E Purba Bardhaman

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতে মামলায় দুই আধিকারিকের সইয়ের নমুনা সংগ্রহ করলেন তদন্তকারী অফিসার

Stock Photo - The University of Burdwan - Administrative Campus - Rajbati Campus - Photo by Sanjoy Karmakar, Purba Bardhaman

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের জমা রাখা টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। অর্থ আত্মসাতে এক অভিযুক্তের আগাম জামিনের মামলার শুনানিতে জেলা ও দায়রা জজের পর্যবেক্ষণের পর ঘটনায় বহু রাঘববোয়ালের জড়িত থাকার বিষয়টি উসকে দিয়েছে। তাতে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ফিনান্স অফিসারের সই সংগ্রহের পুলিসের আবেদন। তদন্তকারী অফিসার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই আধিকারিকের সইয়ের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বর্ধমান সিজেএম আদালতে আবেদন জানান। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন সিজেএম। তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুই আধিকারিকের সইয়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্তকারী অফিসার সেই নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সইয়ের নমুনা ব্যাংক থেকে টাকা তোলার এবং তা অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানোর দেওয়া চিঠির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে বলে জানা গিয়েছে। পুলিস অবশ্য এনিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। থানার এক অফিসার বলেন, তদন্তের বিষয়ে মুখ খোলা সম্ভব নয়।
বর্ধমান শহরের বিসি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা টাকা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তোলার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। ব্যাংক থেকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা তোলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা তোলার এ ধরনের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে দেয়। এরপরই ব্যাংকের তরফে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনাটি সামনে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ করে সেখানে তাদের কত টাকা জমা আছে এবং সাম্প্রতিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চায়। বর্ধমান শহরের স্টেশন রোড এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে জানানো হয়, স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. সুজিত কুমার চৌধুরি এনিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে আরও একটি মামলা রুজু হয়। তদন্তে নেমে পুলিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী শেখ এনামুল হককে গ্রেপ্তার করে। দু’টি মামলাতেই তিনি জামিনে ছাড়া পান। পরে অর্থ আত্মসাতের মামলায় পুলিস সুব্রত দাস নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। নদিয়ার কল্যাণীতে তার আদি বাড়ি। বর্তমানে সে কলকাতার যাদবপুর থানা এলাকায় থাকে। টাকা তোলার চেষ্টার মামলায় নাম জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ভক্ত মণ্ডলের। গ্রেপ্তার এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন করেন তিনি। সেই আবেদনের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, এই দুর্নীতিতে বহু রাঘববোয়াল জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় মাপের অফিসাররা টাকা হাতানোয় জড়িত। সিবিআই অথবা ইডি তদন্ত ছাড়া আসল অপরাধীরা ধরা পড়বে না। পুলিস আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্ত। তবে, নির্দেশে জেলা জজের পর্যবেক্ষণ তদন্তকারী অফিসার যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদাধিকারীদের জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্থায়ী আমানতের শংসাপত্র আধিকারিকদের সেফ কাস্টডিতে থাকে। সেখান থেকে কীভাবে তা ব্যাংকে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জেলা জজ। উপরওয়ালাদের বাঁচাতে নীচুতলার কর্মীদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে কিনা তাও উল্লেখ করা হয়েছে জামিন খারিজের নির্দেশে।

Exit mobile version