কিছু অসাধু ব্যক্তির অত্যধিক লোভে শক্তিগড়ের গোটা ল্যাংচা মার্কেটের বদনাম হচ্ছে – মতামত ব্যবসায়ীদের
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গত বৃহস্পতিবারের পর ফের শনিবার বর্ধমানের বিখ্যাত শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলিতে হানা দিয়েছিল স্বাস্থ্যদপ্তর, জেলা পুলিশ, ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর ও লিগ্যাল মেট্রোলজি দপ্তর যৌথভাবে। আর তাতেই যে চিত্র উঠে এসেছিল তা দেখেই শুধুমাত্র বর্ধমান জেলাই নয়, গোটা ভারত এমনকি বিদেশের কাছেও বর্ধমানের ইতিহাস প্রসিদ্ধ সম্মান মাথা হেঁট হয়ে গেল বলে মনে করছেন খোদ বর্ধমানের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ও শনিবার জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক(২) ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী ও ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিইবি) এ এস চ্যাটার্জীর নেতৃত্বে শক্তিগড় এলাকার ১৯নং জাতীয় সড়কের দুপাশের মিষ্টির দোকানে হানা দেন। কারণ, রবিবার ২১ জুলাইয়ের কলকাতার সভাকে ঘিরে যেহেতু প্রচুর মানুষ আসা যাওয়ার পথে দোকানে খাওয়া দাওয়া করেন তাই গোটা বিষয়টি নিয়েই পথে নামে প্রশাসনিক আধিকারিকরা। হানাদারীতে উঠে এসেছে অধিকাংশ দোকানের রান্নাঘর এখনো অস্বাস্থ্যকর, মিষ্টির কড়াই আ-ঢাকা, কারিগরদের কোন স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয় না। নেই সামান্য পরিচ্ছন্নতা বজায়ও। কোথাও বা বিষাক্ত রং মেশানো হচ্ছে মিষ্টিতে। এছাড়াও অনেকগুলি দোকানের গুদামে হানা দিয়ে সাত-দশদিন আগে থেকে ভেজে রাখা, ছত্রাক পড়ে যাওয়া ল্যাংচা মেঝের উপর ডাঁই করে রাখা অবস্থায় দেখতে পায় হানাদারি টিম। প্রাথমিকভাবে এই টিমের অনুমান এই সমস্ত বাসি মিষ্টি যা ২১-শে জুলাই পুনরায় ভেজে, রসে ডুবিয়ে বিক্রী করবার পরিকল্পনা ছিল। পরীক্ষার জন্য কয়েকটি নমুনা রেখে বাকী প্রায় তিন কুইন্ট্যাল এই ধরণের ভাজা ল্যাংচা শনিবার বাজেয়াপ্ত করে তা পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হয়। ৫জন দোকানদারকে আইনী নোটিশ ধরানো হয়েছে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে শক্তিগড় থানায় ডায়েরীও করা হয়। জানা গেছে, সমস্ত অসাধু দোকানদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ মামলা রুজু করা হচ্ছে। তাঁদের প্রত্যেকের দশ লক্ষ টাকা অব্দি জরিমানা ও সাত বছর পর্যন্ত হাজতবাস বা উভয়ই হতে পারে। রবিবার ২১ জুলাই কোলকাতামুখী ও কোলকাতা ফেরৎ ক্রেতাদের স্বার্থে স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারী জারি রয়েছে। ফুড সেফটি অফিসারদের মোতায়েন করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী এদিন জানিয়েছেন, রবিবার ২ জন ফুড সেফটি অফিসার নজরদারী চালাচ্ছেন। তাঁরা দেখছেন কেমন কী বিক্রি হচ্ছে। কিধরনের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। খারাপ জিনিস বিক্রি হচ্ছে কিনা। শনিবার এনফোর্সমেন্ট হয়েছে, রবিবার সেটা হয়নি। রবিবার নজরদারি চলছে। নজরদারি শেষে তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, শক্তিগড়ে গত বৃহস্পতিবার ৩০ জন এবং শনিবার ৫ জনকে নোটিশ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১৫ জনের লাইসেন্স নেই, ১৫ জনের লাইসেন্স থাকলেও শর্ত পূরণ করছে না। এঁদেরকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সব ঠিকঠাক করে নিতে হবে। ১৫ দিন পর আবার এনফোর্সমেন্ট টিম গিয়ে দেখবে। তাপরেও যদি দেখা যায় উন্নতি করেনি, তাহলে আইনাযুয়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শক্তিগড় ল্যাংচা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সেখ নুরুল ইসলামের ছেলে সেখ জাভেদ ইসলাম এই হানাদারী সম্পর্কে জানিয়েছেন, বাজার-ই ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে ব্যবসায়ীদের সংগঠন কী থাকবে! অনেক দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য রাস্তা ঘিরে দিয়েছে। আগামী দিনে আরও দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। কাটিং না থাকলে গাড়ি আসবে না। এখানে ৫০ টা ল্যাংচার দোকান আছে। এরমধ্যে ৫-১০ টা দোকান কিছু ভুল করে থাকলে সেটা নিয়ে যেভাবে প্রচার চলছে তাতে শক্তিগড়ের গোটা ল্যাংচা মার্কেটের বদনাম হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ক্রেতা এসেই নানান ধরনের প্রশ্ন করছেন। সব দোকানকে গুলিয়ে ফেললে হবে না। তিনি জানিয়েছেন, ব্রিগেটের মার্কেট বলতে বোঝায় মূলত দুর্গাপুরমুখী লেনকে, সভা থেকে ফেরার পথে। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। দুর্গাপুরমুখী লেনে অনেকেই বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ল্যাংচা ভেজে রাখে। এখন প্রশাসন এসে হঠাৎ করে এসে হানা দিয়েছে, সেটা ঠিক আছে। ভালো কাজ করেছে। মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার পাক এটা আমরা চাই। তিনি জানিয়েছেন, এখানে ব্যবসায়ীদের ইউনিটি বলে কিছু নেই। সংগঠন করার অবস্থাই নেই। তাই নিজেদের মান নিয়ে নজরদারি করা খুবই সমস্যা। ব্রিগেডের সভার মত কার্যক্রম হলে কিছু ব্যবসায়ী এখানকে ‘মেলা তলার দোকান’ ভাবেন। তাঁদের মনোভাব থাকে লুটিয়ে নিয়ে চলে যাবো। তারপরে সারা বছর আসবো যাবো চা খরচ হলেই হবে। যারা এই ধরনের মাল রাখেন তাঁদের কি আদৌ ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি আছে। ওই ধরণের মান খরিদ্দারকে খাওয়ানো যায়? ওদের জন্য সবার বদনাম হচ্ছে। যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁরা সরাসরি শাস্তি পাক। তাঁদের দোকান সিল করে দেওয়া হোক। যারা এই ধরনের কারবার করছেন ঠিক করছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক, কিন্তু সব ব্যবসায়ীকে একই তালিকায় না ফেলেন এটাই অনুরোধ। এব্যাপারে বর্ধমান সীতাভোগ, মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার কমিটির সহ-সভাপতি সৌমেন দাস জানিয়েছেন, তাঁরা এব্যাপারে বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বর্ধমান ষ্টেশনেও মিষ্টির মান অত্যন্ত খারাপ। প্রশাসন যে ভূমিকা নিয়েছে তা ধারাবাহিকভাবে চলুক। তিনিও জানিয়েছেন, এই ঘটনা বর্ধমানের ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করছে। এটা রোখা দরকার। ব্যবসা হোক সততার সঙ্গে।