E Purba Bardhaman

পকসো মামলায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের, অভিযোগকারীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করল আদালত

Lawyers strike. Burdwan District Court

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পকসো মামলায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করার জন্য অভিযোগকারীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করল আদালত। জরিমানার টাকা না দিলে অভিযোগকারীকে ১০ দিন জেল খাটতে হবে। জরিমানার টাকা রায় ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে জেলার জুডিশিয়াল ক্যাশিয়ারের কাছে জমা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন পকসো আদালতের বিচারক বর্ষা বনসল আগরওয়াল। অভিযুক্তকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অভিযোগে জানানো হয়, ২০২০ সালের ২ আগস্ট খণ্ডঘোষ থানা এলাকার এক কিশোরী বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে তার হদিশ মিলছিল না। এনিয়ে ১৯ আগস্ট কিশোরীর বাবা খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার সময় অপহৃতার বয়স ১৬ বছর ছিল বলে জানানো হয়। তার ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। অপহৃতাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীকালে মামলায় পকসো অ্যাক্টের ৪ ও চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টের ৯ ধারা যুক্ত হয়। তদন্ত সম্পূর্ণ করে ২০২১ সালের ৩ মার্চ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৫, পকসো অ্যাক্টের ৪ এবং চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টের ৯ ধারায় চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। পরবর্তীকালে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৫, ৩৭৬ ও পকসো অ্যাক্টের ৬ ধারায় চার্জ গঠন হয়।
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে অপহৃতার বাবা জানায়, অভিযোগটি এক আইনজীবী লিখে দেন। অভিযোগ জানানোর ৬ মাস পর তাঁর মেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, সে এবং পরিবারের লোকজন মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোয় সম্মতি জানায় নি। ঘটনার সময় মেয়ের বয়স ১৮ ছিল বলে জানায় অপহৃতার বাবা। সে মিথ্যা করে ঘটনার সময় মেয়ের বয়স ১৬ বছর ছিল বলে লেখা হয়। তা সঠিক নয় বলে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কবুল করে নেন অপহৃতার বাবা। অপহরণের অভিযুক্তকে তাঁর মেয়ে বিয়ে করে ঘর সংসার করছে এবং তাদের একটি সন্তানও আছে বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে জানান অপহৃতার বাবা। অপহৃতার মা-ও একই কথা আদালতে জানান। অপহৃতা নিজে সাক্ষ্য দিয়ে জানায়, সে নিজের ইচ্ছায় অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে তারা বিয়ে করে। সে কারণে তার বাবা খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তকে বিয়ে করে সুখে সংসার করা এবং একটি পুত্রসন্তান থাকার কথাও আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে জানায় অপহৃতা। তার উপর কোনও যৌন নির্যাতন হয়নি বলেও আদালতে সে জানায়। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার সময় পুলিশের নির্দেশমতো বয়ান দেওয়ার কথাও আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে জানায় অপহৃতা। অপহৃতা ও তার বাবা-মা এবং তদন্তকারী অফিসারের বয়ান শোনার পর মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে নিশ্চিত হন বিচারক। এরপরই মিথ্যা অভিযোগ জানানোর জন্য অভিযোগকারী অপহৃতার বাবার জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারক জানিয়েছেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ ও পকসো অ্যাক্টের ধারায় যে অভিযোগ জানানো হয়েছিল তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। পকসো অ্যাক্টের অপব্যবহার নিয়েও রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিচারক।

Exit mobile version