প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা – বাস্তবের সঙ্গে হাতে থাকা তালিকার মিল খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা
admin
গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- মেমারীর পর গলসী ১ ও গলসী ২ ব্লকের কয়েকটি গ্রামে গিয়েও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য। বুধবার তাঁরা মেমারী ২ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম ও পাড়ায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তদন্ত করেন। জায়গায় জায়গায় তাঁরা আবাস যোজনার সার্ভের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আর বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও প্রায় একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় ৯টা ৪০ নাগাদ দিল্লির অপারেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দুই সদস্য প্রদ্যুম্ন কর ও মনোজ কুমার সহ কেন্দ্রের উপ-সচিব পদের আধিকারিক, গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা বর্ধমান সার্কিট হাউস থেকে গলসীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু গলসীর গলিগ্রামে ১৯নং জাতীয় সড়কে ফ্লাইওভারের দাবীতে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের জেরে আটকে পড়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের গাড়ি। প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা গাড়ি থেকে নেমে সোজা হাঁটতে শুরু করেন গন্তব্যের দিকে। অবরোধ পাড় করে প্রায় ২০০ মিটারেরও বেশি হেঁটে যাওয়ার পর ফের সরকারী গাড়িতে উঠে তাঁরা সরাসরি হাজির হন গলসী ১ ব্লকে। ব্লক অফিসে প্রায় আধঘণ্টা আলোচনার পর তাঁরা যান বুদবুদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বীরসিং গ্রামে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ সিং এবং তাঁর ভাই সুরেশ সিং কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলকে জানান, আবাস যোজনা নিয়ে যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছে এবং এব্যাপারে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব রয়েছে কিনা সে বিষয়েই তিনি রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। এদিন সুরেশ সিং-এর স্ত্রী পূর্ণিমা সিং তাঁর বাড়ি দেখিয়ে আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়ার আবেদন জানান। তাঁর বাড়ির অবস্থা দেখে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রদ্যুম্ন কর তাঁদের বিডিও অফিসে আবেদন করার কথা বলেন। পূর্ণিমা সিং জানান, তিনি ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন। তাহলে কেন তিনি বাড়ি পেলেন না, উপস্থিত বিডিও-র কাছে জানতে চান প্রদ্যুম্ন কর। বিডিও তাঁকে জানান, পরের বার তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর সেখান থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল যান স্থানীয় বাসিন্দা সুষমা কোনার সহ একাধিক বাসিন্দার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে তাঁরা পারিবারিক বিভাজনের জন্য আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়া নিয়ে একাধিক সমস্যার কথা শোনেন। বীরসিং গ্রাম থেকে বেড়িয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল ফিরে আসেন ব্লক অফিসে। সেখানে কিছুক্ষণ আলোচনার পর গলসী ২ ব্লকের উচ্চগ্রাম অঞ্চলের হরিপুর গ্রামে যান। এই গ্রামের হামিদা বেগম মুন্সী, রোকেয়া মুন্সী, ঝর্ণা বেগম সেখ, ক্ষুদিরাম বাগ্দী, জয়দেব মালিক, অষ্টম মালিক প্রমুখদের সঙ্গে কথা বলেন। জয়দেব মালিক এবং অষ্টম মালিক দুইভাই পৃথক থাকেন। তাঁদের আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়া নিয়ে এনওসি সংক্রান্ত কাগজ দেখতে চান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। বস্তুত, এখানে অনেকেরই এনওসি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি ছেলেরা বাবা-মাকে দেখেন না, বাবা -মা ছেলেদের দেখেন না – ইত্যাদি নানা সমস্যা শুনে রীতিমত উষ্মা প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। উল্লেখ্য, মেমারীর মত এদিনও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল তাঁদের হাতে থাকা তালিকার সঙ্গে বাস্তবের মিল খোঁজার চেষ্টা করেছেন। আর তাতেই বারবার তাঁরা হোঁচট খেয়েছেন এবং ব্লক প্রশাসনকে প্রশ্ন করে গেছেন। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আবাস যোজনা নিয়ে নিয়ম মেনে বাড়ি পেয়েছেন কিনা, বাড়ি পেলেও সেখানে সঠিক ব্যক্তিরা বসবাস করেন কিনা এবং বাড়ি তৈরীর টাকা সঠিকভাবেই তাঁদের একাউণ্টে জমা পড়েছে কিনা তা যাচাই করছেন। একইসঙ্গে বাদ যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে বাস্তবের মিল খোঁজার পাশাপাশি বারবার প্রশ্ন তুলেছেন ভেরিফিকেশন পদ্ধতি নিয়েও।