E Purba Bardhaman

বর্ধমান ফের শুরু হকার উচ্ছেদ, বাদ সরকারি জায়গায় থাকায় তৃণমূলের ইউনিয়ন অফিস! বিতর্ক তুঙ্গে

The eviction of hawkers has started again in Burdwan.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রথম দফায় দুদিন হকার উচ্ছেদের পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হলেও বৃহস্পতিবার থেকে ফের শুরু হল বর্ধমান পুর এলাকায় হকার উচ্ছেদ। কিন্তু বুলডোজার চালিয়ে হকার উচ্ছেদ করা হলেও ফুটপাত দখল করে থাকা আইএনটিটিইউসি পরিচালিত ইউনিয়ন অফিস ভাঙলো না বর্ধমান পৌরসভা। যদিও প্রশাসনিক কর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিরা এই অভিযানকে ‘হকার উচ্ছেদ’ বলতে নারাজ, তাঁদের কথা মত এটা ‘সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার অভিযান। উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই বর্ধমান পৌরসভার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় ১ আগস্ট বর্ধমান হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে নার্স কোয়ার্টার এবং কৃষ্ণসায়র পার্ক পর্যন্ত রাস্তার দুপাশের হকার তথা সরকারি জায়গা জবরদখল মুক্ত করা হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ীই বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মাঝেই চলল এই উচ্ছেদ অভিযান। যদিও আগাম ঘোষণা থাকায় আগেই হকাররা তাঁদের মালপত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। এদিন বুলডোজার চালিয়ে অস্থায়ী ছাউনি ভেঙে ফেলা হল। এদিনও দোকান ভাঙা পড়ায় পৌরসভার চেয়ারম্যানকে ঘিরেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন হকাররা। পৌরপতির পা ধরে এক শিশুকে দোকান বাঁচানোর আকুল আর্তি করতেও দেখা যায়। এদিন নার্স কোয়ার্টার মোড় এলাকায় থেকে শুরু হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান। বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হয় ফুটপাত দখল করে থাকা একাধিক দোকান। ভেঙে ফেলা হয় বর্ধমান হাসপাতালে সামনে থাকা দোকানগুলিও। কিন্তু ভাঙ্গা হলো না বর্ধমান হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় থাকা দুটি আইএনটিটিইউসির অফিস। যে দুটি অফিসই তৈরি করা হয়েছে সরকারি জায়গা জবরদখল করে। আর এবার এনিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বির্তক। বিজেপির মুখপাত্র ডা. শান্তনু দে জানিয়েছেন, ফুটপাত পরিষ্কার করা যদি পৌরসভার উদ্দেশ্য হত তাহলে সাধারণ মানুষের দোকানের পাশাপাশি তৃণমূলের পার্টি অফিস বা ইউনিয়ন অফিসগুলিও ভাঙ্গা হত। তাদের উদ্দেশ্য ফুটপাত পরিষ্কার নয়, ভোটে পৌরসভা এলাকাগুলিতে তৃণমূল হেরেছে। তাই তাদের উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া। এদিন এই আইএনটিটিইউসির অফিস কেন ভাঙা হল না তার উত্তরে বর্ধমান পৌরসভার পৌরপ্রধান পরেশ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, সবটাই বিবেচনার মধ্যে আছে। এবং ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে হাসপাতালের কাছে শ্যামসায়রের পাড় সৌন্দর্যায়নের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই এটা যখন সংস্কার হবে এর পারে কিছুই থাকবে না। পার্টি বা ইউনিয়ন এইভাবে আমরা বলতে চাইনা। আমরা বলতে চাইছি পুকুর পাড় পরিষ্কার হবে, হাসপাতালের সামনেটা পরিষ্কার হবে। কাজেই কে আছেন কে নেই আমাকে কটা দিন সময় দিন। একদিনে তো সব কাজ শেষ হবে না। যারা কাজ করছেন তাঁরা ক্লান্ত, বৃষ্টি পড়ছে একনাগাড়ে। কাজেই সব বিষয় চিন্তাভাবনা করে পরবর্তী দিনে অনেকটাই পরিষ্কার করে দিতে পারব। অভিযোগটা থাকবে না। অভিযোগ যদি করে থাকেন কোনও বিষয়ে পরবর্তী দিনে তা থাকবে না। তিনি জানিয়েছেন, ভেন্ডিং, নন ভেন্ডি বিষয়গুলি দেখার জন্য যে কমিটি করা হয়েছে তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী চিহ্নিত জায়গাগুলি ধরে কাজ হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোকান মালিকেরা তাঁদের সামগ্রী সরিয়ে নিয়েছেন, দোকান খুলে ফেলেছেন। আমাদের খুব বেশি ভাঙাচোরা করতে হয়নি। যারা এখান থেকে উঠে গেলেন তাঁদের একটা ডেটাবেস তৈরি করছি। বিকল্প জায়গার সন্ধান পেলে তাঁরা যাতে বসে কিছু করতে পারেন সে বিষয়টা আমরা লক্ষ্য রাখব। বিজেপির অভিযোগ, এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার বর্ধমান পৌর কর্তৃপক্ষ কি ধরনের কাজ করছে। উল্লেখ্য, পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৬ আগস্ট জেলখানা মোড় থেকে রাণীগঞ্জ বাজার মোড় পর্যন্ত এই উচ্ছেদ অভিযান চলবে। ৯ আগস্ট সর্বমঙ্গলা মন্দির এলাকায় এই অভিযান হবে। ১৩ আগস্ট টাউনহল থেকে বড়নীলপুর মোড় পর্যন্ত, ২১ আগস্ট বর্ধমান রাজস্কুল সংলগ্ন এলাকা এবং ২৮ আগস্ট বড়নীলপুর মোড় থেকে ঘোড়দৌড় চটি পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। যদিও এই অভিযান কর্মসূচিতে নেই খোদ যানজটের মূল শিকার হওয়া এলাকা বিসিরোড থেকে বড়বাজার। যা নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। কেন বারবার বিসিরোড থেকে বড়বাজার এলাকাকে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে তানিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Exit mobile version