বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রায় ১ বছর ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা ৪ বছরের এক শিশুর পেটে অস্ত্রোপচার করে বার হল ২০৩টি কুলের বীজ, দুটি আস্ত খেজুরের বীজ, কিছু সূতো এবং একটি নাটবল্টু। এই ঘটনায় শনিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার সফল এবং শিশুটিও অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ রয়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. উত্পল দাঁ জানিয়েছেন, হুগলীর গোঘাট থানার বদনগঞ্জের শ্যামবাজার এলাকার বাসিন্দা ৪ বছরের জীবন রুইদাসকে প্রায় ১২দিন আগে পেটের যন্ত্রণার উপসর্গ নিয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রায় ১ বছর ধরেই শিশুটি মাঝে মাঝেই পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিল। ডা. দাঁ জানিয়েছেন, ওই শিশুটিকে নিয়ে আসার পর তাকে ভর্তি করার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এক্স-রে রিপোর্টে কিছু একটা থাকলেও ধরা পড়েনি এই বীজের অস্তিত্ব। শনিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারী বিভাগের চিকিত্সক ডা. নরেন্দ্রনাথ মুখার্জ্জী এবং মধূসূদন চ্যাটার্জ্জীর নেতৃত্বে ৮জন চিকিত্সকের একটি টীম ওই শিশুর পেটে অস্ত্রোপচার করেন। ডা. নরেন্দ্রনাথ মুখার্জ্জী জানিয়েছেন, শিশুটির ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদান্ত্রের মাঝের জায়গায় আটকে ছিল এই ২০৩টি কুলের বীজ, ২টি খেজুরের বীজ, কিছু সূতো এবং একটি নাট। তিনি জানিয়েছেন, এই জায়গায় আটকে থাকার জন্যই শিশুর পেটের ডান অংশ কিছু ফোলা এবং শক্ত অবস্থায় ছিল। সেজন্যই তার যন্ত্রণা হচ্ছিল। চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম ট্রাইকোবাজোয়ার (Tricoeezoar)। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন এটি একটি সাইকোলজিক্যাল রোগ। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেক শিশুই মাটি খায়, কেউ চুল খায়, কেউবা পেন্সিল খায়। এগুলি সেই ধরণেরই রোগ। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, এদিনের অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাঁরা সফল হয়েছেন। অপারেশন করার পর শিশুটি সুস্থও রয়েছে। শিশুর বাবা অজয় রুইদাস এবং মা কল্পনা রুইদাস জানিয়েছেন, তাঁরা অত্যন্ত গরীব পরিবার। প্রায় এক বছর ধরেই জীবন পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিল। তাকে স্থানীয় চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যাওয়াও হয়েছিল। কিন্তু রোগ না সারায় তিনিই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। এদিনের সফল অপারেশনের পর শিশুটি সুস্থ রয়েছে। চিকিত্সকরা এদিন জানিয়েছেন, অপারেশনে আরও দেরী হলে শিশুর খাদ্যনালীতে সমস্যা দেখা দিত। যা পরবর্তীকালে আরও জটিল আকার নিতে পারত। তাঁরা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের মাঝের জায়গায় আটকে থাকায় এগুলি পায়খানার সঙ্গে বার হওয়ার কোনো পথ পায়নি। তবে আপাতত শিশুটি বিপদমুক্ত বলেই তাঁরা জানিয়েছেন।