বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- চলতি বছরের শেষের দিকেই লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে ধরে নিয়েই কমবেশী সমস্ত রাজনৈতিক দলই ঘুটি সাজাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখেই তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি সম্মুখ সমরেও নেমে পড়েছে। মূলত বিজেপির পালে হাওয়া ঠেকাতে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সরকারীভাবে জোরদার কাজে নেমে পড়েছে। যেহেতু আগামী ১নভেম্বর থেকেই গোটা রাজ্যে ধান কেনার মরশুম শুরু হচ্ছে তাই গ্রামবাংলার কৃষকদের নিজেদের অনুকূলে টানতে এবার সরকারী সহায়কমূল্যে ধান কেনার কাজে নতুনভাবে গতি আনতে চলেছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর। শনিবার বর্ধমানে এসে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী সরাসরি তেমন কথাই জানিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি জানান, যেহেতু এই বছরেই ভোট। তাই ভোটের মুখে রাজ্যের কৃষকদের অভাবী ধান বিক্রি বন্ধ করতে প্রতিটি সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কেন্দ্রগুলি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে একটি কেন্দ্র থেকে ধান কেনা হত সেখানে তিনটি করে কেন্দ্র করা হবে। কোনোভাবেই চাষীকে অভাবী ধান বিক্রি করতে দিতে রাজী নন তাঁরা। এমনকি ধান বিক্রি করতে এসে ফিরে যাওয়া কিংবা চাষী চাইলেও তার অতিরিক্ত ধান দিতে না পারার অসুবিধা দূর করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, ফেব্রুয়ারী মাসে বর্ধমানে বৈঠক করতে এসে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়ে গিয়েছিলেন রেশন দোকান থেকে মিলবে প্রায় ৫০০ ধরণের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। একটি বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ৫- ২২ শতাংশ বাজার থেকে কমদামে মিলবে এই সমস্ত খাদ্যদ্রব্য। শনিবার বর্ধমানে একটি ব্যক্তিগত নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসেন খাদ্যমন্ত্রী। পরে তিনি পরিদর্শন করেন জেলা খাদ্যভবনও। তিনি জানিয়েছে্ন, আগামী জুলাই মাসে উত্তর ২৪ পরগণার ১৮০০ রেশন দোকান থেকে এই প্রকল্পের সূচনা হতে চলেছে। এরপর তা গোটা রাজ্যের ২২ হাজার রেশন দোকানেই চালু হবে। তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যে ২টি। প্রথমত, এই দ্রব্য বিক্রির জন্য প্রতিটি রেশন দোকানকেই সারা সপ্তাহ ধরেই দোকান খুলে রাখতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত, এর ফলে এই সমস্ত মাল কেনার পাশাপাশি গ্রাহকরা সারা সপ্তাহেই রেশন দোকানের রেশনের মাল তুলতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেন, কসমেটিক দ্রব্য থাকছে না। এই সমস্ত বিক্রিত দ্রব্যের গায়ে খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের নাম ও সিলমোহর দেওয়া থাকবে। যাতে কোন অবস্থাতেই খুচরো বাজারের দোকানে এই জিনিস বিক্রী করা না যায়। যদি কোনো দোকান থেকে পরবর্তী সময়ে খাদ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে রেশন দোকানের বিক্রী করা জিনিস পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সেই দোকান বন্ধ করে মালিককে গ্রেফতার করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাও নেবে সরকার। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে গোটা রাজ্যের সমস্ত রেশন দোকানেই এগুলি পাওয়া যাবে । খাদ্যমন্ত্রী জানান, এই চুক্তির জন্য সরকার কোন কমিশন নেবে না। ২৬ থেকে ৩৫ শতাংশ কমিশন দেবে কোম্পানী। রেশন দোকানকে সাজিয়ে দেবে তারা। এই কমিশনের মধ্যে ডিস্টিবিউটারকে দেওয়া হবে ৫ শতাংশ, ডিলারকে দেওয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি ১৩ থেকে ২২ শতাংশ কমিশন গ্রাহককে দ্রব্যমূল্যের ছাড় হিসাবে দেওয়া হবে। তিনি জানান, সারা সপ্তাহ ধরে রেশন দোকানগুলি খোলা থাকলে এবং এই সমস্ত দ্রব্য বিক্রি করতে পারলে একজন ডিলার সারাদিনে আড়াই থেকে চারশো টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবে। শহরাঞ্চলে এটা আরও বাড়বে। অন্যদিকে, এদিনও খাদ্যমন্ত্রী জানিয়ে যান, গোটা রাজ্যে পাঁচটি আঞ্চলিক খাদ্য পরীক্ষাগার তৈরীর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। তিনি জানান সমস্ত ধরণের খাদ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করা হবে আঞ্চলিক পরীক্ষাগারে। শিলিগুড়ি, বীরভূম,বর্ধমান,পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলীতে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট পাঁচটি আঞ্চলিক খাদ্য পরীক্ষাগার তৈরী হচ্ছে। পুজোর পরই এই পাঁচটি আঞ্চলিক পরীক্ষাগার চালু হয়ে যাবে। এছাড়া কলকাতায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম তথা প্রধান বা মুখ্য খাদ্য পরীক্ষাগার তৈরী হয়েছে। তা ডিসেম্বরেই চালু হবে বলে জানিয়েছেন।