প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে মেমারী ২ ব্লকের একাধিক গ্রামে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল
admin
মেমারী (পূর্ব বর্ধমান) :- মঙ্গলবারই আবাস যোজনার অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে পূর্ব বর্ধমানে এসেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রদ্যুম্ন কুমার কর ও মনোজ কুমার। মঙ্গলবার তাঁরা কার্যত হোমওয়ার্ক করার পর বিকালে দেখা করেন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলার সঙ্গে। আর তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর বুধবার সকালেই দুই সদস্যই রওনা হলেন মেমারী ২ ব্লকে। প্রথমেই তাঁরা মেমারী ২ ব্লক অফিসে আসেন। সেখানে বিডিও সৈকত মাঝির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার পর রওনা দেন বিষ্ণুপুর অঞ্চলের হরিণডাঙা, দুর্লভপাড়া, রায়পাড়া, পালডাঙা-সহ বিজুর ১ অঞ্চলের কয়েকটি জায়গায়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা এদিন দুটি বিষয়কে খতিয়ে দেখতে কার্যতই নমুনা পরিদর্শন করেন। তাঁদের হাতে থাকা তালিকা অনুসারে যাঁরা আবেদন করেও ঘর পাননি তাঁদের কাছে গিয়ে যেমন কথা বলেন, তেমনি যাঁরা ঘরের টাকা পেয়েও এখনও ঘর তৈরী করেননি বা সম্পূর্ণ করেননি তাঁদের কাছেও গিয়ে কথা বলেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তোলেন কারা সার্ভে করেছেন? এদিন বিডিওকে তাঁরা বারবার নির্দেশ দিয়েছেন কারা কারা সার্ভে করেছেন তাঁদের ডেকে পাঠান, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিভাবে এই সার্ভে হয়েছে তা তাঁরা জানতে চান। মেমারি ২ ব্লকের বিষ্ণুপুরে উপভোক্তা শম্ভু ঘোষকে কেন্দ্রীয় সদস্যরা জিজ্ঞাসা করেন ক’মাস হল টাকা পেয়েছেন? ৬মাস নিশ্চয়ই হয়ে গেছে টাকা পেয়েছেন? তাঁরা বলেন, ছয় মাস হয়ে গেছে, আপনি বাড়ি দরকার ছিল বলে আবেদন করেছিলেন, টাকাও পেলেন, অথচ বাড়িতে ঢুকতে পারলেন না কেন? তাহলে আপনার দরকার ছিলো না, আপনি এমনি পেয়েছেন? যদিও তাঁদের প্রশ্নের জবাবে এদিন শম্ভু ঘোষ এবং তাঁর ছেলে সুভাষ ঘোষ শরীর খারাপের যুক্তি দেখিয়ে বলেন, শরীর খারাপ হওয়ার জন্যই তারা এই বাড়ি সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেনি এবং ঢুকতে পারেননি। নাম বাদ যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ নিয়ে কেন্দ্রীয় দলের প্রশ্নের মুখে পড়েন এদিন ব্লক ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। বিষ্ণুপুর অঞ্চলের মঞ্জুরি মাণ্ডির বাড়িতে গিয়ে মেমারি ২ এর বিডিও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ভেরিফিকেশনটা ঠিক হচ্ছে না। সমস্যাটা হচ্ছে ভেরিফিকেশন ঠিকমতো হচ্ছে না। আপনি যাকে ভেরিফিকেশন ইনকোয়ারির জন্য পাঠিয়েছেন তার সাথে আমরা কথা বলব। সেটা আমাদের বুঝতে হবে কিভাবে কিভাবে এটা করেছেন? যিনি এই জায়গাটা সার্ভে করেছেন, তাঁর নাম জানতে চাই এবং কীভাবে করতে করেছেন সেটা দেখতে চাই। হয়তো অন্য জায়গাতেও এরকম থাকতে পারে। নমুনা ভেরিফেশনে গন্ডগোল আছে। মেমারীর বোহার ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপরে গিয়ে তাঁরা বলেন, দরকার নেই তবুও বাড়ি পাচ্ছেন? এদিন মঞ্জুরী মাণ্ডির কাছ থেকে তাঁরা জানতে চান, কারা কারা বাড়িতে থাকেন, বাড়ির রোজগেরে কারা? তাঁদের মাসিক রোজগার কত? এরই পাশাপাশি এদিন হরিণডাঙা গ্রামের বাসিন্দা ইজাজুর সেখ, হাসেম মণ্ডল প্রমুখরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন। দিয়েছিলেন সমস্ত কাগজপত্রও। কিন্তু তারপরেও ঘর পাননি। ইজাজুর সেখ অভিযোগ করেন, আবাস তালিকায় তাঁর পরে যাঁদের নাম তারা ঘরের টাকা পেয়ে গেছেন। অথচ তিনি পাননি। হাসেম মণ্ডল বলেন, তাঁর মাটির ঘর, তিনি আবেদন করেছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বাড়ি পাননি। এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের কাছে কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, তাঁরা সেচ খালের জায়গায় বাড়ি করে রয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, সরকারী খাস জমির পাট্টা পেয়ে তাঁরা মাটির বাড়ি করে রয়েছেন। ইজাজুর সেখ জানিয়েছেন, তাঁর অভিযোগ পেয়ে তাঁকে জেলা পরিষদে গিয়ে দেখা করতে বলেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। হাসেম মণ্ডল জানিয়েছেন তাঁকে বিডিও অফিসে গিয়ে অভিযোগপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। বস্তুত, বুধবার প্রথম দিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল আবাস যোজনার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে তাঁদের হাতে থাকা তালিকার সঙ্গে বাস্তবের বিস্তর ফারাককেই বারবার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে উল্লেখ করে গেলেন।