বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সোমবার আদিবাসী সমাজের বাঁদনা পরবের শেষ দিনে শিকার উৎসবকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ালো বর্ধমানের কাঞ্চননগর সংলগ্ন ডিভিসি রেনিকোট এলাকায়। আদিবাসীরা জানিয়েছেন, তাঁদের পুরনো প্রথা মেনেই এদিন খুব সকালে বাড়ির পুরুষরা শিকারে বের হন। গত ৫দিন ধরে চলা বাঁদনা পরবের সোমবার ছিল শেষ দিন। এদিন গোদা তালপুকুর এলাকার আদিবাসীরা ডিভিসির সেচক্যানেলের রেনিকোট সংলগ্ন এলাকায় শিকার করতে আসেন। তাঁরা গোসাপ, মেঠো ইঁদুর, ভাম বিড়াল, সজারু, বনবিড়াল শিকারও করেন। এদিন সকাল থেকেই এই শিকার পর্ব চলার মাঝেই দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ তাঁদের শিকার বন্ধ করতে আসেন বনদপ্তরের কর্মীরা। আর এরপরই উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, বনদপ্তরের কর্মীরা আদিবাসীদের শিকার করা প্রাণীগুলিকে বাজেয়াপ্ত করেন। এদিন এই খবর পেয়েই সেখানে হাজির হন আদিবাসী মহিলা ও পুরুষরা। তাঁরা বনদপ্তরের কর্মীদের ঘেরাও করে বাজেয়াপ্ত করা প্রাণীগুলিকে ফেরত চান। একইসঙ্গে তাঁরাও পাল্টা বনদপ্তরের কর্মীদের ঘেরাও করে রাখেন। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে বর্ধমান থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এদিন বিক্ষোভকারী সুন্দরী হাঁসদা, মনো হেমব্রমরা জানিয়েছেন, যুগ যুগ ধরে এই বাঁদনা পরব চলে আসছে। এই পরবের শেষ দিন শিকারে যাওয়া তাঁদের রীতি। এই শিকার করে ফেরার পর পুজোর মধ্যে দিয়ে উত্সবের শেষ হয়। শিকার না নিয়ে কেউ ফেরেন না। একইসঙ্গে শিকারে বের হবার পর বাড়ির মহিলারা উপোস করে পুরুষদের পথ চেয়ে থাকেন। মনো হেমব্রমরা জানিয়েছেন, এই শিকার তাঁদের উত্সবের অন্যতম অঙ্গ। কিন্তু আচমকা এভাবে তাঁদের শিকার করা বন্ধ করলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। অপরদিকে, জানা গেছে, এদিন বনদপ্তর গোসাপ এবং বনবিড়ালকে বাজেয়াপ্ত করেছে। বাকি জন্তুগুলিকে শিকারীরা নিয়ে যায়। এদিন এব্যাপারে জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী জানিয়েছেন, বন্য পশু নিরোধক আইনানুসারে এভাবে জন্তু শিকার করা দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি জানিয়েছেন, এদিন খবর পাওয়ার পরই বনদপ্তরের একটি টিম ঘটনাস্থলে হাজির হন। কিন্তু শিকারীরা সংখ্যায় অনেক থাকায় তারা বনকর্মীদের দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি অনেকটাই উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। এরপর পুলিশের সহযোগিতায় বনকর্মীদের উদ্ধার করা হয় এবং শিকার করা দুটি পশুকে তাঁরা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা। পাশাপাশি এভাবে বন্যপশুদের শিকার করার বিরুদ্ধে তাঁরা লাগাতার প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।