বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ২ দিন অতিক্রান্ত আজও কিনারা হল না পূর্ব বর্ধমানের নান্দুরের নৃশংস ছাত্রী খুনের। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ছাত্রীর পরিবার। মেয়ের খুনের নৃশংসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন ছাত্রীর মা, বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। কেন খুন হতে হল মেয়েকে? কেন এই নৃশংতা? তা তাঁরা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারছেন না কেন এখনও অধরা অপরাধী। মৃত ছাত্রীর বাবা ও মা চাইছেন, দ্রুত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে এই নৃশংসতার জন্য কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ। একই দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয়েছে একাধিক আদিবাসী সংগঠনও। স্বাধীনতা দিবসের দিন আদিবাসীরা বর্ধমান থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। খোদ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরাও অবিলম্বে এই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে এদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় বর্ধমানের নান্দুর ঝাপানতলায় সবজির ক্ষেত থেকে ছাত্রীর গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। মৃত ছাত্রীর নাম প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা (২৫)। তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে দর্শন নিয়ে দূরশিক্ষায় এমএ করছিলেন। পাশাপাশি একটি শপিংমলে সেলস্-এর কাজও করতেন এবং সেলসের কাজের প্রশিক্ষণের জন্য গত নভেম্বর মাসে ব্যাঙ্গালুরু যান। গত সোমবার সে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশেই বাথরুমে যাবার নাম করে ঘর থেকে মোবাইল নিয়ে বের হয়। বেশ খানিকক্ষণ পরে ফিরে না আসায় আশঙ্কা তৈরি হয়। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে বাড়ি থেকে ৫০ মিটারের মধ্যেই তাঁর গলার নলি কাটা দেহ সবজির ক্ষেত থেকে পাওয়া যায়। এরপরই মৃত ছাত্রীর বাবা সুকান্ত হাঁসদা বর্ধমান থানায় লিখিতভাবে খুনের মামলা রুজু করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত করছে বর্ধমান থানার পুলিশ। এদিকে, এই খুনের ঘটনা নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব না ছড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। শুক্রবার জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বর্ধমানের একটি ঘটনা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা চলছে নির্দিষ্ট কিছু মহল থেকে। ধর্ষণের ঘটনার কোনো প্রমাণ মেলেনি। এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ করা হয়নি। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, আসামি ওই যুবতীর পূর্ব পরিচিত বলে মনে করা হচ্ছে। অবিলম্বে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে সিনিয়র অফিসারদের সমন্বয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানর্জীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি এসআইটিও গঠন করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ আগস্ট রাতে ‘মেয়েরা, রাত দখল করো’ কর্মসূচির সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।