বহু ছাত্রছাত্রীই মেধা তালিকার কাছাকাছি নাম্বার পেয়েছে।