বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- একাধিক দাবিতে বর্ধমান রেলস্টেশন চত্বরে প্রতিবাদ সভা করল সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি। সোমবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের অফিসে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এদিনই বেশকিছু দাবি নিয়ে মিছিল করে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হবে বলে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মন্ডল জানিয়েছেন, ডেপুটেশনের জন্য অগ্রিম জানানো থাকলেও বর্ধমানে হঠাৎ করে মুখ্যমন্ত্রী চলে আসার ফলে তাঁদের মিছিল করা যাবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানান হয়। এবং ডেপুটেশনও নেওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তাই তাঁরা বর্ধমান রেলস্টেশনে সভা করেন এবং ই-মেইলের মাধ্যমে জেলাশাসকের কাছে তাঁদের ডেপুটেশন পাঠিয়ে দেন।
আনসারুল আমান মন্ডল জানিয়েছেন, এরাজ্যে কর্মনিশ্চয়তা আইনের ধারাগুলি অস্বীকার করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ২ বছরের অধিক সময় কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ রেখেছে এমজিএনআরইজিএ বা ১০০ দিনের কাজ। আটকে রেখেছে বকেয়া মজুরি। অন্যদিকে, প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজ্য সরকার চালু করেনি ৫০ দিনের কাজ; এখনও বহু মানুষের মজুরি বকেয়া রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ এর মধ্যে সকলের জন্য আবাসের নিশ্চয়তা ঘোষণা করলেও এরাজ্যে ২০২২ সাল থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে আবাস যোজনা। কাজের অভাবে মেহনতিরা দলে দলে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন; সেখানেও সাম্প্রদায়িক হিংসা-সহ ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন। এদিকে লকডাউনের সময়কালে গ্রামাঞ্চল জুড়ে গরীব কৃষক-মেহনতিদের মধ্যে গভীর ঋণগ্রস্ততার যে ছবি সামনে এসেছিল, পরবর্তী সময়ে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ফসলের দামের অভাবে সেই ঋণগ্রস্ততা কয়েক গুণ বেড়েছে। সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টি পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করেছে।
আনসারুল আমান মন্ডল জানিয়েছেন, এই অবস্থায় তাঁরা দাবি করছেন, অবিলম্বে কর্ম নিশ্চয়তা আইন মেনে এরাজ্যে এমজিএনআরইজিএ চালু করতে হবে; বকেয়া মজুরি প্রদান করতে হবে। বন্ধ থাকা আবাস যোজনা চালু করে গৃহহীন ও বাস্তুহীনদের ৫ শতক বাস্তু-সহ বাসগৃহ দিতে হবে। গ্রামীণ মেহনতিদের কমপক্ষে ২০০ দিনের কাজ-সহ ন্যূনতম ৬০০ টাকা মজুরি, অঙ্গনওয়ারি-আশা-মিড ডে মিল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রকল্প শ্রমিকদের উপযুক্ত বেতন এবং বোনাস – উৎসব ভাতা প্রদান, ৬০ বছর উত্তীর্ণ প্রত্যেকে মেহনতিকে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা পেনশন, কমপক্ষে ৩৫ কেজি রেশন, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা, দরিদ্রদের বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ, ভূমি সংস্কার এবং পানীয় জল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করতে হবে। আদিবাসী উচ্ছেদ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল বন্যা পরিস্থিতিতে রয়েছে। এছাড়াও অতিবৃষ্টির কারণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষাবাদ। বন্যাদুর্গতদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন-সহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ সুনিশ্চিত করতে হবে।
আনসারুল আমান মন্ডল জানিয়েছেন, এই সমস্ত দাবির পাশাপাশি তাঁরা মহিলাদের নিরাপত্তা এবং উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয়েও তাঁদের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত স্তরে মহিলা কমপ্লেইন সেল চালু করতে হবে। গ্রামের প্রতিটি আলপথে, রাস্তায় রাতবাতি সুনিশ্চিত করতে হবে। আর জি করের ঘটনা এরাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত, বেহাল অবস্থাকে আরও একবার তুলে ধরেছে। গ্রামাঞ্চল থেকে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যাওয়া রোগীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রোগী ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় রেফারাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। হাসপাতালে দালালরাজ নির্মূল করতে হবে। কলকাতায় রোগী পাঠানো ঠেকাতে জেলায়-জেলায় সদর হাসপাতাল ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পরিকাঠামো যথাযথ করতে হবে বলে দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আনসারুল আমান মন্ডল।