E Purba Bardhaman

বর্ধমানে শুরু হকার উচ্ছেদ, ক্ষোভে ফুঁসছেন হকাররা

The eviction of hawkers has started in Burdwan, the hawkers are fuming with anger

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর রাজ্যের অন্যান্য এলাকার পর এবার বর্ধমান শহরেও হকার উচ্ছেদে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে পথে নামল বর্ধমান পুরসভা। সোমবার পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বর্ধমান পৌরসভার একত্রিত অভিযানে শহরের জেলখানা মোড় থেকে বুড়িবাগান এলাকা পর্যন্ত পে-লোডার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হয় ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে থাকা একাধিক দোকানের অস্থায়ী কাঠামো। এছাড়া ফুটপাত ও রাস্তা জুড়ে দোকান লাগানো একাধিক হকারকে সতর্ক করার পাশাপাশি বেশ কিছু হকারকে সতর্ক করা সত্ত্বেও দোকান লাগানোয় তাঁদের ব্যবসায়িক সামগ্রীও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সোমবার বর্ধমান পুরসভা থেকে শুরু হয় এই অভিযান। পুরসভা থেকে জেলখানা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে রাস্তা দখল করে পসরা নিয়ে বসে থাকা দোকানদার ও হকারদের দ্রুত মালপত্র সরিয়ে নেবার জন্য সতর্ক করা হয়। এরপর জেলখানা মোড় পৌঁছাতেই সতর্কবাণী থেকে সরাসরি উচ্ছেদ শুরু হয়। নিয়ে আসা হয় পে-লোডার, পুরসভার ট্রলি লাগানো ট্রাক্টর। জেলখানা মোড়ে বর্ধমান আর্কেডের সামনে একের পর এক দোকান ভাঙা হতে থাকে। এরপরেই শুরু হয় হকার তথা অস্থায়ী দোকান ভাঙার কাজ। তড়িঘড়ি দোকান থেকে মালপত্র সরাতে শুরু করেন হকাররা। আচমকাই এই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন হকাররা। এই সময় বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকারকে লক্ষ্য করে “বিজেপির দালাল” স্লোগান দিতে থাকেন হকারদের একাংশ। পুলিশ হকারদের সরিয়ে দেয়। এরপর উচ্ছেদ অভিযান যত এগিয়েছে ততই হকারদের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে। হকাররা জানিয়েছেন, দু-দিন আগেও তাঁদের জানানো হয়েছিল একমাস সময় পাওয়া যাবে। একবার মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু আজই যে ভাঙা হবে তা জানানো হয়নি। জানানো হলে তাঁরা মালপত্র, দোকান সরিয়ে নিতে পারতেন। হকাররা জানিয়েছেন, আচমকা এই ঘটনায় কার্যত তাঁরা পথে বসলেন। অনেকেই এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের ভোট নিয়ে এবার পেটে লাথি মেরেছেন। এর ফল আগামী বিধানসভায় ভুগতেই হবে। একজন মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর দোকানের ওপর ভিত্তি করে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। এই মাসেই বিয়ের দিন ছিল। তাঁরা তৈরি হচ্ছিলেন। তারই মাঝে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত এই ঘটনা। তাঁর স্বামী অসুস্থ। তিনি নিজেও একাধিক রোগে ভুগছেন। এই অবস্থায় এই দোকান ভেঙে দেওয়ায় তিনি কী করবেন বুঝতে পারছেন না। কান্নায় তিনি ভেঙে পড়েন। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রথম দিকে ধীরে চলো নীতি নেয় বর্ধমান পৌরসভা। বিগত কয়েকদিন ধরেই হকারদের উদ্দেশ্যে শহরজুড়ে রাস্তা ও ফুটপাত ছেড়ে দোকান লাগানোর জন্য মাইকিং করা হয়। তারপরই সোমবার একত্রিতভাবে অভিযানে নামে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বর্ধমান পৌরসভা। সাধারণ মানুষ ও পথচলতি মানুষের সুবিধার্থে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে থাকা হকার এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো রকমের আপোষ করা হবে না বলেই জানানো হয় পৌরসভার তরফে। সোমবার বর্ধমান শহরের জেলখানা মোড় ও চৌধুরীবাজার এলাকায় এই অভিযান চলে। উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস, ডিএসপি হেডকোয়ার্টার অতনু ঘোষাল, পুরপতি পরেশ চন্দ্র সরকার, বর্ধমান থানার আইসি দিব্যেন্দু দাস-সহ বর্ধমান পৌরসভার একঝাঁক কাউন্সিলার। বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, আগেই নোটিশ ও মাইকিং করা হয়েছিলো পৌরসভার তরফে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ীই আজকের এই অভিযান। রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সোমবার থেকে ধারাবাহিকভাবে শহরজুড়ে অভিযান চলবে বলে জানান বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, হকারদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি স্তরে আলোচনা চলছে। অন্যদিকে, এদিন পুরপ্রধান পরেশ সরকার জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা দখল করে ব্যবসা হচ্ছে। পুরসভা দৃঢ়ভাবেই এই অসুবিধা দূর করতে চায়। তাই সকলকে আগাম জানানো হয়েছে। সরে যেতে বলা হয়েছে। এরপরই এদিন থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। গোটা শহর জুড়েই এই অভিযান চলবে। অন্যদিকে, এই অভিযানের পর বিকালের দিকে হকারদের একাংশ চার্চের কাছে পার্কাস রোড অবরোধ করে। পুলিশ গিয়ে অবরোধ সরিয়ে দেয়।

Exit mobile version