E Purba Bardhaman

বিজেপির বহিষ্কৃত নেতা শ্যামল রায় যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে

Suspended BJP leader Shyamal Roy joined Trinamool Congress

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- নীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়েছে বিজেপি তাই সেই দলে একজন অনুগামী হিসাবেও থাকতে বিবেকে লাগছে। একই সাথে বাংলার অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে ৫৮ জন অনুগামী নিয়ে তৃনমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন বিজেপির বহিষ্কৃত নেতা শ্যামল রায়। রবিবার সংস্কৃতি লোকমঞ্চে বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আয়োজিত বিজয়া সম্মেলন অনুষ্ঠান মঞ্চে শ্যামল রায় এবং বিজেপি কর্মীদের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মুখপাত্র ঋজু দত্ত, রাজ্য এসটি সেলের চেয়ারম্যান দেবু টুডু, বিধায়ক খোকন দাস-সহ অন্যান্যরা। শ্যামল রায় একদা বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি এবং ভারতীয় জনতা যুবমোর্চার বর্ধমান জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সাথে দলের দূরত্ব বাড়ে। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও শ্যামল রায় সেই সময় দাবি করেছিলেন তিনিই বিভিন্ন কারণে দল থেকে সরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জননেত্রীর লড়াকু মানসিকতাকে কুর্ণিশ জানিয়ে ও বাংলার উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ চলছে সেই যজ্ঞে সামিল হতে চেয়ে শ্যামল রায়-সহ বহু বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। দলীয় স্তরে আলোচনা করেই আজ তাঁদের যোগদান করানো হয়েছে। শ্যামল রায় জানিয়েছেন, বিজেপি নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়েছে। তাই এই দলে একজন সমর্থক হিসাবে থাকতেও লজ্জা লাগে। অন্যদিকে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শত রকমের অপপ্রচার ও প্রতিহিংসার জবাব দিয়ে বাংলার অধিকার রক্ষা করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে যোগ্য সংগত করছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে বাংলা ও বাঙালির অধিকার রক্ষার লড়াই করছেন মুখ্যমন্ত্রী, আর একদিকে প্রতিহিংসা ও ধর্মীয় রাজনীতি, উসকানিমূলক প্রচার করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই বাংলার অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হতেই এই যোগদান। অন্যদিকে, এই মঞ্চে ফের তীব্র সমালোচনায় মুখর হলেন দেবু টুডু। সম্প্রতি কালনায় তাঁর যে বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দেয় এদিনও তার থেকে সরেননি দেবু টুডু। তিনি বলেন, মা মর্তে এসেছিলেন, ফিরে চলে গেছেন। অশুভ শক্তিরই বিনাশ হয়েছে। কিন্তু এই বাংলায় এই অশুভ শক্তির দানবেরা, অসুরের এখনও ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। যতদিন চন্দ্র-সূর্য থাকবে, সমাজ থাকবে ততদিন দানবেরা এই বাংলায় থাকবে। দানব-অসুরদের নিধন করার জন্য আমাদের মা মমতাময়ী মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, তাই আমাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। মা আছেন জয় নিশ্চিত, ওদের পরাজয় নিশ্চিত। তিনি বলেন, ৯ আগস্ট যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে গোটা বাংলার মানুষ ব্যথিত। আমরা যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম থেকে প্রশাসনিক সভা সম্পূর্ণ না করে কলকাতায় ফিরে এলেন, সরকারি ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধী ধরা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে অভয়ার বাড়িতে গেছেন। সমস্ত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরমধ্যে দেখতে পাওয়া গেলো একশ্রেণীর মানুষ যারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন যারা বিভিন্ন নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে মুখ দেখানোর জায়গা নেই। সেই একদল মানুষ পোস্ট মর্টেম হয়ে যাওয়ার পর গাড়ি আটকে আর জি করে বিপ্লব করছে। তারপর থেকে শুরু হলো, গোটা বাংলায় একশ্রেণীর মানুষ মুখোশ পরে নেমে পড়লো। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলছে। বাংলা বলতে লজ্জা করছে। ইংরেজি বলছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা বাংলার মানুষ। আপনারা কি বাঙালি নয়। সবটাই মুখোশ, মুখ আলাদা। কারা বুদ্ধিজীবী সেজে মাঠে নেমে পড়লো, মুখোশ। সমাজকর্মির মুখোশ। আসল মুখটা লাল। কার্ল মার্ক্সের বাচ্চা, মাও সেতুঙের বাচ্চা। মুখোশ থেকে লড়াই করে গোটা বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। মনে করিয়ে দিতে চাই সন্ধ্যা হলেই কার্জন গেটে যাওয়া যেতো না। ১০-২০ টা লোক নিয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস। কারা এরা? ধানতলায় কী হয়েছিল? ভুলে গেছো?
এদিকে, এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত সরাসরি আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহিকে। ঋজু বলেন, অমিত শাহ বলেছেন, ২০২৬ সালে বাংলায় ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেবেন। অনুপ্রবেশ কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে? অনুপ্রবেশ তো বিএসএফ দেখে, বিএসএফ তো আপনার অধীনে। আপনি এতদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার পরেও যদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে আপনি চেয়ারে বসে আছেন কেন? কান ধরে চেয়ার ছেড়ে দিন, আমরা বুঝে নেব। তিনি বলেন, ওনার এক চেলা আছেন এখানে, তার নাম শুভেন্দু অধিকারী। বাংলার দুর্ভাগ্য তিনি আমাদের বিরোধী দলনেতা। বাংলার মানুষ বেইমানদের ক্ষমা করে না। এর মত বেইমান বাংলার বুকে আর কেউ জন্মায় নি। মীরজাফর ওকে দেখে লজ্জা পায়। রেজিস্টার চোর, প্রতিষ্ঠিত তোলাবাজ। ইডি-সিবিআই-এর চার্জশিটে ওর নাম আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য ও বিরোধী দলনেতা। কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ৬ টা উপনির্বাচন হচ্ছে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে থাকবে। সারারাত চিন্তা করে দুটো জিনিস বুঝলাম, শুভেন্দু অধিকারীর হয় সম্পূর্ণভাবে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। বিজেপির উচিত চাঁদা তুলে ওর মানসিক চিকিৎসা করানো। আর না হলে ও যে নেশাটা করছে সেটা অত্যন্ত সস্তার। সেটা ওর বন্ধ করা উচিত। আরজিকর নিয়েএদিন ঋজু বলেন, অত্যন্ত নৃশংস ও নারকীয় ঘটনা। আমরা কেউ চাইনা বাংলার বুকে এই রকম ঘটনা ঘটুক। কিন্তু এটাও বলতে চাই, যদি বলো জাস্টিস ফর আরজি কর তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের একই স্বর; আর যদি বলো পদত্যাগ মমতার তাহলে বর্ধমানের রাস্তায় বুঝে নেবে জনতা। আর যারা যারা গলা চড়ালেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করলেন, কুরুচিকর মন্তব্য করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের নিয়ম মেনে বলেছিলেন আমি ১০ লক্ষ টাকা দিতে চাই। পরে দেখলাম অভয়ার লাশের উপর দাঁড়িয়ে ৪ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। সব সামনে আসবে, অত সোজা নয়। ৬ টা উপনির্বাচনের ৬ টাতেই তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে বিজেপি সেকেন্ড আর সিপিএম থার্ড।

Exit mobile version