E Purba Bardhaman

হাইকোর্টের নির্দেশে রায়না থানা এলাকায় নাবালিকা নিখোঁজ মামলার তদন্তে পৌঁছালো সিবিআই

The CBI has reached the investigation of the case of missing minor of Raina Thana area on the instructions of the High Court.

রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- হাইকোর্টের নির্দেশে রায়না থানা এলাকায় নাবালিকা নিখোঁজ মামলার তদন্তে পৌঁছালো সিবিআই। বুধবার দুপুরে ৩ সদস্যের সিবিআই টিমটি এসে পৌঁছায় নাবালিকার বাড়িতে। এদিন পরিবারের সদসস্যদের সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন সিবিআই টিমের সদস্যরা। আদালত ও নাবালিকার পরিবার সূত্রে জানাগেছে, রায়না থানার এলাকার ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণের মামলায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নতুন করে কেস রুজু করে তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই। ১৯ ফেব্রুয়ারি সিবিআইয়ের তরফে বর্ধমানের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে এফআইআরের কপি জমা দেওয়া হয়। আদালত সেটি গ্রহণ করেছে। মামলায় অপহরণ করে আটকে রাখার পাশাপাশি পাচার ও এসসি অ্যান্ড এসটি অ্যাক্টের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিএসপি রাজেন্দ্র হেমন্ত কুজুর কেসের তদন্তকারী অফিসার নিযুক্ত হয়েছেন। মামলার যাবতীয় নথিপত্র সিআইডির অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের ওসির কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত কেসের তদন্তভার সিআইডির কাছ থেকে সরিয়ে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। আগামী ১৩ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে হাইকোর্ট। সেদিন তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে হাইকোর্ট রিপোর্ট পেশ করতে হবে সিবিআইকে।
পুলিস ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ৯ আগস্ট বছর চোদ্দোর ওই ছাত্রী সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টিউশন পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে তার হদিশ মিলছে না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করেও মেয়ের হদিশ না পেয়ে তার মা ১৭ আগস্ট ঘটনার কথা জানিয়ে রায়না থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিস। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ সফিকুল ও শেখ জসীমউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। দু’দফায় তাদের হেফাজতে নিয়েও ছাত্রীকে খুঁজে বার করতে পারেনি পুলিস। পুলিসের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করেন। পরে, ছাত্রীর মা বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেয়। যদিও সিআইডির তদন্তেও অনাস্থা প্রকাশ করেন ছাত্রীর মা। এরপরই সিবিআই তদন্ত চেয়ে হওয়া মামলায় বিচারপতি তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, মামলার নথি অনুযায়ী সিআইডি কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জামিনে মুক্ত পাওয়া দুই অভিযুক্তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কল রেকর্ডও বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। তাদের গতিবিধির উপরও নজর রেখেছে তদন্তকারী সংস্থা। স্থানীয় পত্রিকায় ছাত্রীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কলকাতার মিসিং পার্সন স্কোয়াডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে, এটা যথেষ্ট নয়। তদন্তকারী সংস্থা দায়িত্বভার নেওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করা উচিত। তারা নিখোঁজ ছাত্রীর ছবি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাতে পারত। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে সাহায্য চেয়ে বিষয়টি জানাতে পারত। পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। এমনকি আদালতে ধৃত দু’জনের নারকো অ্যানালিসিস টেস্টের আবেদন জানাতে পারত। ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি দেওয়া লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল পুলিসের। তদন্তের করণীয়ের বিষয়ে পরামর্শ দিলেও তদন্তকারী সংস্থাকে কীভাবে তদন্ত করা উচিত তা শিক্ষা দেওয়া আদালতের যে কাজ নয়, তাও নির্দেশে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। তদন্তভার হাতে নেওয়ার একমাস পরও অপহৃতা ছাত্রীকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে সিআইডির ব্যর্থতা এবং ঘটনায় আন্তঃরাজ্য এমনকি অন্যান্য দেশের সাহায্য প্রয়োজন। তাই, তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত বলে নির্দেশে জানিয়েছেন বিচারপতি।
বুধবার রায়না থানা এলাকায় নিখোঁজ নাবালিকার পরিবারের সদস্যদের সাথে সিবিআই টিমের সদস্যরা কথা বলে যাওয়ার পর ওই নাবালিকার মা জানিয়েছেন, সিবিআই কর্মীরা এসে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাঁরা সমস্ত বিস্তারিত জানিয়েছেন। নাবালিকার মা জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি নিখোঁজ ডাইরি করেছিলেন। পরে ছেলেগুলোর কথা জানতে পেরে তিনি আবার থানায় গিয়ে জানান। কিন্তু কোনও ফল না হওয়ায় তিনি হাইকোর্টে যান। সেখান থেকে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ হয়। কিন্তু তাতেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে। নাবালিকার মা জানিয়েছেন, তিনি আশা করেছেন সিবিআই তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করে দেবে। সিবিআই তাঁকে আশ্বস্ত করেছে। যদিও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রায় ৮ মাস তাঁর মেয়ে নিখোঁজ। মেরে দিয়েছে কিনা বুঝতে পারছেন না। তবে, মামলা করার পরে তাঁদের হুমকি দেওয়া হলেও এখন দেওয়া হয় না। প্রতিদিন তাঁদের বাড়িতে পুলিশ ৩-৪ বার এসে খোঁজ নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ওই নাবালিকার মা। ওই নাবালিকার দিদিমা জানিয়েছেন, এদিন সিবিআই তাঁদের সমস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁরা সমস্ত কিছু বলছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের মেয়েকে ফিরে পেতে চাইছেন, পাশাপাশি ছেলেগুলোর শাস্তি চাইছেন। সিবিআই তদন্তে কিছুটা আশ্বস্ত হলেও এখনও ভরসা পাচ্ছেন না। তিনিও শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সত্য সব জানাজানি হয়ে যাবে এই ভয়ে মনে হচ্ছে খুন করে দিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সিবিআই এসেছে। তাঁরা ভরসা পাচ্ছেন। তাঁরা চাইছেন যেভাবে হোক তাঁদের এলাকার মেয়েটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুক। অভিযুক্ত ছেলেগুলোর শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ওই নাবালিকার পরিবার সূত্রে জানাগেছে, সিবিআই দলটি বৃহস্পতিবারও রায়না থানা এলাকায় তদন্তের কাজে আসবে।

Exit mobile version