E Purba Bardhaman

শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে এবার দাওয়াই ‘চেঁচানো’

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- “যঃ পলায়তি স জীবতি”। অর্থাৎ কিনা যিনি ঘটনাস্থল থেকে বিপদ বুঝে পালিয়ে যেতে পারবেন তিনিই বাঁচবেন। কিন্তু বাঁচার রাস্তা যদি হয় চেঁচানো। কিন্তু এটাই সত্যি পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের উদ্যোগে এবার এই চেঁচানোকেই হাতিয়ার করা হল শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার হিসাবে। আর এব্যাপারে সমস্ত জেলায় জেলায় রীতিমত প্রচারেরও উদ্যোগ নিল শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে জবালা অ্যাকশন রিসার্চ অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে একটি পুস্তিকাও তৈরী করা হয়েছে – চেঁচিয়ে পাড়া মাত করো – এই শিরোনামে। ওই বইয়ে বলা হয়েছে ঘরে বাইরে স্কুলে প্রতিবেশী পরিজনদের কাছে শিশুদের প্রতিনিয়তই যৌন নির্যাতনের বা নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে যা নিয়ে চিন্তিত সবাই। আর তাই চেঁচানোকেই হাতিয়ার করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, শিশু নিজে থেকেই যেন আঁচ করতে পারে চকোলেট বা আদরের মোড়কে কেউ তার ক্ষতি করতে চাইছে কিনা। শক্ত আইনের থেকেও যে কোনও অন্যায় প্রতিরোধে এই সচেতনতা বেশি কার্যকর। কি রয়েছে ওই বইয়ে – ১ থেকে ১৫টি পাতা জুড়ে রয়েছে শিশুদের জন্য ছড়ার মাধ্যমে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধের দাওয়াই। যেমন বলা হয়েছে – যখনই দেখবে কোনো লোকে তোমাকে দেখাচ্ছে ভয়, তখনই চেঁচাও জোরে তুমি বেঁচে যাবে দেখো নিশ্চয়। কেননা খারাপ লোকে জেনো আসলে খুব ভীতু হয়, তাই – বিপদে পড়লে বাঁচার উপায় যে চিত্কারটাই। ছড়ার মাধ্যমে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে শিশুদের বিভিন্নভাবে প্রলোভিত করার বিষয়গুলিকে। ছড়ার মাধমে বলা হয়েছে আদর করার নামে, ভালবাসার নামে যেন কেউ অত্যাচার করতে সাহস না পায়। বর্ধমান জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পকসো আইন সম্পর্কে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ছেলেমেয়েদের আরও বেশি সচেতন করতে আগামী ৭ জুলাই পূর্ব বর্ধমান জেলার সমস্ত স্কুলের এডিআই, এসআই প্রমুখদের নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। পকসো আইন কি, কিভাবে তার প্রয়োগ হয়, কিভাবে সুবিচার পেতে পারে নির্যাতিতারা – প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। পরে তাঁরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সেই বিষয় সম্পর্কে জানাবেন। এর ফলে পকসো আইন সম্পর্কে অনেকটাই সচেতনতা তৈরী করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময়ই শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও তাঁরা জানাতে পারেন না। এই সেমিনারের মাধ্যমে সে বিষয়টিকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। উল্লেখ্য, চলতি সময়কালে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই একাধিক শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি খোদ বর্ধমান শহরের একজন নামী গানের শিক্ষকের বিরুদ্ধেও পকসো আইনে মামলা করা হয়েছে। যদিও এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি ওই শিক্ষককে। লাগাতার শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় রীতিমত নড়েচড়ে বসেছেন জেলা প্রশাসন। শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন কমানোর লক্ষ্যে এব্যাপারে স্কুলে স্কুলে ব্যাপক প্রচারের কর্মসূচী নিয়েছে জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তর। আর সেখানেই হাতিয়ার করা হয়েছে এই চেঁচানোকেই। উল্লেখ্য, শিশু সুরক্ষা দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই জেলায় শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের আদালতে যৌন নির্যাতনের ৬০ টা মামলা শুরু হয়েছে। এবছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সেই সখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ টি। রিপোর্ট অনুযায়ীই এই ধরনের অপরাধের প্রবণতার গ্রাফ উর্দ্ধমুখী। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ঘটে যাওয়া এই ধরণের ১০১ টা মামলার মধ্যে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে রয়েছে ২৯ টি।

Exit mobile version